দৈত্যরাজ উত্তর দিলেন – ” এতে আর লজ্জা বা দুঃখ কি আছে? তোমাদের হত্তাকর্ত্তা বিধাতা বিষ্ণু মৎস , কূর্ম্ম , বরাহ ইত্যাদির রূপ ধরেছিলেন প্রয়োজনসিদ্ধির জন্য । তুমি নিজেও ব্রহ্মহত্যা করে মানস – সরোবরে পদ্মপাতার তলায় আশ্রয় নিয়েছিলে । আজ আমার দুর্দ্দিন – তাই আমাকে ধিক্কার দিচ্ছ । ইন্দ্র , আমার এদিন থাকবে না । চাকা উলটে যাচ্ছে । ইহলোকের ঐশ্বর্য্য , ধনসম্পদ আজ আছে , কাল নেই ।
তা নিয়ে গর্ব্ব করছ , কর । দু’দিন পরে তোমার দশাও এমনি হবে । ” দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য্য বালিকে নানাস্থানে খুঁজতে লাগলেন। হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করলেন । তিনি বালিকে বিশ্বজিৎ যজ্ঞে অভিষিক্ত করলেন । সেই যজ্ঞের অগ্নিতে আহুতি দেওয়ামাত্রই ইন্দ্রের রথের মত একটি রথ , ইন্দ্রের অশ্বের মত অশ্ব , সিংহচিহ্নিত ধ্বজা , স্বর্ণময় ধনু , দিব্য কবচ ও দুইটি অক্ষয় বাণে পূর্ণ তূণ উত্থিত হইল । শুক্রাচার্য্য একটি বিজয়শঙ্খ দান করলেন ।
নবরূপে সজ্জিত হয়ে বালি দৈত্যসেনা নিয়ে প্রথমে পৃথিবীর রাজ্য অধিকার করলেন ও তারপর স্বর্গরাজ্য – জয়ের জন্য যাত্রা করলেন । দেবগণ ভীত হয়ে দেবগুরু বৃহস্পতির শরণ নিল। বৃহস্পতি বললেন – ” তোমরা যুদ্ধ করতে যেও না । তোমরা এখন দুর্ব্বল । শুক্রাচার্য্য সঞ্জীবনী বিদ্যার দ্বারা দৈত্যদের বাঁচিয়ে দেবে । তা ছাড়া, দুর্ব্বাসার অভিশাপ তোমাদের উপর চলছে ।
তোমরা সব স্বর্গ হতে সরে পড় । মর্ত্তলোকে গিয়ে মানুষ ও জীবজন্তুর মধ্যে লুকিয়ে থাক ।” বালি বিনাযুদ্ধে স্বর্গরাজ্য অধিকার করে নিলেন । এভাবে অসুর বালি নিজেকে শক্তিশালী করে স্বর্গ, মর্ত্য আর পাতালের অধীশ্বর বানিয়ে নিয়েছিলেন | সঙ্গে সঙ্গে হয়ে উঠেছিলেন খুব অহংকারী , তবে তিনি খুব দানবীর ও ছিলেন |
তিন লোকের সম্রাট হলেন বালী | তাঁর গুরু ছিলেন স্বয়ং শুক্রাচার্য | তাঁর পরামর্শে রাজা বলীর খ্যাতি দশ দিকে বিকশিত হল | শুক্রাচার্য্য বালিকে স্থায়ীভাবে রাজত্ব দেয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করলেন। তখন দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য্য বালিকে আদেশ দিলেন একশত অশ্বমেধ যজ্ঞ আরম্ভ করার জন্য। দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য্যের উপদেশে বালি একশত বার অশ্বমেধ যজ্ঞ করলেন ।
দেবগুরু বৃহস্পতি দেবতাদের উপদেশ দিলেন – ” দেখ , সমুদ্রমন্থন করে অমৃত উদ্ধার করতে না পারলে আর দৈত্যদের তাড়ানো যাবে না । অমৃত পেলে তোমরা অমর হয়ে যাবে । শুক্রাচার্য্যের সঞ্জীবনী বিদ্যা তখন বেশি অনিষ্ট করতে পারবে না । সমুদ্রমন্থন খুব দুরূহ কাজ । তোমরা একা পারবে না – দৈত্য ও দেবতা দুই দলে মিলে মন্থন করতে হবে । বালির কাছে গিয়ে প্রস্তাব করো ।
ওদের সাহায্যে সমুদ্রমন্থন ক’রে অমৃত উঠলে ফাঁকি দিয়ে তোমরা অমৃতভাণ্ডটা অধিকার করে নিতে পারবে । বিষ্ণুর সঙ্গে পরামর্শ কর । ” দেবগণ বালির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমুদ্রমন্থনের প্রস্তাব করলেন। বালি সম্মত হলেন । দেবতারা দৈত্যদের সঙ্গে যোগ দিয়া সমুদ্রমন্থন করে অমৃত অধিকার করলেন । তাহাতে দেবাসুরে সংগ্রাম ঘোরতর হয়ে উঠিল । দেবতারা কিছুতেই স্বর্গরাজ্য হতে দৈত্যদের আড়াতে পারলেন না।
সোর্সঃ সংগৃহিত