আমাদের কৃষ্ণভাবনাময় সমাজে গোবর্ধন পূজার অনুষ্ঠান করা হয়। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নির্দেশ দিয়ে গেছেন যে, শ্রীকৃষ্ণ যেমন আরাধ্য তেমন তাঁর ধাম বৃন্দাবন এবং গোবর্ধন পর্বত ও আরাধ্য। এই উক্তির সত্যতা প্রতিপন্ন করে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে, গোবর্ধন পূজা তাঁকে পূজা করারই মতো।
সেই দিন থেকে এখনো অন্নকুট নামক এই গোবর্ধন পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বৃন্দাবনে এবং বৃন্দবানের বাইরে মন্দিরগুলিতে এই উপলক্ষ্যে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত করা হয় এবং গিরিরাজ গোবর্ধনকে উৎসর্গ করার পর তা জনসাধারণের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
মাঝে মাঝে এই প্রসাদ ছুঁডে দেওয়া হয় এবং উপস্থিত ভক্তরা মাটি থেকে কুডিয়ে সেই প্রসাদ উপভোগ করেন। এর থেকে বোঝা যায় যে, শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদিত প্রসাদ কখনো দুষিত বা কলুষিত হয় না, এমন কি মাটিতে ছুঁডে দিলে ও নয়। তাই মানুষ মাটি থেকে তা কুড়িয়ে নিয়ে গভীর তৃপ্তি সহকারে তা সেবন করেন।
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাই বৃন্দাবনের গোপেদের উপদেশ দিলেন ইন্দ্রযজ্ঞ বন্ধ করে গোর্বধন পূজা শুরু করতে। নন্দ মহারাজের নেতৃত্বে সরলচিত্ত গোপেরা কৃষ্ণের এই প্রস্তাব মেনে নিলেন এবং তাঁরা গিরি গোবর্ধন পূজা করলেন এবং তাঁকে প্রদক্ষিণ করলেন।
গোবর্ধন পূজার সময়ে বৃন্দাবনবাসীরা এখনো খুব সুন্দরভাবে সজ্জিত হয়ে গোবর্ধন পর্বতের সামনে সমবেত হয়ে গিরিরাজের পূজা করেন এবং তারপর গাভীসহ তাঁকে প্রদক্ষিণ করেন। শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশ অনুসারে নন্দ মহারাজ এবং গোপেরা বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণদের নিমন্ত্রণ করে এনেছিলেন এবং বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করে এবং নানা রকমের ভোগ নিবেদন করে গোবর্ধন পূজা করেছিলেন।
সেই পূজার ভোগের উপাচার অন্নের পাহাড়ের রূপ ধারণ করে। অন্নের পাহাড়টি গোবর্দ্ধনকে নিবেদন করা হয়। উপস্থিত সবাই দেখলো এক দিকে সাত বছর বয়সী ছোট কৃষ্ণ দাঁড়িয়ে, অপরদিকে এক বিশাল শ্রীকৃষ্ণ অন্ন ভোজন করছেন। সমস্ত ব্রজবাসীরা তখন সমবেত হয়ে তাদের গাভীদের নানা অলঙ্কারে ভূষিত করে তৃণ দান করেছিলেন। তারপর গাভীদের সামনে রেখে তাঁরা গোবর্ধন পর্বত পরিক্রমা করেছিলেন।
ব্রজগোপিকারা মূল্যবান রত্ন অলঙ্কারে ভূষিতা হয়ে গরুর গাড়িতে বসে শ্রীকৃষ্ণের মহিমা কীর্তন করেছিলেন। সমবেত ব্রাহ্মণেরা গোবর্ধন পূজা করে সমস্ত ব্রজবাসীদের আর্শীর্বাদ করেছিলেন। সমস্ত অনুষ্ঠান যথাযথভাবে সম্পন্ন হলে, শ্রীকৃষ্ণ এক বিরাট দিব্য রূপ ধারণ করে বৃন্দাবনের অধিবাসীদের কাছে ঘোষণা করলেন যে, তিনিই হচ্ছেন গোবর্ধন পর্বত, যাতে তাঁর ভক্তদের চিত্তে কোন সংশয় না থাকে যে, গোবর্ধন পর্বত এবং তিনি অভিন্ন। তারপর কৃষ্ণ সমস্ত নৈবেদ্য ভোজন করতে লাগলেন।
কৃষ্ণ ও গোবর্ধন পর্বতের অভিজ্ঞতা ভক্তরা শ্রদ্ধা সহকারে এখনো মেনে আসছেন। আজো কৃষ্ণভক্তরা গোবর্ধন শিলাকে অভিন্ন কৃষ্ণজ্ঞানে মন্দিরে পূজা করে আসছেন। ভক্তরা তাই গোবর্ধন পর্বত থেকে ক্ষুদ্র শিলা নিয়ে এসে তাঁদের গৃহে পূজা করেন, কেননা এই পূজা শ্রীকৃষ্ণের শ্রীবিগ্রহের পূজারই মতো।
যে রূপ পরিগ্রহ করে শ্রীকৃষ্ণ নৈবেদ্য ভোজন করছিলেন, সেই রূপ ছিল ভিন্ন, এবং কৃষ্ণ নিজে অন্য সমস্ত ব্রজবাসীদের সংগে সেই বিগ্রহকে এবং গোবর্ধন পর্বতকে প্রণাম করতে লাগলেন। তাঁর সেই বিরাট রূপকে এবং গোবর্ধন পর্বতকে প্রণাম জানিয়ে কৃষ্ণ ঘোষণা করলেন, “দেখ, গোবর্ধন পর্বত কেমন এই বিরাট রূপ ধারণ করেছেন এবং সমস্ত নৈবেদ্য গ্রহণ করে আমাদের কৃপা করছেন” সেই সভায় কৃষ্ণ আরো ঘোষণা করলেন, “যে এই গোবর্ধন পূজার অবহেলা করবে, যা আমি নিজে অনুষ্ঠান করছি, সে কখনো সুখী হবে না।
এই গোবর্ধন পর্বতে অনেক বিষধর সর্প আছে এবং যারা এই গোবর্ধন পূজার অবহেলা করবে তারা সেই সর্প দংশনে প্রাণত্যাগ করবে। তাদের গাভী এবং তাদের নিজেদের সৌভাগ্যের জন্য গোবর্ধন পর্বতের সন্নিকটস্থ সমস্ত বৃন্দাবনবাসীরা যেন অবশ্যই এই গোবর্ধন পূজা করে, যা আমি প্রচলন করলাম।
সোর্সঃ ইন্টারনেটের বিভিন্ন সূত্র হতে সংগ্রহিত