আজ বছরের প্রথম বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ ও গ্রহণের সময়, স্থান ও বিস্তারিত

কমবেশি আমাদের অনেকের কাছেই ২০২১ সাল এখন পর্যন্ত অনেক টা ‘বিষ’ এর মত বিষাক্ত মনে হচ্ছে। মহামারী করোনা ভাইরাস এর আতংক যেমন চতুর্দিক থেকে গ্রাস করে খাচ্ছে , তেমনি তার সাথে খাদ্য- শস্যের বিনাশকারী পঙ্গপাল এর আক্রমন যেন মড়ার উপরে খড়ার ঘাঁ হয়ে এসেছে এই বছর আমাদের জীবনে।

সারা পৃথিবীর মানুষ আজ এই মহামারী ভাইরাসের কারনে অনেকটাই অস্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। লকডাউনের কারনে অনেকটা গৃহবন্দী সময় পার করছে মানব জাতি। তবে প্রকৃ্তি যে তার আপনরুপ ফিরে পেয়েছে তা নিয়ে কারো কোন সন্দেহ আছে বলে মনে হয় না।

বছরের পর বছরের এই প্রকৃ্তির উপরে চালিয়ে যাওয়া অত্যাচার বোধহয় ঠিক এভাবেই ফিরিয়ে দিচ্ছে প্রকৃ্তি তার নিজের হাতে। ঠিক তেমনি এই মহাজগৎ এর প্রত্যেকটা গ্রহ নক্ষত্র ও তার আপন মনে তার কাজ ঠিক ই করে চলছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে আমাদের এই মহাবিশ্বে।

এইত সেদিন মে মাসের ২৬ তারিখে দেখা গেলো পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। এই পৃথিবীতে কি ঘটছে বা না ঘটছে সেই দিকে ভ্রূক্ষেপ করার কোন প্রয়োজন নেই মহাশূন্যের বাসিন্দা তথা গ্রহ , নক্ষত্র, নীহারিকা, ছায়াপথ, উল্কাপিণ্ড বা গ্যালাক্সি ইত্যাদি কারোর ই। কালের বিবর্তনে তারা চলছে তাদের আপন গতিতে। ঠিক সেই নিয়মেই  এবার ঘটতে চলছে সূর্যগ্রহণ।  ১০ ই জুন ২০২১ দেখা যাবে এই সূর্যগ্রহণ।

বলয় ও পূর্ণগ্রাস

চলুন দেখি কোথায় কখন দেখা যাবে এই গ্রহণ

ভারতে যখন দেখা যাবেঃ

ভারতীয় সময় দুপুর ১ টা ৪২ মিনিটে গ্রহণ স্পর্শ(আরম্ভ)।

বলয়গ্রাস আরম্ভ দিবা ৩ টা ২৫ মিনিট।

গ্রহণ মধ্য অপরাহ্ণ ৪ টা ১২ মিনিট

বলয়গ্রাস সমাপ্তি অপরাহ্ণ ৪ টা ৫৯ মিনিট

গ্রহণ মোক্ষ (সমাপ্তি) সন্ধ্যা ৬ টা ৪০ মিনিট

বাংলাদেশে যখন দেখা যাবেঃ

ভারতীয় সময় দুপুর ২ টা ১৩ মিনিটে গ্রহণ স্পর্শ(আরম্ভ)।

বলয়গ্রাস আরম্ভ দিবা ৩ টা ৫৫ মিনিট।

গ্রহণ মধ্য অপরাহ্ণ ৪ টা ৪২ মিনিট

বলয়গ্রাস সমাপ্তি অপরাহ্ণ ৫ টা ২৯ মিনিট

গ্রহণ মোক্ষ (সমাপ্তি) সন্ধ্যা ৭ টা ১০ মিনিট

বলয়গ্রাসের  সর্বোচ্চ স্থিতি ৩ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড

গ্রহণ স্থিতি ৪ ঘণ্টা ৫৮ মিনিট

 

কোথায় মূলত দেখা যাবে?

বাংলাদেশ ও ভারতে অদৃশ্য এই গ্রহণ উত্তর আমেরিকার উত্তর পূর্বাংশে, ইউরোপ, এশিয়ার উত্তরাংশে এবং আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তরভাগে দৃশ্যমান।

ভারতবর্ষে কি দেখা যাবে? গেলে কোন জায়গায়?

ভারতে সূর্যাস্তের আগে কয়েক মিনিটের জন্য শুধুমাত্র অরুণাচল প্রদেশ ও লাদাখের কিছু জায়গায় এই গ্রহণ দেখা যাবে। কলকাতা থেকে এই গ্রহণ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

বাংলাদেশে এই গ্রহণদর্শন

গ্রহণটি বাংলাদেশ থেকে দেখা যাবে না।

গ্রহণকালে রাশির অবস্থানঃ

গ্রহণ কালে গ্রহের অবস্থান– বুধ, চন্দ্র, রবি, রাহুর অবস্থান বৃষ রাশিতে। বুধ, চন্দ্র, রবির অবস্থান মৃগশিরা নক্ষত্রে। রাহু রোহিণী নক্ষত্রে। শুক্র মিথুন রাশিতে। মঙ্গল কর্কট রাশিতে। কেতু বৃশ্চিক রাশিতে। শনি মকর রাশিতে (বক্র গতি)। বৃহস্পতি কুম্ভ রাশিতে।

গর্ভাবস্থায় সূর্যগ্রহণের প্রভাব

এটা বিশ্বাস করা হয় যে প্রত্যাশিত মহিলাদের সরাসরি গ্রহণের দিকে তাকানো উচিত না। এতে গর্ভাবস্থায় গর্ভপাত হতে পারে বা সন্তান বিকৃতির সঙ্গে জন্ম নিতে পারে।

সূর্যগ্রহণকালে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সতর্কতা

সমস্ত গর্ভবতী মহিলারা এই প্রশ্নটি মনে রাখেন, “গ্রহণ কি গর্ভধারণকে প্রভাবিত করে?” বিজ্ঞান কিছু বিশ্বাসকে ফিরিয়ে আনতে পারে, যদিও কিছুর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কিন্তু এখানে সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কিছু সতর্কতা রয়েছে যা অবলম্বন করতে হয়:

● বাইরে যাবেন না, সরাসরি সূর্যের দিকে তাকাবেন না।
● একটি গ্রহণকালে ঘুমানো এড়িয়ে চলুন। ‘দূর্বা ঘাস’ পেতে চেষ্টা করুন এবং মেঝেতে ছড়িয়ে দিন ও ‘দূর্বা ঘাস’-এ বসুন।
● একটি গ্রহণকালে পিন, ছুরি, বা সূঁচের মত ধারালো বস্তু ব্যবহার করবেন না।
● গ্রহণকালে খাবেন না, পান করবেন না বা রান্না করবেন না।
● গ্রহণের সময় ‘মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র’ বা ‘শান্তনা গোপাল মন্ত্র’ উচ্চারণ করুন।
● গ্রহণ শেষ হওয়ার পরে স্নান করা পরামর্শ দেওয়া হয়।
● আপনার বাড়ির বয়ষ্কদের সঙ্গে সম্মান সহকারে আচরণ করুন এবং স্নানের পর তাদের আশীর্বাদ নিন।

কল্পকথা না সত্য

আমাদের বয়ষ্করা মানেন এমন কিছু বিশ্বাস আছে। চলুন দেখি সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ এবং গর্ভাবস্থায় প্রভাবগুলি কল্পকথা কিনা।

১) ঘরের মধ্যে থাকুন এবং সূর্যের দিকে তাকাবেন না
এটি সত্য যে একটি গর্ভবতী মহিলাকে গ্রহণের সময় বাইরে যাওয়া উচিত না এবং নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য খালি চোখে সূর্যের দিকে দেখবেন না:

● সরাসরি সূর্যের বিকিরণের দিকে তাকানো ক্ষতিকারক।
● গ্রহণের দিকে সরাসরি তাকালে আপনার রেটিনা সূর্যের তীব্র দৃশ্যমান আলোতে থাকা এক্সপোজার প্রভাবিত করতে পারে।
● এটি রেটিনা পুড়ে যাওয়ার কারণ হয় আলো সংবেদনশীল রড এবং শঙ্কু কোষে ক্ষতি করে।
● এটি সাধারণ সত্য। আপনি গর্ভবতী হোন বা না হোন, আপনি সরাসরি একটি গ্রহণের দিকে তাকানো উচিত নয়।

২) একটি গ্রহণের সময় রান্না করা, খাওয়া বা পান করবেন না

এটি একটি প্রমাণিত সত্য। এর পিছনে কারণ হল সূর্যের রশ্মি একটি গ্রহণের সময় আরালে আটকে যায় বলে তাপমাত্রা হ্রাস হয়। তাপমাত্রার হ্রাস এবং সূর্যের রশ্মির অনুপস্থিতির কারণে ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলি ছড়িয়ে পড়তে পারে। অতএব, গ্রহণের সময় রান্না, পান করা বা খাওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।

দাবি পরিত্যাগী

গ্রহণ সম্পর্কিত কুসংস্কার বিশ্বাস করা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা আপনার পছন্দ। আপনি হয়তো আপনার বাবা-মার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার জন্য বা কিছু প্রকৃত গর্ভাবস্থার জটিলতার ক্ষেত্রে দোষ এড়ানোর জন্য তাদের অনুসরণ করতে চাইতে পারেন। গ্রহণ একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ আপনার গর্ভাবস্থায় কোন প্রভাব ফেলে না। গ্রহণ সম্পর্কিত বিশ্বাস এবং নিয়মনীতি অনুসরণ করা ব্যক্তিগত পছন্দ। আপনাকে যা করতে হবে তা হল শিথিল থাকা এবং ঘটনাটি শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা।

সূর্যগ্রহণের সময় কী করবেন, কী করবেন না জেনে নিন
১. খালি চোখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য সূর্য গ্রহণ দেখলেও তা রেটিনার উপর প্রভাব ফেলে। যার কারণে একটা চোখে দৃষ্টিশক্তিও হারাতে পারে মানুষ। তাই খালি চোখে এই গ্রহণ দেখতে না করেছে নাসা।
২. পেরিস্কোপে, টেলিস্কোপ, সানগ্লাস বা দূরবীন, কোনও কিছুর সাহায্যে গ্রহণ দেখার সময় সূর্যের দিকে সরাসরি তাকাতে বারণ করা হয়েছে। গ্রহণের সময় সূর্য রশ্মি অত্যন্ত সংবেদনশীল থাকে যা চোখে প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. সানগ্লাস বা ঘষা কাঁচ দিয়েও এই গ্রহণ দেখতে বারণ করেছে নাসা। কারণ এইগুলো নিরাপদ না।
৪. বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বিশেষ গ্রহণ গ্লাস বা সোলার ফিল্টার দিয়েই এই গ্রহণ দেখা উচিত।
৫. বাজারে আইএসও স্বীকৃত বিশেষ সোলার গ্লাস দিয়ে একমাত্র এই গ্রহণ দেখা নিরাপদ।
৬. সে সব গ্লাস ব্যবহারের আগে অবশ্যই ব্যবহার নির্দেশিকা (instructions) পরে নিতে উপদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কোনোভাবে সেই গ্লাস ভাঙা বা দাগ থাকলে ব্যবহার করতে না করেছে তাঁরা।
৭. সূর্যগ্রহণ চলাকালীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র, খাবার খেতে বারণ করেছে। একমাত্র বৃদ্ধ, অসুস্থ ও গর্ভবতী মহিলারা হালকা খাবার নিতে পারবেন বলে বলা আছে। যদিও আধুনিক বিজ্ঞান এই দাবিকে মান্যতা দেয়নি।
৮. প্রাচীন ভারতীয় গাঁথা বলে, রাহুর গ্রাসে সূর্য। তাই গ্রহণ হয়। যা জন-জীবনে প্রভাব ফেলে। রোগ-ব্যাধি ছড়ায়। সে কারণে আগেকার দিনে ভারতীয়রা রান্না বন্ধ রেখে বাইরে বেরিয়ে এসে সূর্য প্রণাম করতেন কিংবা স্নান করে শুদ্ধ হতেন।কিছু কিছু কুসংস্কার আবার এমন আছে, গর্ভবতী মহিলার গর্ভে থাকা বাচ্চার জন্য সূর্য গ্রহণ অত্যন্ত বিপদজনক। তাই সে সব মহিলাদের গ্রহণ চলাকালীন ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হতো না।

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.