লক্ষ্মীদেবী: লক্ষ্মীদেবী বললেন, “এই পরম শ্রব্য, পবিত্র থেকেও পবিত্রতম, দুঃস্বপ্নহর, পুণ্য আখ্যান শ্রোতৃগণের পরম যত্নে শ্রবণীয়। শ্রদ্ধাযুক্ত নর যদি এর শ্লোক বা শ্লোকার্ধ পরিমাণও পাঠ করেন, তৎক্ষণাৎ কোটি কোটি মহাপাতক হতে মুক্ত হয়ে থাকে।
পক্ষীগণের মধ্যে যেমন গরুড়, নদীগণের মধ্যে গঙ্গা এবং তিথিসমূহের মধ্যে দ্বাদশী শ্রেষ্ঠ, তেমনি মাসসমূহের মধ্যে এই পুরুষোত্তম মাসই সর্বোত্তম।”(পদ্মপুরাণ, উত্তরখণ্ড, ৬২/২৬-২৮)
সচ্চিদানন্দশ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর: পরমার্থশাস্ত্র অধিমাসকে পরমার্থকার্যে সর্বোপরি শ্রেষ্ঠ বলিয়া প্রকাশ করেন। জীবন অনিত্য। জীবনের কোনো অংশই বৃথা যাপন করা উচিত নয়। সর্বক্ষণ হরিভজনে থাকাই জীবের কর্তব্য।
সুতরাং প্রত্যেক তৃতীয় বৎসরে যে অধিমাস হয়, তাহাও হরিভজনে উপযোগী হউক- ইহাই পরমার্থ-শাস্ত্রের নিগূঢ় চেষ্টা। আবার কর্মিগণ ঐ মাসকে সমস্ত সকর্মশূন্য বলিয়া নির্ধারিত করিলেন।
পরমার্থ শাস্ত্র বলেন,- হে জীব ! কেন অধিমাসে হরিভজনে আলস্য কর? এই মাস শ্ৰীমদ গোলোকনাথ-কর্তৃক সর্বোপরি স্থাপিত হইয়াছে। এমনকি, ইহা কার্তিক, মাঘ ও বৈশাখাদি মহা-পুণ্যমাস অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ।
এইমাসে বিশেষ ভজন-বিধির সহিত শ্রীরাধাকৃষ্ণের অর্চন কর, সমস্ত লাভ হইবে। পরমার্থী তিন প্রকার- স্বনিষ্ঠ, পরিনিষ্ঠিত ও নিরপেক্ষ। পূর্বোক্ত কাৰ্যসকল স্বনিষ্ঠ পরমার্থীর পক্ষেই বিধেয়।
পরিনিষ্ঠিত ভক্তমণ্ডলী স্বীয় স্বীয় আচার্য নির্দিষ্ট কার্তিক মাস ব্রত পালনের নিয়মানুসারে পুরুষোত্তম ব্রত পালন করিতে অধিকারী। নিরপেক্ষ ভক্তগণ ঐকান্তিক প্রবৃত্তি দ্বারা শ্রীভগবপ্রসাদ সেবন, নিয়মের সহিত অহরহ সাধ্যানুসারে শ্রীহরিনাম শ্রবণ-কীর্তন দ্বারা সমস্ত পবিত্র মাস যাপন করিয়া থাকেন।
ভক্তগণ স্বনিষ্ঠ, পরিনিষ্ঠিত ও একান্তভাব-ভেদে যথাধিকার শ্রীপুরুষোত্তম মাস পালন করতে প্রবৃত্ত হইবেন। ভগবান ব্রজনাথ শ্রীকৃষ্ণ এই মাসের অধিপতি। সুতরাং ‘অধিমাস’ ভক্তমাত্রেরই প্রিয় মাস, যেহেতু ঘটনাক্রমে এই মাসে কোনো কর্মকাণ্ডের পীড়ন আসিয়া ভক্তির ব্যাঘাত করিবে না। (শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের প্রবন্ধাবলী, দ্বিতীয় অধ্যায়- অভিধেয় তত্ত্ব, পুরুষোত্তম-মাস-মাহাত্ম)
কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ: কার্তিক মাসের বিশেষত্ব হচ্ছে এমাসে কৃষ্ণভাবনাবিহীন ব্যক্তিরাও কিছু সেবা করার প্রেরণা পায়। যারা কৃষ্ণভাবনাময় কোনোকিছু করে না, তারা এ মাসে আন্তরিকভাবে সেবা করার অনুপ্রেরণা।
লাভ করে। এ বিষয়ে একটি ভালো উদাহরণ দেওয়া যায়, অনেক। সময় বড় দোকানগুলো ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে মূল্যছাড় দেয়। কিন্তু যারা দোকানের নিয়মিত ক্রেতা, তাদের জন্য এমন ছাড় গুরুত্বপূর্ণ নয়।
কারণ তারা পণ্যটির গুরুত্ব বোঝে, তাই যেকোনো মূল্যে তা ক্রয় করবে। তেমনি যারা ভগবানের শুদ্ধভক্ত তারা কোনোরকম ছাড়ের অপেক্ষা না করেই বছরের ৩৬৫ দিনের ২৪ ঘণ্টাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভগবানের প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত থাকে। (জয়পতাকা স্বামীকে পত্র, জানুয়ারি ৩০, ১৯৬৯) [শ্রীল প্রভুপাদ যদিও কার্তিক মাস প্রসঙ্গে এটি বলেছিলেন, পুরুষোত্তম মাসের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।]
শ্রীল জয়পতাকা স্বামী মহারাজ: বছরের সকল মাসের মধ্যে কার্তিক মাস বা দামোদর মাসে ভক্তিমুলক সেবা অন্যান্য সাধারণ মাসগুলোর চেয়ে একশত গুণ। বেশি ফল প্রদান করে।
কিন্তু পুরুষোত্তম মাস যা কিনা তিন বছরে একবার আসে, তার গুরুত্ব দামোদর মাসের চেয়ে এক হাজার গুণ বেশি। তাই এ মাসটি সকলের কাছে হরিনাম করার, ভগবৎসেবা করার অথবা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রদীপ দেখানোর একটি মহান সুযোগ।
এই প্রকারে তারা তাদের পারমার্থিক সেবা বৃদ্ধি করতে পারে অথবা শুরু করতে পারে। পুরুষোত্তম মাস চলাকালীন সময়ে স্মার্ত মতে কোনো সংস্কারাদি অথবা বিবাহের কোনো অনুমোদন নেই।
স্মার্তরা এই মাসকে পছন্দ করে না কিন্তু এ মাসে পারমার্থিক কার্যাবলীর মাধ্যমে অধিক সুকৃতি আদায় করা যায়। – প্রবচন, জুন ২৮, ২০১৫, বসন্ত কুঞ্জ, দিল্লী।
আমরা জানি যে, দামোদর মাসের চেয়ে পুরুষোত্তম মাসটি’ হাজার গুণ বেশি উপকারী, উপরন্তু এই শ্রীবৃন্দাবন ধামে বসে যেকোনো কিছুই আমরা করি না কেন তা এক হাজার গুণ বেশি ফল প্রদান করে।
সুতরাং তা হলো এক সহস্র গুণের সহস্র গুণ, অর্থাৎ দশ লক্ষ বার। যা ঠিক দশ পয়সা খরচে আমেরিকা যাবার মতো। – প্রবচন, জুলাই ১৩, ২০১৫, বলরাম হল, বৃন্দাবন, উত্তর প্রদেশ।