কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পূজা! পর্ব – ২

অনুমান সেই বছরের সেপ্টেম্বর মাসের পাঁচ কি ছয় তারিখ, উদয়নালার যুদ্ধে ইংরেজবাহিনীর কাছে আবার হেরে মিরকাশিম রোহতাসগড় দুর্গের দিকে পালালে কিছু সপ্তাহের ভিতর ইংরেজবাহিনী মুঙ্গের দুর্গের দখল নেয় এবং কৃষ্ণচন্দ্র ও শিবচন্দ্রকে উদ্ধার করে।

পালানোর আগে অবশ্য মিরকাশিমের আদেশানুসারে জগঠ শেঠ মহাতব রায়, স্বরূপচাঁদ, রাজবল্লভ সেন প্রভৃতি সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের গঙ্গার জলে ডুবিয়ে হত্যা করা হয় (নিখিলনাথ রায়, মুর্শিদাবাদ কাহিনি)। কিন্তু ভাগ্য অত্যাধিক সুপ্রসন্ন থাকায় সে যাত্রায় কৃষ্ণচন্দ্রের প্রাণরক্ষা হয়। ধার্মিক রাজা নিশ্চয়ই এ সবের পিছনে দেবীর অলক্ষ্য হাত দেখতে পান আর সেই কৃতজ্ঞতার বশেই তিনি আয়োজন করে বসেন দেবী জগদ্ধাত্রী আরাধনার।

তবে লোকশ্রুতিতে গল্পটি আর রাজার মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরার সময়কাল কিঞ্চিত আলাদা। সুধীর চক্রবর্তী তাঁর ‘উৎসবে মেলায় ইতিহাসে’ নদিয়ার হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো সেই বিশ্বাসকে ভাষা দিয়েছেন এই ভাবে যে, “যখন কারাগার থেকে মুক্ত হলেন রাজা তখন আশ্বিন মাস। এখানে দুর্গাপূজা। বিজয়াদশমীর বিকালে পৌঁছলেন নদিয়ার রুকুনপুর ঘাটে। শ্রান্ত আশাহত রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ঢলে পড়লেন ঘুমে। তারপরেই সেই স্বপ্ন।

তবে স্বপ্নের সেই দেবীমূর্তি দুর্গা নন, অথচ ত্রিনয়নী চারহাত রক্তাম্বরধারিণী। সাদা নরসিংহে যোদ্ধার মতো বসে আছেন। দুই হাতে শঙ্খচক্র আর দুই হাতে ধনুর্বাণ। স্বপ্নে দেবীর প্রত্যাদেশ হল: সামনের শুল্কা নবমীতে একইদিনে সপ্তমী-অষ্টমী-নবমীপূজা করলেই দুর্গাপূজার অনুকল্প হবে। রাজা তাই করলেন। সেই থেকে কৃষ্ণনগরে চালু হল জগদ্ধাত্রীর পূজা।”

কিন্তু কান্তিচন্দ্র রাঢ়ী তাঁর ‘নবদ্বীপ মহিমা’য় স্পষ্টই বলেছেন, কৃষ্ণচন্দ্রের পপৌত্র মহারাজা গিরিশচন্দ্রের (রাজত্বকাল ১৮০২-১৮৪১) পূর্বে আমাদের বঙ্গদেশে জগদ্ধাত্রীপুজার প্রচলন ছিল না। “উক্ত মহারাজের যত্নে তন্ত্র হইতে ওই মূর্তি প্রকাশিত হয়। শান্তিপুরের নিকটবর্তী ব্রহ্মশাসন গ্রামনিবাসী চন্দ্রচূড় ন্যায়পঞ্চানন নামক জনৈক তন্ত্রশাস্ত্র বিশারদ পণ্ডিতকর্তৃক এই মূর্তি আবিষ্কৃত হয়। পরে নবদ্বীপের পণ্ডিতগণের অনুমোদিত হইলে ওই মূর্তির পূজা আরম্ভ হয় ।”

গিরীশচন্দ্র নিজে যেহেতু ছিলেন তন্ত্রচর্চাকারী রাজা আর দেবী জগদ্ধাত্রীর রূপ বিবর্তনে যেহেতু তন্ত্রের প্রভাব স্পষ্ট (জগদ্ধাত্রীর উল্লেখ পাওয়া যায় “মায়াতন্ত্র” ও কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের ‘তন্ত্রসার’, এমনকি বেশ কিছু বৌদ্ধতন্ত্রেও) তাই কান্তিচন্দ্র রাঢ়ীর দাবিকে কিছুতেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এমনও হতে পারে, জগদ্ধাত্রী পুজো সর্বজনীন অর্থে পূর্বপুরুষ কৃষ্ণচন্দ্রের হাতে শুরু হলেও তার জাঁকজমক ও শ্রীবৃদ্ধি হয় রাজা গিরীশের আমলে।

সোর্সঃ উইকিপিডিয়া ও ওয়ানইন্ডিয়া

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.