কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার এসব জানেন কি? পর্ব – ১

কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমা। বাংলা জুড়ে মানুষ মাতবে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনায়। সৌভাগ্য ও ধন সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শ্রী শ্রী কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো সম্পর্কে এই জিনিসগুলো জেনে রাখা দরকার।

এসো মা লক্ষ্মী বোসো ঘরে
আমার এ ঘরে থাকো আলো করে…

ধনের দেবী লক্ষ্মী।
এ প্রার্থনা বাংলার ঘরে ঘরে চিরন্তন। প্রায় প্রতি ঘরে ঘরেই দেবী লক্ষ্মীর পুজো হয়ে থাকে। মহিষাসুরমর্দিনীর আগমনে আনন্দময় হয়ে উঠেছিল ধরনী। জীবনের জ্বালা ভুলে মানুষ মেতেছিল উৎসবের আনন্দে। চিন্ময়ীর বিদায়ের বার্তা ভুলে মানুষ আবার মেতে উঠছে লক্ষ্মী পুজোর উৎসব ও আনন্দে।

মা আসবেন ধরনীতে ধন সম্পদে পূর্ণবান হয়ে। অন্নপূর্ণার আলতা রাঙা পায়ের চিহ্ন আঁকা হবে ঘরে ঘরে। ধন-সম্পদের আশায় হিন্দু নারী ও পুরুষেরা উপবাস ব্রত পালন করেন। ফুল ফল মিষ্টি নৈবেদ্য দিয়ে আরাধনা করবেন লক্ষ্মী মায়ের। দেন পুস্পাঞ্জলী।

সনাতন হিন্দু ধর্মাবলমন্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব এটি। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নগরীর ঘরে ঘরে লক্ষ্মী পুজো উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। ধন সম্পদের দেবী হওয়ায় বিভিন্ন মন্দির ছাড়াও সনাতন ধর্মালম্বীদের ঘরে ঘরে লক্ষ্মী পুজো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে শারদীয় দুর্গোৎসব শেষে চান্দ্র আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অর্থাৎ কোজাগরী পূর্ণিমায় দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতি বৃহস্পতিবার সধবা স্ত্রীগণ লক্ষ্মীর পুজো করে থাকেন।

বাংলায় বারো মাসে তেরো পার্বণে লক্ষ্মী দেবী আসেন বারে বারে । অনেকেই সারা বছর প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীর পুজো করে থাকেন । এছাড়া শস্য সম্পদের দেবী বলে ভাদ্র সংক্রান্তি, পৌষ সংক্রান্তি ও চৈত্র সংক্রান্তিতে এবং আশ্বিন পূর্ণিমা ও দীপাবলীতে লক্ষ্মীর পুজো হয় । লক্ষণীয় বিষয় হল-খারিফ শস্য ও রবি শস্য ঠিক যে সময় গৃহজাত হয় তখনই বাঙালি মেতে ওঠে লক্ষ্মীর আরাধনায় । তবে পুজোর উপচারে পরিবর্তন হয় মাস ভেদে ।

পুজোর মন্ত্র সেই একই-

নমামি সর্বভূতানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে
যা গতিস্ত্বৎপ্রপন্নানাং সা মে ভূয়াৎ ত্বদর্চনাৎ । –

অর্থাৎ ‘হে হরিপ্রিয়ে,তুমি সকল প্রাণীকে বরদান করিয়া থাক, তোমাকে প্রণাম করি । যাহারা তোমার শরণাগত হয়, তাহাদের যে গতি, তোমার পূজার ফলে আমারও যেন সেই গতি হয় ।’

আজকাল গৃহস্থের সুবিধের জন্যই হোক বা পুরোহিতের স্বল্পতার জন্য, লক্ষ্মী পুজো (বারোমেসে পুজো বাদে) হচ্ছে সকাল থেকেই । কিন্তু কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর প্রকৃষ্ট সময় প্রদোষকাল । অর্থাৎ সূর্যাস্ত থেকে দু ঘণ্টা পর্যন্ত যে সময় ।

মনে রাখতে হবে প্রদোষ থেকে নিশীথ অবধি তিথি থাকলেও সেই প্রদোষেই পুজা বিহিত । কিন্তু পূর্বদিনের রাত্রি থেকে পরদিন প্রদোষ পর্যন্ত তিথি থাকলে পরদিন প্রদোষেই পুজো করা বিধেয় ।

আবার পূর্বদিন রাত্রে তিথি (পূর্ণিমা/অমাবস্যা) থাকলেও যদি পরদিন প্রদোষে তিথি না থাকে তাহলে পূর্বদিন প্রদোষেই পুজো করা কর্তব্য। রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ঘরে লক্ষ্মীর আসন বিরাজমান ।

ধন-সম্পদ কে না চায়? সমাজে থাকতে গেলে অর্থের প্রয়োজন সকলেরই। ঈশ্বরী পাটনীর কামনা তাই চিরন্তন-আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে । তাই শুধু বাংলার নয় । ভারতের বিভিন্ন প্রদেশেই লক্ষ্মী পুজোর প্রচলন আছে ।

কিন্তু বাংলার বাইরে দেবী পূজিতা হন গৌণ চান্দ্র কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে অর্থাৎ দীপান্বিতা অমাবস্যার রাত্রে। এই পূজা সাধারণত বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পুজোর পরেই হয়ে থাকে। লক্ষ্মীপূজা কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো নামেও পরিচিত।

কৃতজ্ঞতাঃ oneindia

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.