একজন বৈদিক তথা সনাতন হিন্দুধর্মালম্বী ব্যক্তির অন্যতমএকটি বৈশিষ্ঠ্য হল কারো সাথে দেখা হলে কড়জোড়ে তাকে নমস্কার প্রদান করে অভিবাদন বা সম্মান জানানো। প্রথমেই জেনে নেই নমস্কার সম্বন্ধে কিছু তথ্য।
বৈদিক শাস্ত্রে ‘মুদ্রা’ হল হাতের বা দেহের বিশেষ একটি অবস্থান। নাট্যশাস্ত্রে ২৪ প্রকার মুদ্রার বর্ননা করা হয়েছে।দুই হাত জোড় করারএই বিশেষ মুদ্রাটির নামহল ‘অঞ্জলী মুদ্রা’। এটির দুটো ব্যবহার
১) কাউকে দেখলে অভিবাদন জানাতে যখন এটি ব্যবহারকরা হয় তখন একে বলা হয় নমস্কার।
২) বৈদিক সান্ধ্য উপাসনার শেষধাপে যখন ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে এই মুদ্রা করা হয় তখন একে বলে প্রনাম-আসন। মূলত শব্দটি হল ‘নমস্তে’ যার বাংলা রুপ হল নমস্কার।
‘নম’ শব্দেরঅর্থ হল নত হওয়া বা শ্রদ্ধা/সম্মান প্রদর্শন করা যার সাথে ‘তে’ ধাতু যুক্ত হয় যার অর্থ তোমাকে অর্থাৎ নমস্তে অর্থ হল তোমার প্রতি রইল শ্রদ্ধা।
ভারতের বিভিন্ন প্রাচীন মন্দিরে এবং প্রত্নতাত্তিক নিদর্শনে শ্রী কৃষ্ণ, শ্রী রাম চন্দ্র সহ বিভিন্ন ব্যক্তিত্ত্বের নমস্কাররত অবস্থায় খচিত নকশা পাওয়া যায়। আপস্তম্ব ও বৌধায়ন সুত্রেও অভিবাদনের নিয়ম হিসেবে নমস্কার দেবার কথা পাওয়া যায়। পবিত্র বেদে অনেকবারই নমস্তে তথা নমস্কার প্রদানের উল্লেখ পাওয়া যায়।
নমস্তে স্ত্বায়তে নমো অস্তু পরায়তে।
নমস্তে রুদ্র তিষ্ঠতে আসীনাযোততে নমঃ।। (অথর্ববেদ ১১.২.১৫)
অনুবাদ- হে রুদ্রদেব! আপনাকে আসতে, যেতে, বসতে সব স্থিতেতে আপনার প্রতি আমাদের নমস্কার
আরেকটি মন্ত্র কৃষকদের অভিনন্দন জানাতে গিয়ে বলছে-
নমস্তে লাঙ্গলেভ্যো নম বিরুত্ক্ষেত্রিযনাশন্যপা (অথর্ববেদ২.৮.৪)
অর্থাৎ যারা লাঙ্গল ও চাষের মাধ্যমে জমিতে ফসল ফলান তাদের জানাই নমস্কার।
অভিবাদন রুপে নমস্কার প্রদানের উত্কৃষ্ট উদাহরন যজুর্বেদের নিম্নলিখিত মন্ত্রটি –
নমো জ্যেষ্ঠায় চ কনিষ্ঠায় চনমং পূর্বজায় চাপরজায
চনমো মধ্যমায় চাপগল্ভায় চনমো জঘন্যায় চ বুধ্ন্যায় চ।।(যজুর্বেদ১৬.৩২)
অনুবাদ- নমস্কার জ্যেষ্ঠদেরকে,নমস্কার কনিষ্ঠদেরকে,নমস্কার উচ্চবিত্ত,মধ্যবিত্ত,ধনী-গরীব,জ্ঞানী,স্বল্পজ্ঞানী সকলকে।
অর্থাত্ এথেকে আমরা জানতে পারি যে নমস্কার এমন ই এক অনন্য অভিবাদন যাতে ধনী-গরীব, ছোট-বড়, শিক্ষিত – অশিক্ষিত ভেদ নেই। যে কেউইএটা যে কাউকে দিতে পারে।
আমাদের বৈদিক ঋষিগন সকলেই নমস্কার দিয়ে অভিবাদন জানাতেন। শ্রীরাম, শ্রীকৃষ্ণ সকলেই নমস্তে ব্যবহার করতেন অভিবাদন জানাতেন।
২০০২ সালের জুনমাসে প্রকাশিত ইন্ট্যারন্যশনাল ইয়োগা সোসাইটির ম্যগাজিনে বলা হয় যে তারা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে দেখেছেন যে নমস্কার ভঙ্গীতে অর্থাৎ অঞ্জলি মুদ্রায় প্রানায়াম বা ধ্যন করলে তা হাতের মাংসপেশীকে শিথিলকরে এবং এটি মাংসপেশী জনিত ব্যথা নিরাময়ে উপকারী।
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি
সোর্সঃ বাংলাদেশ অগ্নিবীর
বি. দ্রঃ ঈষৎ পরিমার্জিত ও সংক্ষেপিত