পূর্ণিমা-অমাবস্যা এলেই বাতের ব্যথায় কষ্ট পান? এই খাবারগুলি খেলেই উপকার মিলবে নিশ্চিত।


আমাদের দেশে বাতের ব্যথা একটি কমন বা অতি পরিচিত সমস্যা। দেশের প্রায় সব পরিবারেই বাতের ব্যথায় ভুক্তভোগী রয়েছেন। সাধারণত, আমরা বাতের ব্যথা বলতে যা বুঝি, চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় তারই নাম আর্থ্রাইটিস। এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, আমাদের দেশের প্রায় ২০ কোটি মানুষ আর্থ্রাইটিসের মতো এক বিশেষ সমস্যায় প্রতিনিয়ত ভোগেন। তাই এর থেকে মুক্তি পেতে বা সুস্থ থাকতে ডায়েটে এই বিশেষ খাবারগুলি রাখুন।

অতি পুরাতন ও ঐতিহাসিক কথা মা-ঠাকুমারা এখনো বলেন পূর্ণিমা, অমাবস্যা, একাদশীতে জয়েন্টে বাতের ব্যথা বাড়ে। আবার দুই এক দিন পরে কমে যায়। মূলত হিন্দু পরিবারে এই মতবাদগুলি আজও প্রচলিত আছে। সেদিন অনেকেই ভাত খান না। কেউ কেউ আবার সারাদিন শুকনো খাবার খেয়ে কাটিয়ে দেন। সত্যি হলো পূর্ণিমা- অমাবস্যা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বেড়ে যায়। আবার, তার উপর থাকে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণের টান৷ তাই এই সময় হাঁটু, পা, কোমরের জয়েন্টে ব্যথা অনেকটা বেড়ে যায়।
যদিও অনেকের মতে এসবই নাকি মানসিক রোগ। জয়েন্টের ব্যাথা বাড়ার সাথে বিশেষ কোনো দিনের কোনো যোগসূত্র নাই। হাড়ের দুর্বল অংশে অতিরিক্ত চাপ পড়লে ব্যথা অনুভব হয়। মনোরোগ ডাক্তাররা বলেন, এই রোগগুলির নাম সাইকোসোম্যাটিক ডিজিজ। এটি এক রকমের অনুভূতি। মূলত দুই ধরনের আর্থ্রাইটিসে মানুষ ভোগেন। যেমন, একটি হল বেশি বয়সের অস্টিওআর্থ্রাইটিস। আর অন্যটি হল রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, যাতে যে কেউ যে কোনও বয়সেই আক্রান্ত হতে পারেন।
এই রোগের চিকিৎসায় ডাক্তাররা তেমন একটা ওষুধ দেন না, তার পরিবর্তে একাধিক যোগাসন শিখিয়ে দেন। সাথে বিশেষ কিছু খাবার খেতে হয়। মালিশ কিংবা ফিজিওথেরাপি কিছুটা আরাম দিয়ে থাকে। তবে সঠিক খাবার খেলেও এই রোগ থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়। তাই বাতের ব্যথা কমাতে কোন কোন খাবার রোজ ডায়েটে রাখবেন তা জেনে নেওয়া জরুরী, চলুন ঝটপট জেনে নেই:

তৈলাক্ত মাছ খেতে ভুলবেন না

ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত মাছ খাবেন এতে বাতের ব্যথা অনেকটাই কমে যায়। এক্ষেত্রে রুই, পমফ্রেট, ইলিশ খেতে পারেন। এছাড়াও চিংড়ি বা কাঁকড়া খেতে পারেন। ডাক্তাররা পরামর্শ দেন যে, সপ্তাহে অন্তত চারদিন এই সব খাবার খাওয়া উচিত। বাঙালিদের অবশ্য তাতে কোনও অসুবিধা নেই। কারণ, আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। প্রায় প্রতিটি বাঙালি বাড়িতে প্রায়দিনই মাছ হয়। গবেষণা বলছে, একটানা আট সপ্তাহ নিয়ম করে তৈলাক্ত মাছ খেলে ক্ষতিকারক ইনফ্লেমেশন অনেকটাই কমে যায়। এতে বাতের ব্যথা অনেকটা সেরে যায়।

 

নিয়মিত রসুন খান।

বাতের ব্যথা কমাতে বা উপশম পেতে প্রতিদিন রসুন তেল গরম করে মালিশ করার রীতি রয়েছে। এই ঘরোয়া টোটকা কে সমর্থন জানাই আধুনিক চিকিৎসাও। বাতের ব্যথায় স্বস্তি পেতে রসুন তেল মালিশ করলে হাতেনাতে উপকার পাবেন। সেই সাথে যদি কাঁচা রসুন খেতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই!

 

 

আদা খেলে উপকার মিলবে।

রসুনের মতো আদারও ভেষজ গুণাগুন রয়েছে। সর্দি, কাশি তো বটেই চা, স্যুপ কিংবা শরবতেও আদা মিশিয়ে খেলে অনেকটাই উপকার আরাম পাওয়া যায়। বিশেষ করে হাঁটুর ব্যথা হলে নিয়মিত আদা খাওয়া উচিত। কাঁচা হোক কিংবা রান্না করা যেকোনো উপায়ে আদা খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও গরম চায়ের সাথে আদা সেদ্ধ খেলে কফ ও কাশি দূর হয়ে যায়।

 

ব্রকলি ও আখরোট রোজের ডায়েটে রাখুন।

নিয়মিত ব্রকলি খেলে আর্থারাইটিসের ব্যথা অনেকটা সেরে যাই আরামও পাওয়া যায় বটে। বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে ব্রকোলির উপস্থিতিতে নানা উপকারী উপাদানের গুণে দেহে উপস্থিত বা বাসা বাঁধা নানা ক্ষতিকর টক্সিন সহজে বেরিয়ে যেতে পারে। ফলে শরীর অনেকটা রোগমুক্ত থাকে। সেই সাথে জয়েন্টের ব্যথাও কমে। ব্রকলির পাশাপাশি স্ন্যাক্স হিসেবে খেতে পারেন আখরোট। সেই সঙ্গে জয়েন্টের ব্যথাও কমে। জয়েন্টের ব্যথা কমতে আখরোটও একটি বিশেষ ভূমিকা রাখে।

 

আঙ্গুর খান

আঙ্গুর রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এই ফল শরীরে ইনফ্লেমেটারি কমিয়ে বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তবে ডায়াবিটিসের সমস্যা থাকলে আঙুর খাওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

 

অলিভ অয়েলে রান্না করুন।

বাঙালিরা তো তেল ছাড়া রান্নাই করতে পারেন না। বাঙালি রান্নায় তেল আবশ্যক। সেক্ষেত্রে সর্ষের তেলই অধিক জনপ্রিয়। কিন্তু সর্ষের তেল খেলে অধিক পরিমাণে গ্যাস্ট্রিক ও পেটের সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। তাই সর্ষের তেল পৃথিবীর অনেক দেশেই নিষিদ্ধ। আমরা সর্ষের তেলের পরিবর্তে অলিভ অয়েল খেতে পারি। যদিও এটি ব্যয়বহুল তাতে বাতের ব্যথা কমবে। এটির একটি সুবিধা হল অল্প অলিভ তেলে অনেকটাই রান্না করা যায়। এমনকি ভাজাভুজিও এই তেলে রান্না করা অসম্ভব কিছু নয়।

 

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.