শ্রী একটি বিশেষ্য পদ। শ্রী শব্দটি সংস্কৃত জাত শব্দ। ভারত উপমহাদেশীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ করে সনাতন ধর্মে নামের পূর্বে শ্রী ব্যবহার করা হয় । এটি নামের পূর্বে জনাবের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হয়। তিনটি অক্ষরে গঠিত শ্রী একটি শব্দ। এটি সংস্কৃত ভাষার সবচেয়ে ছোট শ্লোক।
হিন্দু ধর্মমতে লক্ষ্মী এবং সরস্বতী দেবীকে শ্রী সম্বোধন করা হয়। এছাড়াও বাংলাতে ঐশ্বর্য, সেীভাগ্য, সৌন্দর্য এবং রূপ লাবণ্যকেও শ্রী বলে। অর্থাৎ নামের আগে শ্রী লেখার অর্থ আপনি উপরোক্ত বিশেষণে ভূষিত। অন্যার্থে আপনি উপরোক্ত অর্থে শ্রীযুক্ত হোন বলে আর্শীবাদ। শ্রদ্ধা, ভক্তি প্রকাশের জন্যও নামের পূর্বে শ্রী যুক্ত করা হয়।
তবে শ্রী লেখা কোনও শাস্ত্রীয় বিধান নয়। ধর্ম চিহ্নও নয়। এটা সামাজিকভাবে হিন্দু সমাজে প্রচলিত হয়েছে । সংস্কৃত থেকে আগত ‘শ্রী’-ই একসময় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে নামের আগে ব্যবহৃত হত। ভাষা যেহেতু বদলায়, তাই ‘শ্রী’-র ব্যবহার এখন বাংলাদেশে নেই বললেই চলে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এখনও প্রচলিত।
অভিধান ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, নামের আগে ব্যবহৃত ‘শ্রী’, মূলত ‘শ্রীযুক্ত, শ্রীযুত, শ্রীল’ এগুলোর সংক্ষিপ্ত রূপ। ‘ebangladictionary’ অনুযায়ী, “শ্রীযুক্ত, শ্রীযুত- বিণ. সৌভাগ্যযুক্ত, মহাশয় (মান্য পুরুষের নামের পূর্বে প্রযুক্ত)। শ্রীল-বিণ. সৌভাগ্যবান, লক্ষ্মীমন্ত (বিশেষত মান্য পুরুষের নামের পূর্বে প্রযুক্ত)। শ্রীমান-বিণ. 1 সুন্দর, কান্তিময়; 2 সৌভাগ্যশালী; 3 লক্ষ্মীমন্ত”। তাই নারীপুরুষ, ধর্ম নির্বিশেষে ব্যক্তিনামের পূর্বে শ্রী ব্যবহারের অর্থ সম্মানীত মানুষকে শ্রদ্ধার সঙ্গে সম্মোধন করা।
সনাতন ধর্মে আমরা আশা করি – সকলেই সৌভাগ্যবান, শোভা, সম্পদশালী হোন। সকলেই সুখী হোন, সকলেই নিরাময় থাকুক। তাই সম্মানসূচক সম্বোধন বিশেষে শ্রী ব্যবহার করা হয়। নিজের নাম স্বাক্ষরের পুর্বে শ্রী লেখা সঙ্গত। কারন ‘শ্রী’ জীবিত ব্যক্তির নামের পুর্বে বসে ।
যে ব্যক্তি নিজেই স্বাক্ষর করবে সে তার জীবদ্দশায় সহি করেছে এটা তার প্রমাণ হবে । সনাতন ধর্মে আমরা আশা করি -সকলেই সৌভাগ্যবান, শোভা, সম্পদশালী হোন । এজন্যই আমাদের প্র্রার্থনা মন্ত্রে আছে-
সর্বে ভবস্ত্ত সুখিনঃ, সর্বে সন্ত্ত নিরাময়াঃ ।
সর্বে ভদ্রাণি পশ্যন্ত্ত, মা কশ্চিদ দুঃখভাগ্ ভবেৎ ।।
– সকলেই সুখী হোক, সকলেই নিরাময় থাকুক । সকলে শুভ দেখুক, কেউ যেন দুঃখ ভোগ না করে ।
এখন দেখে নিই বিভিন্ন ভাষায় শ্রী কিভাবে প্রচলিত হয় সে সম্পর্কে-
দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে শ্রী শব্দের প্রচলন আছে।
ভাষা/লিপি | শ্রী লিখনি |
পূর্বী নাগরী | শ্রী |
বর্মী ভাষা | သီရိ (thiri) |
দেবনাগরী লিপি | श्री |
গুজরাটি ভাষা | શ્રી |
ইন্দোনেশীয় ভাষা | Sri |
জাভানীয় ভাষা | ꦱꦿꦶ (শ্রী যুক্তবর্ণটি হয়তো ঠিকভাবে নাও দেখা যেতে পারে।) |
কন্নড় ভাষা | ಶ್ರೀ |
খ্মের ভাষা | ស្រី (Srey) and សេរី (Serey) |
লাও ভাষা | ສີ (Si) and ສຣີ (Sri) |
মালয় ভাষা | سري (Seri) |
মালয়ালাম ভাষা | ശ്രീ |
ওড়িয়া ভাষা | ଶ୍ରୀ |
পাঞ্জাবি ভাষা | ਸ਼੍ਰੀ |
সিংহলি ভাষা | ශ්රී (Sri or “Shree”) or සිරි (Siri) |
তামিল ভাষা | ஸ்ரீ (Shre or Shree) |
তেলুগু ভাষা | శ్రీ |
থাই ভাষা | ศิริ (Siri) and ศรี (Sri or Si) |
চাম ভাষা | Chế |
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, quora