যে সব কারণে রথ যাত্রা বন্ধ ছিল সেগুলো দেখে নি
১. মুসলিম কন্যা বিবাহের কারণে কালাপাহাড় সমাজচ্যুত হন। মায়ের অনুরোধে কিছুদিন পর তিনি বাংলার হিন্দু ধর্মগুরুদের কাছে প্রায়শ্চিত্তের বিধান চাইলে তারা কোন বিধান দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তিনি পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরে গিয়ে প্রায়শ্চিত্তের সংকল্প করেন। কিন্তু পুরীর ধর্মগুরুরা তাকে ও তার স্ত্রীকে মন্দিরে প্রবেশ করতে বাধা দেন এবং তার কোন প্রায়শ্চিত্ত হবে না বলে জানিয়ে দেন। এতে কালাপাহাড় মর্মাহত হন এবং প্রচণ্ড ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
তাই উড়িষ্যা অভিযানকালে তিনি উড়িষ্যার ধর্মগুরু ও ধর্মস্থানের উপর প্রতিশোধ নেবার সুযোগ পান। ১৫৬৭-৬৮ খ্রীষ্টাব্দে মুকুন্দ দেবের বিরুদ্ধে সুলাইমান কররাণীর পুত্র বায়েজিদ খান কররাণী ও সেনাপতি সিকান্দার উজবেকের যুদ্ধে মুকুন্দ দেবের পতন হলে কালাপাহাড় উড়িষ্যা ও তার নিকবর্তী অঞ্চলের হিন্দু মন্দিরগুলোতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালান। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করেন এবং মন্দিরের সম্পদ লুণ্ঠন করেন। জানা যায়, কালাপাহাড় জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার কাঠের প্রতিমা উপড়ে নিয়ে হুগলী নদীর তীরে আগুনে পুড়িয়ে দেন। সেই সময় ১৫৬৮ থেকে ১৫৭৭ সাল পর্যন্ত মোট ৯ বছর বন্ধ ছিল রথযাত্রা। সোর্স
২. এরপর ১৬০১ সালে তত্কালীন বাংলার নবাবের কমান্ডার মির্জা খুররাম হামলা চালায় পুরীর মন্দিরে। ৭ম আক্রমণ চালায়। তখন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি রক্ষা করতে মূর্তিগুলিকে পুরী থেকে ১৩-১৪ কিলোমিটার দূরে কপিলেশ্বরের পঞ্চমুখী গোসানি মন্দিরে সরিয়ে নিয়ে যান। সেই বছর রথযাত্রা বন্ধ থাকে।
৩. ১৬০৭ সালে ওডিশার মুঘল সুবেদার কোয়াসিম খান হামলা চালান জগন্নাথ মন্দিরে। মূর্তিগুলিকে বাঁচাকে লুকিয়ে খুড়গার গোপালা জিউ মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই বছরও রথযাত্রা হয় না।
৪. ১৬১১ সালেও বন্ধ থাকে রথযাত্রা। আকবরের সভাষদ টোডর মলের ছেলে কল্যান মল ওডিশার সুবেদার হয়ে এসে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে হামলা চালান। আক্রমণের খবর আগেই পেয়ে মূর্তিগুলি চিলিকা হৃদের মাহিসানসিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
৫. ১৬১৭ সালে আবার জগন্নাথ মন্দিরের হামলা চালায় কল্যান মল। তবে তার আসার আগেই তিনটি মূর্তি চিলিকা হৃদের গুরুবাইগড়ে সরিয়ে ফেলা হয়।
৬. এর পরে ১৬২১ এবং ১৬২২ এই দুই বছর বন্ধ থাকে রথযাত্রা। মুসলিম সুবেদার আহমেদ বেগ মন্দিরে হামলা করায় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি বানাপুরের আন্ধারিয়াগড়ে সরিয়ে ফেলা হয়।
৭. এরপর ১৬৯২ সালে ওডিশার মুঘল কমান্ডার একরাম খান মন্দিরে হামলা করেন। এবারেও হামলার খবর আগে থেকে পেয়ে পুরোহিতরা খুড়দার বিমলা মন্দিরে লুকিয়ে রাখেন। সেখান থেকে মূর্তিগুলি চিলিকা হৃদের কাছে গাডাকোকালা গ্রামে সরিয়ে ফেলা হয়। সেখান থেকে আবার বানাপুরের বড়া হনতুয়াদা গ্রামে সরানো হয় মূর্তিগুলি। মূর্তিগুলিকে পরে ১৬৯৯ সালে আবার পূরীতে নিয়ে আসা হয়। এই কারণে ৮ বছর সেবার রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।
৮. ১৭৩১ সালে ওডিশার ডেপুটি গভর্নর মহম্মদ তাকি খান মন্দিরে হামলা চালান। চিলিকা হৃদের কঙ্কনাশেখারি কুড়ায় সেবার লুকিয়ে রাখা হয় মূর্তিগুলি। সেখান থেকে মূর্তিগুলি নিয়ে যাওয়া হয় খুড়দার হরিশ্বর মণ্ডপে। সেখান থেকে আবার গঞ্জাম জেলার চিকিলি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় মূর্তিগুলি। সেই বছরও অনুষ্ঠিত হয়নি পুরীর রথযাত্রা।
৯. ১৭৩৩ সালে ফের পুরীর মন্দিরে হামলা চালান তাকি খান। সেবারও পুরোহিতেরা প্রথমে হরিশ্বর মণ্ডপ এবং সেখান থেকে গঞ্জমা জেলার মারদা মন্দিরে লুকিয়ে রাখেন মূর্তিগুলি। এর ফলে ১৭৩৩ থেকে ১৭৩৫ সাল পর্যন্ত বন্ধ থাকে পুরীর রথযাত্রা।
এ সংক্রান্ত আরো পোষ্টঃ জগন্নাথদেবের রথযাত্রার এসব ইতিহাস আপনি জানেন কি?-পর্ব ১
মূল সূত্রঃ Orissa Review
বাংলা সূত্রঃ এই সময়