মা সন্তোষী হিন্দু ধর্মের একজন অন্যতম দেবী।সর্বসিদ্ধিদাতা গনেশ তনয়া শ্রী শ্রী সন্তোষী মাতা পরম কল্যানময়ী। শ্রী শ্রী সন্তোষী মাতা দেবী মহামায়ার অন্য একটি রুপ। ভক্তরা ছুটে আসে শ্রী শ্রী সন্তোষী মায়ের চরণে জীবনের সুখ-শান্তি, ধন, যশ সহ সার্বিক মঙ্গল কামনায় ।সন্তোষী মা হিন্দুধর্ম-এর একজন অশাস্ত্রীয়লৌকিক নবীন দেবী। সন্তোষী মাকে সন্তোষের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বলে অভিহিত করা হয়। বছরে ১৬টা শুক্রবার সন্তোষী মা ব্রত নামক ব্রত পালন করলে দেবী সন্তুষ্ট হন বলে বিশ্বাস করা হয়।লোক মুখে দেবী সন্তোষী মাতার উপাখ্যান প্রচলিত আছে যে,
রাখি পূর্ণিমার দিন দেবী পার্বতীপুত্র গণেশের বোন তাঁর হাতে রাখি বেঁধে দিচ্ছিলেন। তখন গণেশের দুই পুত্র শুভ আর লাভের ইচ্ছা হলো তাদের হাতেও তাদের বোন রাখী বাঁধবেন। অবুঝ সন্তানদের মনোবাসনা পূর্ণ করতেই পিতা গণেশ কন্যা রূপে দেবী সন্তোষীর সৃষ্টি করেছিলেন।তখন শুভ আর লাভ তাঁর হাতে রাখী পরলেন। দাদাদের মনের ইচ্ছে পূর্ণ করলেন বলে তাঁর নাম হল সন্তোষী। এই দেবী পূজিতা হন দুর্গার অবতার রূপেও।ভক্তের মনোকামনা পূর্ণ করে সন্তুষ্টি দেন। তাই তিনি সন্তোষী মাতা । দেবীর হাতে তরবারি, চালের সোনালী পাত্র, ত্রিশূল। দেবীর জন্ম হয়েছিল শুক্রবারের পূর্ণিমা তিথিতে। তাই সন্তোষী মায়ের পুজোর জন্য শুক্রবার দিনটি শ্রেষ্ঠ। ইনি চতুর্ভুজা ও রক্তবস্ত্র পরিহিতা। নিজের চারটি হাতের দুটিতে ত্রিশূল, ও তলোয়ার ধারণ করেন। বাকি দুটি হাতে বরাভয় ও সংহার মুদ্রা ধারণ করেন। এই দেবীর ত্রিশূল পাত, তিনটি গুণ যথা- সত্ত্ব, রজঃ, তম এর প্রতীক, আর তলোয়ারটি জ্ঞানের প্রতীক।মা সন্তোষীর বাহন বৃষ।গো জাতি সত্ত্ব গুনী সাত্ত্বিক গুনের আধার। বৃষর মধ্যে আমরা দুটি গুন দেখতে পাই। বৃষ যখন শান্ত তখন সে চলনে মন্থর , সদা তৃপ্ত, প্রসন্ন । কিন্তু ক্রোধ হলে সে ঠিক উল্টো । শিং, খুঁড় দিয়ে আঘাত এমনকি হত্যা করতে পারে। কিন্তু বৃষকে আমরা সব সময় শান্তভাবে মা সন্তোষীর পদতলে দেখতে পাই। মানুষের মধ্যেও ক্রোধ ও শান্ত- দুই ভাব বিরাজ করে। ক্রোধে মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়, আবার শান্ত ভাবে প্রসন্ন , হাস্যমুখর । কিন্তু যখন ভগবানের কাছে যেতে হবে, তখন প্রসন্ন চিত্তে ,শান্ত অবস্থায় যেতে হবে। ক্রোধ নিয়ে ভগবানের কাছে গেলে কিছুই প্রাপ্তি হবে না । বৃষ আমাদের সেই শিক্ষাই দেয় ।
মা সন্তোষী নামের অপর একটি ব্রতকথা শোনা যায় । সেটি হল বিজু ও মালিনীর উপাখ্যান। মালিনীর ঘটনা এরকম, একদিন বিজু কোন কারনে কাজ করতে শহরে চলে যায় । সেখানে গিয়ে এক নারীর প্রেমে পড়ে বাড়ীর কথা স্ত্রীর কথা ভুলে যায় । অপরদিকে শ্বশুর বাড়ীতে মালিনীর ওপর অত্যাচার বৃদ্ধি হলে, মালিনী ভাবে সে আত্মহত্যা করে মুক্তি পাবে। এই ভেবে মালিনী পাহাড়ের ওপর থেকে খাদে ঝাঁপ দিতে উদ্যত হয়। ঠিক সেই সময় দেবর্ষি নারদ মুনি প্রকট হয়ে বললেন- ‘আত্মহত্যা মহাপাপ। তুমি গৃহে ফিরে ষোলো শুক্রবার সন্তোষী মায়ের ব্রত করো।’ নারদ মুনি মালিনীকে ব্রতের সমস্ত নিয়ম শিখিয়ে দেয় । গৃহে ফিরে মালিনী সন্তোষী মায়ের ১৬ শুক্রবার ব্রত পালন করতে থাকে। অল্প কালের মধ্যেই মা সন্তোষী ভক্তের প্রতি সন্তুষ্ট হন। বিজুর পূর্ব স্মৃতি ফিরে আসে। সে অনেক জিনিস পত্র নিয়ে বাড়ী ফিরে আসে। এরপর মালিনীকে নিয়ে সুখে থাকতে লাগে ।
হিন্দুধর্মগ্রন্থে সন্তোষী মায়ের কোনো আখ্যানের উল্লেখ নেই যদিও দেবী ভাগবতে পার্বতীর জন্ম শুক্রবারে পূর্ণিমা তিথিতে হয়েছিল বলে উল্লেখ আছে। এর সাথে পার্বতী দেবীর সেই স্বরূপকে চতুর্ভূজা হিসাবে গণ্য করা হয় যা হিমালয়কে দেবীগীতের মাধ্যমে সন্তোষ প্রদান করেছিল। বৈষ্ণব আদর্শে ভগবতী যোগমায়াকেই বিভিন্ন দেবীর রূপে ভিন্ন ভিন্ন নামে উপাসনা করা হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।
সন্তোষী প্রণাম মন্ত্র
মন্ত্রঃ ওঁ শ্রী সন্তোষী মহামায়ে গজানন্দম দায়িনী শুক্রবার প্রিয়ে দেবী নারায়ণী নমস্তুতে।
সোর্সঃ
- উইকিপিডিয়া
- হিন্দুদের দেবদেবী: উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ