কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার এসব জানেন কি? পর্ব – ৩

কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোতে দেখা যায় জেলা ভিত্তিক আঞ্চলিক আচার অনুষ্ঠান। এখনও ঘরে ঘরে প্রতি বৃহস্পতিবারে লক্ষ্মীর পাঁচালি পাঠ করে তাঁর আরাধনা করা হয়। উপচারে ফল মিষ্টি ছাড়াও থাকে মোয়া, নাড়ু ইত্যাদি।

লক্ষ্মীর আচার অনুষ্ঠানেও দেখা যায় নানা ধরনের তাৎপর্য। কোনও কোনও পরিবারে পুজোয় মোট ১৪টি পাত্রে উপচার রাখা হয়। কলাপাতায় টাকা, স্বর্ণ মুদ্রা, ধান, পান, কড়ি, হলুদ ও হরিতকী দিয়ে সাজানো হয় পুজো স্থানটিকে।

পুজোর উপকরণ এবং আচার অনুষ্ঠান দেখে অনুমান করা যায় এর নেপথ্যে থাকা কৃষি সমাজের প্রভাব। কিছু কিছু জায়গায় লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে মেলা বসে। কোথাও বা নৌকাবাইচও অনুষ্ঠিত হয়।

এই উৎসবের অন্যদিক হল কোজাগরী পূর্ণিমায় চাঁদ ও পৃথিবী নাকি খুব কাছাকাছি আসে । আর চাঁদের আলোর বিশেষ গুণ হল শরীর ও মনকে পরিপুষ্ট করা (বিজ্ঞান তা স্বীকার নাও করতে পারে) । এ জন্য গুজরাতে ওই রাতে চাঁদের আলোয় ক্ষীর রেখে দেওয়া হয় ।

পরদিন তা খাওয়া হয় । গুজরাতিরা এই পার্বণে গরবা উৎসবও পালন করে । ওড়িশাবাসী মনে করে এই দিনটিতে কুমার কার্তিকের জন্ম । তাই তাদের কাছে এটি কুমার পূর্ণিমাও । মহারাষ্ট্রেও কোজাগরী পূর্ণিমায় ভক্তি সহকারে লক্ষ্মীপুজো করা হয় ।

লক্ষ্মী হিন্দুদের ধনসম্পদ, আধ্যাত্মিক ও পার্থিব উন্নতি, আলো, জ্ঞান, সৌভাগ্য, উর্বরতা, দানশীলতা, সাহস ও সৌন্দয্যের দেবী। বাঙালি হিন্দুদের বিশ্বাসে লক্ষ্মীদেবী দ্বিভূজা। তার বাহন হচ্ছে পেঁচা। অবশ্য বাংলার বাইরে লক্ষ্মীর চতুর্ভূজা কমলে-কামিনী মূর্তিই দেখা যায়।

লক্ষ্মী দেবীর ধ্যান মন্ত্রে বলা হয় ” যাম্য করে পাশ , অক্ষমালা , সৌম্য করে পদ্ম ও অঙ্কুশ ধারিনী পদ্মাসনে উপবিষ্টা , শ্রী অর্থাৎ ঐশ্বর্য সম্পৎ ও সৌন্দর্য রুপিনী , ত্রিলোকের জননী , গৌরবর্ণা , সুন্দরী , সর্বা অলঙ্কার বিভূষিতা , ব্যগ্রহস্তে স্বর্ণ পদ্ম ধারিনী এবং দক্ষিণ হস্তে বরদানকারিনী দেবীকে ধ্যান করি ।

লক্ষ্মী স্ত্রোত্র এ বলা হয় –

লক্ষ্মীঃ শ্রীঃ কমলা বিদ্যা মাতা বিষ্ণুপ্রিয়া সতী ।
পদ্মালয়া পদ্মহস্তা পদ্মাক্ষী পদ্মসুন্দরী ।।
ভূতানামীশ্বরী নিত্যা মতা সত্যাগতা শুভা ।
বিষ্ণুপত্নী মহাদেবী ক্ষীরোদতনয়া ক্ষমা ।।
অনন্তলোকলাভা চ ভূলীলা চ সুখপ্রদা ।
রুক্মিণী চ তথা সীতা মা বৈ বেদবতী শুভা ।।
এতানি পুন্যনামানি প্রাতরুথায় যঃ পঠেৎ ।
মহাশ্রিয়নবাপ্নোতি ধনধান্যকল্মষম্ ।।

শ্রী , কমলা বিদ্যা , মাতা , বিষ্ণুপ্রিয়া , সতী , পদ্মালয়া পদ্মহস্তা পদ্মাক্ষী পদ্মসুন্দরী , ভূতগণের ঈশ্বরী , নিত্যা , সত্যাগতা , শুভা , বিষ্ণুপত্নী , ক্ষীরোদ – তনয়া , ক্ষমা স্বরূপা , অনন্তলোকলাভা , ভূলীলা , সুখপ্রদা , রুক্মিণী , সীতা , বেদবতী – দেবীর এ সকল নাম ।

প্রাতেঃ উত্থান কালে যারা দেবীর এই পুন্য নামাবলী পাঠ করেন তারা বিপুল ঐশ্বর্য পেয়ে ধনী হয়ে থাকেন । অগ্নি পুরাণ মতে শ্রী বা লক্ষ্মী হলেন যজ্ঞবিদ্যা , তিনিই আত্ম্যবিদ্যা , যাবতীয় গুহ্যবিদ্যা ও মহাবিদ্যা ও তিনি ।

যজ্ঞবিদ্যা মহাবিদ্যা গুহ্যবিদ্যা চ শোভনা ।
আত্ম্যবিদ্যা চ দেবি বিমুক্তিফলদায়িনী ।।

দেবী ভাগবত মতে যে স্বর্গে তিনিই স্বর্গ লক্ষ্মী , রাজগৃহে তিনি রাজলক্ষ্মী , গৃহে তিনি গৃহলক্ষ্মী । তিনি শান্তা , দান্তা , সুশীলা , সর্ব মঙ্গলা , ষড়রিপু বর্জিতা । এক কথায় ধন , জ্ঞান , শীল – তিনেরই বিকাশ দেবী লক্ষ্মীর মধ্যে । কমলের মতো তিনি সুন্দরী , কমলাসনে তাঁর নিবাস । কমল বা পদ্ম হল বিকাশ বা অভ্যুদয়ের প্রতীক ।

কৃতজ্ঞতাঃ oneindia

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.