মূর্তিতত্ত্বে মা জগদ্ধাত্রী!

জগদ্ধাত্রীর ধ্যানমন্ত্রে দেবীর যে রূপকল্পনা করা হয়েছে তা নিম্নরূপ:

সিংহস্কন্ধসমারূঢ়াং নানালঙ্কারভূষিতাম্।
চতুর্ভূজাং মহাদেবীং নাগযজ্ঞোপবীতিনীম্।।
শঙ্খশার্ঙ্গসমাযুক্তবামপাণিদ্বয়ান্বিতাম্।
চক্রঞ্চ পঞ্চবাণাংশ্চ দধতীং দক্ষিণে করে।।
রক্তবস্ত্রাপরিধানাং বালার্কসদৃশীতনুম্।
নারদাদ্যৈর্মুনিগণৈঃ সেবিতাং ভবসুন্দরীম্।।
ত্রিবলীবলয়োপেতনাভিনালমৃণালিনীম্।
রত্নদ্বীপে মহাদ্বীপে সিংহাসনসমন্বিতে।
প্রফুল্লকমলারূঢ়াং ধ্যায়েত্তাং ভবগেহিনীম্।।

– মহাদেবী জগদ্ধাত্রী সিংহের স্কন্ধে আরূঢ়া, নানা অলংকারে ভূষিতা ও নাগরূপ যজ্ঞোপবীতধারিণী। দেবীর বাম হস্তদ্বয়ে শঙ্খ ও শার্ঙ্গধনু; দক্ষিণ হস্তদ্বয়ে চক্র ও পঞ্চবাণ। রক্তবস্ত্রপরিহিতা সেই ভবসুন্দরী প্রভাতসূর্যের ন্যায় রক্তবর্ণা।

নারদাদি মুনিগণ তার নিত্যসেবা করে থাকেন। তার ত্রিবলিবলয়সমন্বিত নাভিমণ্ডল মৃণালবিশিষ্ট পদ্মের ন্যায়। সেই শিবপত্নী রত্নদ্বীপরূপ উচ্চ বেদিকায় স্থিত সিংহাসনে প্রস্ফুটিত পদ্মের উপর উপবিষ্টা। নাগযজ্ঞোপবীতিনী জগদ্ধাত্রী; নাগরূপ যজ্ঞোপবীত মহাযোগিনী ব্রহ্মময়ী জগদ্ধাত্রীর প্রতীক

জগদ্ধাত্রী দেবীর মূর্তিতত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্বামী নির্মলানন্দ বলেছেন, “অর্ক বা সূর্যই বিশ্বের পোষণকর্তা। পৃথিব্যাদি আবর্তনশীল গ্রহ-উপগ্রহদিগকে সূর্যই নিজের দিকে আকর্ষণ করে রেখেছেন। দেবী জগদ্ধাত্রীর মধ্যেও ধারণী ও পোষণী শক্তির পরিচয় বিদ্যমান।

তাই তাঁকে বলা হয়েছে বালার্কসদৃশীতনু। একই কারণে জগৎপালক বিষ্ণুর শঙ্খ-চক্র-শার্ঙ্গধনু-আদি আয়ুধ দেবীর শ্রীকরে।… দেবীর রক্তবস্ত্র ও রক্তবর্ণের মধ্যে, দেবীর সিংহাসনস্থ রক্তকমলে সেই রজোগুণেরই ছড়াছড়ি। রজোদীপ্ত বলেই জগদ্ধাত্রী মহাশক্তিময়ী।

তাঁর অস্ত্রশস্ত্র, তাঁর বাহন – সকলই তাঁর শক্তিমত্তার ভাবটি আমাদের অন্তরে উদ্দীপ্ত করে দেয়। তবে দেবীর এই বীর্য সংহারের নয়। পরন্তু সমগ্র বিশ্বকে মহাসর্বনাশ থেকে রক্ষাপূর্বক তাকে আত্মসত্তায় –

ঋতে ও সত্যে সুস্থির করে রাখবার জন্য। … নাগ বা সর্প যোগের পরিচায়ক। উপবীত ব্রাহ্মণ্যশক্তির প্রতীক। দেবী জগদ্ধাত্রী ব্রহ্মময়ী; তিনি পরমা যোগিনী। মহাযোগবলেই ব্রহ্মময়ী ধরে আছেন এই নিখিল বিশ্বসংসারকে।

এই জগদ্ধারণই জগদ্ধাত্রীর পরম তপস্যা – তাঁর নিত্য লীলা, তাঁর নিত্য খেলা। জননীরূপে তিনিই বিশ্বপ্রসূতি, আবার ধাত্রীরূপে তিনিই বিশ্বধাত্রী।” আমাদের খুব প্রিয় মহিষাসুর মর্দিনী আকাশবাণীতে প্রচারিত হওয়ার সুরুতে ……” সিনহস্থা শশিশেখরা……… চতুর ভুজাই…………” এই স্তব মন্ত্র শুনলে দেখা যাবে যে এটিও দুর্গার জগদ্ধাত্রী রুপেরি বর্ণনা …

সোর্সঃ উইকিপিডিয়া ও ওয়ানইন্ডিয়া

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.