মাঝে মাত্র আর কয়েকদিন। তার পরই দুর্গাপুজো। ঢাকে কাঠি পড়ল বলে। স্বাভাবিক ভাবেই এখন পুজোর তোরজোড় চরমে।দুর্গা পূজার আগে প্রতি বছরই বাঙালির একটা প্রশ্ন থাকে। এবছর মা আসছেন কোন বাহনে? যাচ্ছেনই বা কোন বাহনে চেপে। ২০২০ থেকে সারা বিশ্বের মতোই বাঙালিও করোনার প্রকোপে ত্রস্ত। অনেকেই হারিয়েছেন বহু প্রিয়জন। তাই এই জরাজীর্ণ মর্ত্তে মায়ের আগমন কীভাবে হবে তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে বাঙালির। দেবী দুর্গার আগমন ও গমন কোন বাহনে হচ্ছে, পঞ্জিকা মতে তার উপরে অনেকটাই নির্ভর করে কেমন কাটবে আগামীর দিনগুলি।নিঁখুত গণনার উপর ভিত্তি করে দেবী দুর্গার আগমন ও গমনের বাহন নির্ধারণ করা হয়। কোনও কোনও বাহনে এলে বা গমন করলে তাকে শুভ মনে করা হয়, আবার কোনও কোনও বাহনের ক্ষেত্রে তা অশুভ প্রভাব বিস্তার করে যায়।
সিংহবাহিনী দেবী দুর্গা সাধারণত গজ, ঘোটক, নৌকা এবং দোলা এই চার প্রকার বাহনেই আগমন এবং গমন করেন। দেবীর আগমন এবং গমন নির্ভরশীল প্রকৃতির উপর বা অন্য ভাবে বলা যায় আগমন বা গমনের উপর প্রকৃতির পরিবর্তন নির্ভর করে।
কোন বাহনের কী তাৎপর্য–
দোলা– দোলা অর্থাৎ পালকিতে আগমন বা গমনের ফল– দোলায়াং মকরং ভবেৎ – অর্থাৎ মহামারি বা মরকতুল্য বিষয়ে ভোগার আশঙ্কা।
ঘোটক অর্থাৎ ঘোড়া। ঘোড়ায় আগমন বা গমনের ফল– ছত্রভংস্তুরঙ্গমে অর্থাৎ ছত্রভঙ্গ, ধ্বংস বা ছন্নছাড়া বা ধ্বংসাত্মক লীলার আশঙ্কা।
নৌকা – নৌকায় আসার অর্থ বন্যা বা জলমগ্ন সম্পর্কিত বিষয়। তবে নৌকায় আগমন বা গমনের ফলস্বরূপ এ–ও বোঝানো হয় শষ্যপূর্ণ বসুন্ধরা। কারণ বন্যা বা জলমগ্ন হলে পলিপূর্ণ ভূমিতে ফসলের ফলন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে।
গজ অর্থাৎ হস্তী বা হাতি। হস্তী বা হাতি দ্বারা সমৃদ্ধি বা শুভ নির্দেশ করে। ফল– গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা।
কোন বারে কোন বাহন–
সপ্তমী ও দশমী তিথি সোমবার বা মঙ্গলবার হলে দেবী দুর্গার আগমন বা গমন হয় গজে।মঙ্গলবার বা শনিবার ঘটকে আগমন বা গমন হয়।বুধবার দেবী দুর্গার আগমন ও গমন হয় নৌকায়।আবার বৃহস্পতি বা শুক্রবার দোলায় আগমন বা গমন হয়।
এবার কোন বাহনে আসছেন–
পঞ্জিকা বলছে, মা দুর্গা কী ভাবে আসবেন তা ইঙ্গিত দেয় আগামী দিনগুলি শস্যশ্যামলা থাকবে নাকি জরা সমস্যা এগুলি লেগেই থাকবে। ২০২১–এ অক্টোবর মাসে পুজো। পঞ্জিকা অনুযায়ী, দেবী দুর্গা এবার আসছেন ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায়। ঘোড়া এমন একটি বাহন যা যুদ্ধের সময়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ঘোড়ার পায়ের শব্দও যুদ্ধেরই ইঙ্গিত দেয়। তাই পঞ্জিকা মতেই ঘোটকে আগমন মানেই ছত্রভঙ্গের কথাই বলা হয়। অর্থাৎ এই সময়ে যুদ্ধ, অশান্তি, হানাহানির সম্ভাবনা থাকে।
দোলায় চেপে কৈলাসে ফিরছেন উমা। ঘোড়ায় আগমনের মতো দোলায় দেবী দুর্গার গমনও অশুভ প্রভাব বিস্তার করবে।দোলায় গমনের ফলাফল হল মড়ক লাগা। এমনিতেই সারা বিশ্ব করোনার জেরে বিধ্বস্ত। দ্বিতীয় ঢেউতেও বহু মানুষ চলে গিয়েছেন। এবং এখনও পর্যন্ত জানা যাচ্ছে, অক্টোবরেই তৃতীয় ঢেউয়ের গ্রাফ সবচেয়ে উঁচুতে থাকবে। তাই দেবী দুর্গার গমনও খুব একটা সুখকর নয়। তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে মানুষের মধ্যে। উল্লেখ্য, গত বছর দেবী দুর্গার আগমন হয়েছিল দোলায় এবং গমন হয়েছিল গজে।
আবার শাস্ত্রমতে এ–ও বলা হয় যে, কোনও বছর যদি দেবী দুর্গার আগমন ও গমনের বাহন একই থাকে, তা হলেও তা অশুভ প্রভাব বিস্তার করে।
তথ্যসূত্রঃ আনন্দবাজার