সূর্যগ্রহণ হোক কিংবা চন্দ্রগ্রহণ, যেকোনও গ্রহণ নিয়েই মানুষের মনে আজও নানান ধারণা বা বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। তাই গ্রহণের দিনগুলিতে মা-ঠাকুমাদের কিছু বিশেষ নিয়ম যেমন, খাবার না খাওয়া, বাইরে না বেরোনো, রান্না না করা ইত্যাদি মেনে চলতে হয়। কারণ, অনেকের বিশ্বাস অনুযায়ী গ্রহণের সময়টি খুবই ‘অশুভ’।
২০২০ সালে ইতিমধ্যেই দুটি চন্দ্রগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। তৃতীয় চন্দ্রগ্রহণ হতে চলেছে ৫ জুলাই, রবিবার। বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী, জুলাই মাসে ঝড় বৃষ্টি হওয়ার কারণে, এই মাসের গ্রহণকে ‘Thunder Moon Eclipse’ বলা হয়, পাশাপাশি রবিবারের চন্দ্রগ্রহণ ‘Full Buck Moon’ নামেও পরিচিত।
প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, গ্রহণ আমাদের এবং প্রকৃতির উপর একটি শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। যার ফলে এই সময় বহু লোকেরা খাবার রান্না করা কিংবা খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ অনুসরণ করেন। পৌরাণিক কাহিনী এবং বিশ্বাস অনুযায়ী, চন্দ্রগ্রহণের দিনে খাবারের ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ নিয়ম আমরা উল্লেখ করলাম, যা আপনারা গ্রহণের দিন মেনে চলতে পারেন।
খাবার রান্না করে না রাখাঃ বৈজ্ঞানিক কোনও ব্যাখ্যা নয়, চিরাচরিত বিশ্বাস অনুযায়ী চাঁদ থেকে নির্গত শক্তিশালী রশ্মিগুলি রান্না করে রাখা খাদ্যকে দূষিত করে তোলে। তাই চন্দ্রগ্রহণের আগে বাড়িতে কোনও খাবারই রান্না করে রাখা উচিত নয়। গ্রহণ শেষ হয়ে যাওয়ার পর হালকা কিছু খাবার তৈরি করে খেয়ে নিন।
রান্নার সময় খাবারে তুলসীপাতা যোগ করুনঃ হিন্দু শাস্ত্র মতে, তুলসী পাতা একটি পবিত্র গাছ। তাই অনেকে গ্রহণের খারাপ প্রভাব ও রেডিয়েশন কাটাতে খাবার তৈরীর সময়ে তুলসী পাতা যোগ করেন। যদিও এর পেছনে কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে ডাক্তারদের মত অনুযায়ী, তুলসী পাতাতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে এবং অসুখ দূর করতে সাহায্য করে।
কাঁচা ফল ও শাকসবজি খাওয়া এড়িয়ে চলুনঃ প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, চন্দ্রগ্রহণ চলাকালীন কাঁচা ফল এবং শাকসবজি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। কারণ অনেকের বিশ্বাস, এইসময় চাঁদ থেকে নির্গত রশ্মি খাবারের খাদ্যগুণকে নষ্ট করে দেয়। পাশাপাশি অ্যালকোহল এবং মাংস মাছ জাতীয় খাবার খেতেও বারণ করা হয়।
খাবারে হলুদ যুক্ত করুনঃ আমাদের দেশীয় খাবার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে হলুদ একটি অত্যাবশ্যক ও প্রয়োজনীয় উপাদান। তবে অনেকে এই চন্দ্রগ্রহণের সময় খাবারে হলুদের ব্যবহার বাধ্যতামূলক মনে করেন। গ্রহণের দিন খাবারে হলুদ যুক্ত করার বৈজ্ঞানিক কোনও ভিত্তি না থাকলেও, হলুদ আমাদের শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী একটি উপাদান। কারণ এতে থাকা অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
এই সকল প্রচলিত বিশ্বাস মেনে চলার আগে আপনাকে আপনার স্বাস্থ্যের দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আয়ুর্বেদিক দৃষ্টিকোণ থেকে, গ্রহণের একঘন্টা আগে হালকা এবং সহজে হজম করা যায় এমন খাদ্য খেয়ে নিতে পারেন। মনে রাখবেন, এখানে তালিকাভুক্ত যেকোনও পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।
সোর্সঃ বোল্ডস্কাই