জন্মান্তরবাদ সম্পর্কে যা কিছু অজানা।

 

জন্ম ও মৃত্যু দুটিকে সব সময় পাশাপাশি রাখতে হয়। জন্মিলে মরিতে হবে এটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি মরিলে আবার জন্মিতে হবে এটাও ধ্রুব সত্য আমাদের হিন্দুদের কাছে। আর ঠিক হিন্দুধর্ম বিশ্বাস করে যে জীবের মৃত্যুর পর জীব পুনরায় জন্মগ্রহন করে। হিন্দুধর্মে পুনর্জন্মকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কিন্তু সকলেই মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে বিশ্বাসী। পুনর্জন্মের অর্থ হল- “জীবের মৃত্যুর পর আত্মা পুনরায় নতুন দেহ ধারণ করে”।

আর এখান থেকেই এসেছে জন্মান্তরবাদের ধারণা।

জন্মান্তরবাদ

হিন্দু ধর্ম বিশ্বাস করে, জীবের মৃত্যুর পর আত্মা পুনরায় জীবদেহ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।সে মানুষরুপে হোক অথবা অন্য কোন প্রানী রুপে!

‘জন্মান্তর’ কথাটির মূল অর্থ হল, জীবাত্মা একদেহ পরিত্যাগ করলে কর্মফল ভোগ করার জন্য অন্য দেহ ধারণ করে এ জগতেই পুনরায় জন্মগ্রহণ করে।বেদ, উপনিষদ এবং ভগবৎ গীতায় বলা হয়েছে, জীবাত্মা স্বরূপতঃ ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু জাগতিক বস্তুর প্রতি আসক্তিবশতই আত্মাকে দেহ ধারণ করতে হয়। জীবাত্মার একাধিক জন্মগহণের কারণ হল তার ভোগাকাঙ্ক্ষা। আর এরূপ পুনঃপুনঃ জন্ম গ্রহণকেই বলা হয় জন্মান্তরবাদ।

প্রত্যেকটি জীব তার কর্ম অনুযায়ী ফল পাবে।যতক্ষন পর্যন্ত এই ফল ভোগ করা সম্পন্ন না হয় ততক্ষন পর্যন্ত আত্মার মুক্তি মিলে না।আর তাই বারে বারে জন্মগ্রহণ করতে হয় এই পৃথিবী তে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় অর্জুনকে উদ্দেশ্য করে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য-

“বহুনি মে ব্যতীতানি জন্মনি তব চার্জুন।

তান্যহং বেদ সর্বাণি ন ত্বং বেথু পরন্তপ ।।”

অর্থাৎ হে অর্জুন তোমার আমার বহুবার জন্ম হয়েছে। সে কথা তোমার মনে নেই, সবই আমার মনে আছে। এই বক্তব্যর মধ্য দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ যে অর্জুনের সখা এবং তাঁর রথের সারথি এ সত্য অতিক্রম করে আর একটি পরম সত্য প্রকাশিত হয়েছে, তা হল তিনি সর্বজ্ঞ, পরেমেশ্বর। তিনি শাশ্বত. অব্যয় পরমাত্মার প্রতীক। আবার যখন বলা হয় অর্জুনের বহুবার জন্ম হয়েছে, এ থেকে বোঝা যায় অর্জুনের মধ্যেও পরমাত্মার ন্যায় কোন শাশ্বত বস্তু রয়েছে যা বহু বার জন্ম-মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েও নষ্ট হয়ে যান নি। শাস্ত্রের ভাষায় জীবদেহের ঐ শাশ্বত বস্তুটি হল জীবাত্মা, সংক্ষেপে আত্মা।

আর জন্মান্তরবাদ অনুসারে এই আত্মাই ঘুরে বেড়ায় করে এক দেহ থেকে অন্য দেহে। পদ্মপুরাণ এ বলা আছে কেহ মদ্যপান করলে সে পরের জন্মে শূকর হয়ে জন্মাবে পরে জন্মে, এছাড়াও আরো বিভিন্ন শাস্তির কথা বলা আছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে ইহকালে আমরা যে কর্ম করে থাকি তা পরকালেও ভোগ করতে হয়। এমনকি পরের জন্মেও তার ফল ভোগ করতে হয় আমাদের।

আর এভাবেই জন্মান্তরবাদের মাধ্যমে জীব তার কর্মের ফল ভোগ করে এবং মোক্ষলাভ করে একসময় আশ্রয় পায় ভগবান এর চরণে।

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.