আমরা সকলেই জানি মা লক্ষ্মী বৈকুন্ঠ ধামে শ্রী বিষ্ণুর পাদপদ্মে বাস করেন। আবার কৌতুহল হই যে এই বৈকুন্ঠ ধাম ছাড়া আর কোথায় দেবী লক্ষ্মীর নিবাস? বা তিনি কি খালি বৈকুন্ঠে শ্রী বিষ্ণুর পাদপদ্মে থাকেন ?
যেখানে শীল ও সদাচার থাকে দেবী সেখানেই বাস করেন । ব্রহ্ম বৈবরত পুরানে দেবী নিজ পরিচয় দিয়েছেন –
” যে সকল গৃহে গুরু , ঈশ্বর , পিতামাতা , আত্মীয় , অতিথি , পিতৃলোক রুষ্ট হন , সে সকল গৃহে আমি কদাপি প্রবেশ করি না । আমি সে সকল গৃহে যেতে ঘৃনা বোধ করি , যে সকল ব্যাক্তি স্বভাবতঃ মিথ্যাবাদী , সর্বদা কেবল ‘নাই’ , ‘নাই’ করে , যারা দুর্বলচেতা এবং দুঃশীল ।
যারা সত্য হীন , মিথ্যা সাক্ষ্য দান করে , বিশ্বাসঘাতক , কৃতঘ্ন , যে সকল ব্যাক্তি সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত , ভয়গ্রস্ত , শত্রু গ্রস্ত , ঋণ গ্রস্ত , অতি কৃপণ , দীক্ষা হীন , শোকার্ত , মন্দঘ্নী , স্ত্রী বশীভূত, কুলটার পতি , দুর্বাক , কলহ পরায়ণ , যারা ভগবানের পূজো ও তাঁর নাম গুন কীর্তনে বিমুখ , যারা শয়নের পূর্বে পাদপ্রক্ষালন করে না , নগ্ন হয়ে শয়ন করে , বেশী ঘুমায় , প্রভাতে সন্ধ্যায় দিবসে নিদ্রা যায় , যাদের দন্ত অপরিচ্ছন্ন , বসন মলিন , মস্তক রুক্ষ , হাস্য বিকৃত , তাদের গৃহে আমি কদাপি গমন করি না ।
আমি সে সকল গৃহে বসতি করি , যে সকল গৃহ শ্বেত পারাবত অধুষ্যিত , যেখানে গৃহিণী উজ্জ্বল সুশ্রী , যেখানে কলহ নাই , ধান্য সকল সুবর্ণ সদৃশ , তণ্ডুল রজতোপম এবং অন্ন তুষহীন ।
যে গৃহস্থ পরিজনের মধ্যে ধন ভোগ্য বস্তুর সমান বিভাগ পূর্বক বিতরণ করেন , যিনি মিষ্টভাষী , বৃদ্ধপোসেবী , প্রিয়দর্শন , স্বল্পভাষী , অ দীর্ঘ সূত্রী , ধার্মিক , জিতেন্দ্রিয় , বিদ্যা বিনয়ী , অ গর্বিত , জনানুরাগী , পরপীড়ন বিমুখ , যিনি ধীরে স্নান করেন , চয়িত পুস্প আঘ্রাণ করেন না , সংযত এমন ব্যাক্তি আমার কৃপা পেয়ে থাকেন । ”
শুধু অর্থ নয় , উন্নত চরিত্রও মানুষের অমূল্য সম্পদ । লক্ষ্মী দেবীর কৃপা তাঁরাই লাভ করেন যারা নৈতিক চরিত্রের অধিকারী । লক্ষ্মী র কৃপা সব সময় সৎ কাজেই ব্যাবহার করা উচিত । মানুষ যদি লক্ষ্মী র অপপ্রয়োগ করেন ত অলক্ষ্মীর শাপে সে ধ্বংস হবেই ।
যে শুদ্ধ নৈতিক চরিত্রের অধিকারী তাঁর গৃহে লক্ষ্মী অচলা হয়ে অবস্থান করেন । আর যারা ঠিক এর উল্টো তারা কর্মদোষে অলক্ষ্মীর আহ্বান করে ধ্বংসের পথে অগ্রসর হয় । লক্ষ্মী হল ‘শ্রী’ । সকল নারীর মধ্যে যে শীল ও সদাচার আছে তার মাধ্যমেই তিনি প্রকাশিতা ।
তাই যেখানে নারী দের প্রতি অবমাননা হয় , বা যারা নারী দের ওপর নির্যাতন করেন – সেই সব জায়গায় কখনই দেবী লক্ষ্মীর কৃপা বর্ষণ হয় না ।
কথিত আছে কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন দেবী রাত্রে খোঁজ নেন – কে জেগে আছেন ? যে জেগে অক্ষক্রীড়া করে , লক্ষ্মী তাঁকে ধন সম্পদ দান করেন ।
” নিশীথে বরদা লক্ষ্মীঃ জাগরত্তীতিভাষিণী ।
তস্মৈ বিত্তং প্রযচ্ছামি অক্ষৈঃ ক্রীড়াং করোতি যঃ ।। “
অক্ষক্রীড়া শব্দের সাধারন অর্থ পাশা খেলা । এক শ্রেনীর লোক এই দিন পাশা খেলার মাধ্যমে টাকা পয়সা বাজি রেখে জুয়া খেলায় মেতে ওঠে । আবার কেউ কেউ এই দিন পরের বাগানের ফলমূল চুরি করে গাছপালা তছনছ করে । এই সব অর্থহীন কাজের মাধ্যমে তারা ভাবে যে লক্ষ্মী দেবী তাদের কৃপা করবেন ।
‘অক্ষ’ শব্দটির অনেক রকম মানে হয় । অক্ষ শব্দটির দ্বিতীয় অর্থ – ক্রয় বিক্রয় চিন্তা । যারা বৈশ্য তাঁরা এইদিন দেবীর আরাধনা করে ব্যবসা বাণিজ্যের চিন্তন করেন । দেবীর কৃপা পেলেই ত ব্যবসায় সফলতা আসবে । ‘অক্ষ’ শব্দটির আরেক ভাবে রুদ্রাক্ষ , জপমালা কেউ বোঝায় । যারা ভক্ত মানুষ – তাঁরা এই রাত্রে দেবীর কৃপা পাবার আশায় তাঁর নাম জপ করেন ।
ধন সম্পদ বলতে শুধু কি অর্থ , সোনা দানা ? বৈকুণ্ঠ ধাম , শ্রী বিষ্ণুর পাদপদ্ম পরম ধন । লক্ষ্মী পূজোর রাত্রে দেবী আসেন মর্ত্যলোকের দ্বারে দ্বারে । কিন্তু যে ঘুমিয়ে থাকে তার দ্বার থাকে লক্ষ্মী দেবী চলে যান । কিন্তু যিনি জেগে ভক্তি চিত্তে লক্ষ্মী জনার্দনের উপাসনা , নামস্মরণ করেন – দেবী তাঁকেই কৃপা করেন ।
কৃতজ্ঞতাঃ oneindia