মহা শিবরাত্রির যে পৌরাণিক ব্রতকথা প্রচলিত!

শিবের আশীর্বাদ লাভের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন মহাশিবরাত্রি। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে মহাশিবরাত্রি উৎসব পালন করা হয়। হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য শিবরাত্রি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন।

তবে শুধুমাত্র মেয়েরাই শিবের মতন বলিষ্ঠ ও বুদ্ধিমান স্বামী পাবার উদ্দেশ্যে এই ব্রত পালন করেন তা নয়, ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে শাক্ত, বৈষ্ণব সবার কাছেই শিবরাত্রি এক অতি মাহাত্ম্যপূর্ণ দিন।

ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে শিবরাত্রি ব্রত শুরু করে সারা রাত জেগে প্রহরে-প্রহরে পুজো করতে হয়। মহাশিবরাত্রির আগের দিন একবার হবিষ্যান্ন খেয়ে সংযত জীবন যাপন করার প্রথা রয়েছে। শিবরাত্রির দিন রাত্রি দ্বিপ্রহরে চারটি শিব পুজো করতে হয়। তার পরের দিন ব্রাহ্মন ভোজন করানোর রীতি রয়েছে। মহাশিবরাত্রিতে শিবরাত্রির ব্রতকথা পাঠ করা আবশ্যক।

shiva-puja
শিব পূজা

মহাশিবরাত্রির ব্রতকথা

শিবমহাপুরাণ অনুসারে, বহুকাল আগে বারাণসী তথা কাশীধামে এক নিষ্ঠুর ব্যাধ বাস করত। সে দিনরাত শুধু জীবহত্যা করে বেড়াত। একদিন ব্যাধ শিকার করতে গিয়ে অনেক পশু পাখি শিকার করে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই সে বাড়ির দিকে রওনা হয়। কিন্তু কিছুদূর যেতেই পথে রাত্রি হয়ে যায়। ফলে সে জঙ্গলে পথ হারিয়ে রাতে হিংস্র জন্তুর ভয়ে এক গাছের উপর আশ্রয় নেয় ।

ব্যাধ যে গাছে আশ্রয় নিয়েছিল সেই গাছটি ছিল বেলগাছ। আর সেই গাছের নিচে ছিল একটি শিবলিঙ্গ। ব্যাধ গাছে নড়ে-চড়ে বসার সময় শিশির জলে ভেজা কয়েকটি বেলপাতা খসে পড়ে ঐ শিবলিঙ্গের মাথার উপর। সেদিন ছিল শিবচতুর্দশী অর্থাৎ মহাশিবরাত্রি।

আর ব্যাধও ছিল উপবাসী। তার ফেলা বেলপাতাগুলো শিবলিঙ্গের মাথায় পড়ে এর ফলে তার শিবচতুর্দশী ব্রতের ফল লাভ হয় তার অজান্তেই। পরদিন ব্যাধ সকালে বাড়ি ফিরে আসে। সে রাতে বাড়ি না ফেরায় সবাই তার জন্য ভাবছিল।

ব্যাধ ফিরে আসতে তাকে তার বৌ খেতে দিল। এমন সময় একজন অতিথি বাড়িতে এলো। ব্যাধ কি ভেবে তার নিজের খাবারগুলি অতিথিকে দিল। এতে তার ব্রতের পারণ ফল লাভ হলো।

এর কিছুদিন পরে সেই ব্যাধ মারা গেলে। যমদূতরা তাকে নিতে আসে, এমন সময় সেখানে পৌঁছয় শিবের দূতেরা। কে ব্যাধকে নিয়ে যাবে তাই নিয়ে দুই দলে যুদ্ধ বেধে যায়। যমদূতেরা যুদ্ধে হেরে গেলে শিবদূতরা ব্যাধকে কৈলাসে নিয়ে যায়।

যুদ্ধে হেরে গিয়েও যমদূতেরা তার পিছনে পিছনে সেখানে ধাওয়া করে। কৈলাসের দ্বারে নন্দী পাহারায় ছিল। সে ব্যাধের শিব রাত্রির কথা বললে সব শুনে যমদূতেরা গিয়ে যমকে সব কথা বলে।

যমরাজ শুনে বললেন ‘হ্যাঁ, যে শিব বা বিষ্ণুর ভক্ত কিংবা যে শিবচতুর্দশী ব্রত পালন করে আর যে বারানসী ধামে মরে, তার উপর যমের কোনো অধিকার থাকে না। তার মুক্তিলাভ ঘটে। এইভাবে মর্ত্যলোকে শিবচতুর্দশী ব্রতের প্রচার ঘটে।’

এই সময় এস্ট্রো হতে সংগ্রহিত

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.