১৯৪৯-৫০ : এই সময়েই মূলত তুঙ্গে ওঠে বিতর্ক। ১৯৪৯ সালের ২২ ডিসেম্বর মধ্যরাতে বাবরি মসজিদ চত্বরের সেই বিতর্কিত স্থান থেকেই মেলে একটি পুরোনো রামমূর্তি। এমনিতেই দেশভাগ, অন্তর্বর্তী সরকার ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে তুমুল সাম্প্রদায়িকতার ঝড় চলছিল সেই সময়ে। আর তাতে যেন অনুঘটক হয়ে দাঁড়ায় এ ঘটনা। বিভিন্ন স্থানের হিন্দু রামভক্তরা এখানে মন্দির তৈরির দাবি করতে থাকেন। অন্যদিকে মুসলমানরা তার প্রতিবাদে সরব হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে গোটা চত্বরটা সিল করে ডিসপুটেড ল্যান্ড হিসাবে চিহ্নিত করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন।
১৯৫০: এরপরেই ১৯৫০ সালে ১৬ জানুয়ারি মন্দির পক্ষের নেতা গোপাল সিং বিশারদ ফৈজাবাদ কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন। বাবরি মসজিদ সংলগ্ন স্থানটিতে- যেখান থেকে মূর্তিটি উদ্ধার হয়েছে, সেখানে পুজোপাঠের অধিকার চাওয়া হয়। এবং সেই সঙ্গে মূর্তিটি যেখান থেকে পাওয়া গিয়েছে, সেখান থেকে যাতে সরানো না হয়, তার নির্দেশিকা দাবি করেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে সাময়িকভাবে জন্মস্থান থেকে মূর্তি সরানো যাবে না বলে নির্দেশ জারি করে ফৈজাবাদ আদালত। এলাহাবাদ আদালতেও তার পক্ষেই সায় দেওয়া হয়।
এরপর সেই বছরেরই এপ্রিলে উত্তরপ্রদেশের গোবিন্দবল্লভ পন্ট শাসিত কংগ্রেস সরকার আদালতের এই ইঞ্জাকশান তোলার জন্য মামলা করেন। অন্যদিকে ১৯৫০ সালের ডিসেম্বরে বিতর্কিত স্থানে পুজোপাঠ চলতে থাকার অনুমতি চেয়ে মামলা করেন রাম জন্মভূমি মন্দির ট্রাস্টের প্রধান পরমহংস রামচন্দ্র দাস। এই ট্রাস্ট আবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিল। যদিও তিনি নিজেই আবার মামলা তুলে নেন।
১৯৫৯: ওই স্থানের অধিকার চেয়ে মামলা করল নির্মোহী আখড়া।
১৯৬১: একই দাবি জানিয়ে মামলা করল সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড।
১৯৮৬: ফেব্রুয়ারি ১- স্থানীয় আদালত সরকারকে নির্দেশ দেয়, হিন্দু তীর্থযাত্রীদের প্রবেশাধিকার দিতে। সে সময়ে রাজীব গান্ধী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
অযোধ্যা রামজন্মভূমির রামলালা বিরাজমনের নিকট বন্ধু তথা এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি দেবকী নন্দন আগরওয়ালের মাধ্যমে মামলা দায়ের করে।
১৯৯২ : বিতর্কিত জমির ভবনটি এই সালের ৬ ডিসেম্বর ভেঙে ফেলা হয়। শুরু হয় তুমুল বিতর্ক ও অশান্তি। প্রতিবাদ, পাল্টা প্রতিবাদে জ্বলতে থাকে অযোধ্যা। কেন এমনটা ঘটল তার তদারকি করতে বিচারপতি লিবেরহ্যানের অধীনে তৈরী হল বিশেষ কমিটি। রিপোর্ট দিতে বেঁধে দেওয়া হল ৩ মাসের সময়সীমা। এই সময়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে জারি হল রাষ্ট্রপতি শাসন। ভেঙে দেওয়া হয় কল্যাণ সিং শাসিত বিজেপি সরকার।
১৯৯৩ : এই সময়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমারাও অযোধ্যার বিশেষ জমি অধিগ্রহণ অ্যাক্ট পাশ করেন। এর মাধ্যমে বিতর্কিত জমিটি সরকারি সম্পত্তি হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পিটিশন জমা করেন ইসমাইল ফারুকিসহ মসজিদপন্থী নেতৃত্ববৃন্দ।
১৯৯৪: “ইসলাম ধর্ম পালনের জন্য মসজিদ অত্যাবশ্যক নয়। বিশ্বের যে কোনো স্থানে, এমনকি খোলা মাঠেই চাইলে নামাজ পাঠ করা যায়,” রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বলা হয়, “তাই রাষ্ট্রের এই জমি অধিগ্রহণ করা সংবিধানবিরুদ্ধ নয়।” এর ফলে ৬৭.৭ একরের মধ্যে ২.৭৭ একরের বিতর্কিত জমিটুকু অধিগ্রহণ করে সরকার।
২০০২ এপ্রিল: বিতর্কিত স্থলের মালিকানা নিয়ে হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়।
১৩ মার্চ, ২০০৩: সুপ্রিম কোর্ট বলে, অধিগৃহীত জমিতে কোনও রকমের ধর্মীয় কার্যকলাপ চলবে না।
১৪ মার্চ: সুপ্রিম কোর্ট বলে, এলাহাবাদ হাইকোর্টে দেওয়ানি মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য অন্তর্বর্তী আদেশ কার্যকর থাকবে।
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১০: হাইকোর্ট রায় দেয়, বিতর্কিত জমি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখড়া এবং রামলালার মধ্যে সমবণ্টন করে দেয়া হোক। এই রায়ে তিন বিচারপতি সহমত পোষণ করেননি। ২-১ ভিত্তিতে রায়দান হয়।
৯ মে, ২০১১: অযোধ্যা জমি বিতর্কে হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট।
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬: বিতর্কিত স্থানে রাম মন্দির তৈরির অনুমতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী।
২১ মার্চ, ২০১৭: প্রধান বিচারপতি জেএস খেহর যুযুধান পক্ষগুলোকে আদালতের বাইরে সমঝোতার প্রস্তাব দেন।
৭ আগস্ট: এলাহাবাদ হাইকোর্টের ১৯৯৪ সালের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা আবেদনের শুনানির জন্য তিন বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট।
৮ আগস্ট: উত্তর প্রদেশের শিয়া সেন্ট্রাল বোর্ড সুপ্রিম কোর্টে জানায়, বিতর্কিত স্থান থেকে কিছুটা দূরে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় মসজিদ বানানো যেতে পারে।
১১ সেপ্টেম্বর: সুপ্রিম কোর্ট এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নির্দেশ দেয়, বিতর্কিত জমির ব্যাপারে সদর্থক মধ্যস্থতার জন্য দু’জন অতিরিক্ত জেলা বিচারককে ১০ দিনের মধ্যে মনোনয়ন করতে হবে।
২০ নভেম্বর: উত্তর প্রদেশের সিয়া সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড সুপ্রিম কোর্টকে বলে, অযোধ্যায় মন্দির ও লখনউয়ে মসজিদ বানানো যেতে পারে।
১ ডিসেম্বর: এলাহাবাদ হাইকোর্টে ২০১০ সালের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আবেদন করেন ৩২ জন নাগরিক অধিকার রক্ষা কর্মী।
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: সুপ্রিম কোর্টে সমস্ত দেওয়ানি মামলার আবেদনের শুনানি শুরু হয়।
১৪ মার্চ: সুব্রহ্মণ্যম স্বামী-সহ সকল অন্তর্বর্তী আবেদন (যারা এই মামলার পক্ষ হতে চেয়েছিল) নাকচ করে সুপ্রিম কোর্ট।
৬ এপ্রিল: ১৯৯৪ সালের রায়ে যে পর্যবেক্ষণ ছিল তা বৃহত্তর বেঞ্চে পুনর্বিবেচনা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানালেন রাজীব ধাওয়ান।
২০ জুলাই: সুপ্রিম কোর্ট রায়দান স্থগিত রাখে।
২৭ সেপ্টেম্বর: পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে মামলা নিয়ে যেতে অস্বীকার করল সুপ্রিম কোর্ট। জানানো হয়, ২৯ অক্টোবর থেকে মামলার শুনানি হবে নবগঠিত তিন বিচারপতির বেঞ্চে।
২৯ অক্টোবর: সুপ্রিম কোর্ট জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে যথাযথ বেঞ্চে মামলার শুনানি স্থির করল, ওই বেঞ্চই শুনানির দিন ধার্য করবে।
২৪ ডিসেম্বর: সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নিল, এ সম্পর্কিত সমস্ত আবেদনের শুনানি হবে ৪ জানুয়ারি থেকে।
৪ জানুয়ারি, ২০১৯: সুপ্রিম কোর্ট জানায়, তাদের তৈরি করা যথোপযুক্ত বেঞ্চ মামলার শুনানির তারিখ ১০ জানুয়ারি স্থির করবে।
৮ জানুয়ারি: সুপ্রিম কোর্ট পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ঘোষণা করে। শীর্ষে রাখা হয় প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে। এ ছাড়া বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন এস এ বোবদে, এনভি রামানা, ইউইউ ললিত এবং ডিওয়াই চন্দ্রচূড়।
১০ জানুয়ারি: বিচারপতি ইউইউ ললিত নিজেকে মামলা থেকে সরিয়ে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে বলেন, ২৯ জানুয়ারি নতুন বেঞ্চের সামনে মামলার শুনানি শুরু করতে।
২৫ জানুয়ারি: সুপ্রিম কোর্ট পাঁচ সদস্যের নতুন সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করে। নতুন বেঞ্চের সদস্যরা হলেন বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি এসএ বোবদে, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ এবং এস এ নাজির।
২৯ জানুয়ারি: কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে বিতর্কিত অংশ বাদ দিয়ে বাকি ৬৭ একর জমি তাদের আদত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেবার আবেদন জানায়।
২০ ফেব্রুয়ারি: সুপ্রিম কোর্ট জানায়, মামলার শুনানি শুরু হবে ২৬ জানুয়ারি থেকে।
২৬ ফেব্রুয়ারি: সুপ্রিম কোর্ট মধ্যস্থতার কথা বলে, আদালত নিযুক্ত মধ্যস্থতাকারীদের কাজে লাগানো হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য ৫ মার্চ দিন স্থির হয়।
৬ মার্চ: জমি বিতর্ক মধ্যস্থতার মাধ্যমে মীমাংসা করা হবে কিনা সে সম্পর্কিত রায় দান মুলতুবি রাখে সুপ্রিম কোর্ট।
৯ এপ্রিল: নির্মোহী আখড়া কেন্দ্রের জমি ফেরানোর আবেদনের বিরোধিতা করে।
৯ মে: তিন সদস্যের মধ্যস্থতাকারী কমিটি সুপ্রিম কোর্টে তাদের অন্তর্বর্তী রিপোর্ট জমা দেয়।
১৮ জুলাই: সুপ্রিম কোর্ট মধ্যস্থতা চালিয়ে যেতে বলে, ১ অগাস্ট রিপোর্ট জমা দেওয়ার দিন ধার্য হয়।
১ আগস্ট: মধ্যস্থতা সংক্রান্ত রিপোর্ট বন্ধ খামে সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়ে।
৬ আগস্ট: সুপ্রিম কোর্ট জমি মামলায় দৈনিক ভিত্তিতে শুনানির কথা জানায়।
১৬ অক্টোবর: সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শেষ হয়, রায়দান মুলতুবি রাখা হয়।
৯ নভেম্বর ২০১৯: অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম রায় ঘোষণা সকাল সাড়ে দশটায়।
তথ্যসূত্রঃ