কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী বাংলার হিন্দুসমাজের আচরণীয় ব্রতগুলির অন্তর্গত একটি ব্রত। হিন্দু প্রধানত বৈষ্ণব মতাবলম্বীরা জাগতিক মঙ্গলকামনায় এবং অশুভ-অকল্যাণ দূর করতে এই ব্রত পালন করা হয়ে থাকে। সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য দেখা যায়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। এই তিথিতেই শ্রীকৃষ্ণের পুজো করা হয়ে থাকে। উৎসবটি প্রতি বছর ইংরাজি ক্যালেন্ডারে অগাস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনও এক সময়ে পড়ে।
ব্রত নিয়ম : এই ব্রত সব হিন্দুরাই করতে পারবেন । ব্রতের পূর্বদিন ও ব্রতের পরদিন নিরামিষ আহার ভক্ষণ করে সংযমী হয়ে থাকতে হবে। ব্রতের আগের দিন রাত্রে ভালো মতো দাঁত মেজে নেবেন- যাতে দাঁতে খাবারের কণা না আটকে থাকে, পরদিন বারোটি কুল্লা করে মুখ ধুবেন । ব্রতের দিন উপোবাসী থেকে রাত ৮ টার পর পূজায় বসতে হবে। উপযুক্ত সময় রাত ১২ টায় । উপবাসে জল, ঔষধ, চিনি মিশ্রিত সরবত আর দুধ ছাড়া লাল চা ভিন্ন আর কিছু ভক্ষণ নিষেধ ।
সম্পূর্ণ উপবাসে অক্ষম তাহারা ফলের রস, কাঁচা দুধ আর এতেও অসমর্থ ব্যাক্তি কিছু ফলমূল খেয়ে থাকতে পারেন । ভগবানের পূজায় নারকেল নাড়ু, দই, ঘি, মধু, কাঁচা দুধ, ফলমূল, বাটার ( মাখন) বা খোয়া ক্ষীর হলেই হবে । তাল ফল লাগবেই। তালের বরা ও তালের কাঁচা রস নিবেদন করবেন, অভাবে শুধু মাত্র কাঁচা তালের রস সেটাও না থাকলে গোটা তাল ফল নিবেদন করবেন । এক আঁটি তাল, শ্বেত তাল দেবেন না । তিলক ও তুলসীমালা ধারণ করে পূজাতে বসবেন। অভাবে তুলসীতলার মাটি নিয়ে কপালে তিলক একে পূজোতে বসবেন ।
ব্রতফল: এই ব্রত পালন করলে শতজন্মের মহাপাতক থেকে উদ্ধার পাওয়া যায়।
শ্রীকৃষ্ণের পূজার্চ্চনা পদ্ধতি: (মন্ত্রপাঠ সহ পূজা)
হাতের তালুতে দু-এক ফোঁটা জল নিয়ে ‘ওঁ বিষ্ণু’ মন্ত্রে পান করবেন। মোট তিন বার এইভাবে জল পান করতে হবে। তারপর করজোড়ে বলবেন—
ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্।
ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোঽপি বা।
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।।
জল শুদ্ধি:
ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি।
নর্মদে সিন্ধু-কাবেরি জলেঽস্মিন সন্নিধিং কুরু ।।
পুষ্প শুদ্ধি:
পুষ্পে পুষ্পে মহা পুষ্পে সুপুষ্পে পুস্পসম্ভবে
পুষ্পোহী চায়াব কীর্ণে চ হুং ফট স্বাহা।।
আসন শুদ্ধি:
যে আসনে বসিয়া পূজা করিবে, তাহার নিম্নে ত্রিকোণ মণ্ডল লিখিয়া আসনের উপর একটি পুষ্প দিয়া পাঠ করিবে,
এতে গন্ধপুষ্পে ওঁহ্রীঁ আধার শক্তি-কমলাসনায় নমঃ।
তৎপরে আসন ধরিয়া পাঠ করিবে, –
আসনমন্ত্রস্য মেরুপৃষ্ঠঋষিঃ সুতলং ছন্দঃ কুর্ম্মো দেবতা আসনোপবেশনে বিনিয়োগঃ।
অনন্তর হাত জোড় করিয়া পাঠ করিবে, –
ওঁ পৃথ্বি ত্বয়া ধৃতা লোকাদেবি ত্ত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা। ত্বঞ্চ ধারয় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরু চাসনম্।
তারপর পবিত্র বাদ্য ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে স্বস্তিবাচন করবেন—
ওঁ কর্তব্যেঽস্মিন্ শ্রীশিবপূজাকর্মণি ওঁ পূণ্যাহং ভবন্তো ব্রুবন্তু।
ওঁ পূণ্যাহং ওঁ পূণ্যাহং ওঁ পূণ্যাহং।
ওঁ কর্তব্যেঽস্মিন্ শ্রীশিবপূজাকর্মণি ওঁ স্বস্তি ভবন্তো ব্রুবন্তু।
ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি।
ওঁ কর্তব্যেঽস্মিন্ শ্রীশিবপূজাকর্মণি ওঁ ঋদ্ধিং ভবন্তো ব্রুবন্তু।
ওঁ ঋদ্ধতাম্ ওঁ ঋদ্ধতাম্ ওঁ ঋদ্ধতাম্।
ওঁ স্বস্তি ন ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ।
স্বস্তি নস্তার্ক্ষ্যো অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতির্দধাতু।
ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি।
এরপর হাত জোড় করে বলবেন—
ওঁ সূর্যঃ সোমো যমঃ কালঃ সন্ধ্যে ভূতান্যহঃ ক্ষপা।
পবনো দিক্পতির্ভূমিরাকাশং খচরামরাঃ।
ব্রাহ্মং শাসনমাস্থায় কল্পধ্বমিহ সন্নিধিম্।।
এরপর সংকল্প মন্ত্র পাঠ করবেন- যথা-
“বিষ্ণুরোমম্ তৎসদদদ্য ভাদ্রে মাসৈ কৃষ্ণপক্ষে অষ্টমান্তিথৌ অমুক গোত্রঃ
( আপনার গোত্র বলবেন) শ্রীঅমুক দেবশর্মা ( আপনার নাম বলবেন )
সর্বপচ্ছান্তিপূর্বক গণেশাদি নানা দেবতা পূজা পূর্বক শ্রীকৃষ্ণজন্মাষ্টমী ব্রতমহং করিষ্যে।”
এরপর জলশুদ্ধি করে নেবেন। জলশুদ্ধির মাধ্যমে সূর্যমণ্ডল থেকে সকল তীর্থকে জলে আহ্বান করে জলকে পবিত্র করা হয়। তারপর সেই পবিত্র জলে পূজার কাজ হয়। ঠাকুরের সামনে নিজের বাঁ হাতের কাছে কোশা রেখে তাতে জল দেবেন। সেই জলে আলতো করে ডান হাতের মধ্যমা আঙুল ঠেকিয়ে (নখ যেন না ঠেকে) বলবেন—
ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি। নর্মদে সিন্ধু-কাবেরি জলেঽস্মিন সন্নিধিং কুরু।
তারপর সেই জলে একটা সচন্দনফুল দিয়ে মনে মনে তীর্থদেবতাদের পূজা করবেন। এতে সকল তীর্থের পূজা করা হয়ে যায়। তীর্থপূজা সেরে নিয়ে সেই জল নিজের মাথায় একটু দেবেন। তারপর পূজার সকল দ্রব্যে ছিটিয়ে সব কিছু শুদ্ধ করে নেবেন। তারপর সূর্যের উদ্দ্যেশ্যে একটু জল শিবলিঙ্গে দেবেন।
সূর্যকে জল দিয়ে সূর্যপ্রণাম করবেন—
ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্।
ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোঽস্মি দিবাকরম্।।
তারপর একে একে গণেশ, শ্রীগুরু, শিব, সূর্য, নারায়ণ, দুর্গা, নবগ্রহ, দশমহাবিদ্যা, দশাবতার, সর্বদেবদেবী ও আপনার ঠাকুরের আসনে অন্যান্য ঠাকুরদেবতা থাকলে তাঁদেরকে এবং আপনার ইষ্টদেবতাকে প্রত্যেককে একটি করে সচন্দন ফুল দিয়ে পূজা করবেন। পূজার পুস্প গুলি শালগ্রাম বা বাণলিঙ্গে দেবেন। এগুলি না থাকলে ঘটে দেবেন, ঘট না থাকলে ভগবানের সম্মুখে তাম্র পাত্র রেখে সেখানে দিতে পারেন- এবং দেওয়ার পর প্রত্যেকবার একটু করে সেখানে কোশাকুশী বা পঞ্চপত্র (তামার পাত্র, তামার চামচ দিয়ে আচমন করা হয়) থেকে অল্প জল মনে করে দেবেন- এই নিয়ম ভুল করবেন না ।
গনেশের প্রনামঃ
ঔঁ একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদরং গজানন।
বিঘ্ননাশকরং দেবং হেরম্বং প্রণমাম্যহম্।
গুরু প্রনামঃ
ঔঁ অখণ্ডমণ্ডালাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্।
তৎপদং দশি‘তং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।১
অঞ্জানতিমিরান্ধস্য ঞ্জানাঞ্জন শলাকায়া।
চক্ষু রুল্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।২.
গুরু ব্রক্ষা গুরু বিষ্ণু গুরুদেবো মহেশ্বরঃ। গুরুঃ সাক্ষাৎ পরং ব্রক্ষ
তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।৩
শিবের প্রনাম মন্ত্রঃ-
ওঁ নমস্তভ্যঃ বিরূপাক্ষ নমস্তে দিব্যচক্ষুসে নমঃ ।
পিণাকহস্তায় বজ্রহস্তায় বৈ নমঃ ।।
নমত্রিশূলহস্তায় দন্ড পাশাংসিপাণয়ে ।
নমঃ স্ত্রৈলোক্যনাথায় ভূতানাং পতয়ে নমঃ ।।
ওঁ বানেশ্বরায় নরকার্ণবতারনায় , জ্ঞানপ্রদায় করুণাময়সাগরায় ।
কর্পূরকুন্ডবলেন্দুজটাধরায় , দারিদ্রদুঃখদহনায় নমঃ শিবায় ।।
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে ।
নিবেদয়ানি চাত্মানংত্তৃংগতিপরমেশ্বরঃ ।।
দূর্গা প্রণামঃ
ওঁ জয়ন্তি,মঙ্গলা, কালী,ভদ্রকালী,কপালিনী।
দূর্গা,শিবা,ক্ষমা,ধাত্রি,স্বাহা স্বধা নমোহস্তুতে।।
নারায়ণের প্রনামঃ
নম ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রহ্মণ্য হিতায় চ।
জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ ।।
এরপর দ্বার দেশে ( ঠাকুর ঘরে প্রবেশের দরজার দুদিকে ) দুটি চন্দন মিশ্রিত পুস্প দেবেন, জলের ছিটে দেবেন । অত ঋষি, মাস, পণ্ডিত, গজেভ্য , দশমহাবিদ্যা, দশ অবতার, নব গ্রহ, দশ দিকপাল, ইষ্ট দেবতা, কুল দেবতা, বাস্তু দেবতা, গ্রাম দেবতা ও সর্ব দেবদেবীর নামে একটি একটি পুস্প দেবেন- দেওয়ার সাথে সাথে জলের ছিটে দেবেন । এরপর মানস পূজা- জন্মাষ্টমীতে গোপালের ধ্যান করতে হয় । যথা –
ওঁ নবীননীরদশ্যামং নীলোন্দীবরলোচনম্ ।
বল্লবীনন্দনং বন্দে কৃষ্ণং গোপালরূপিনম্ ।।
মানস পূজার পর পুস্প টি নিজের মাথায় দিয়ে গোপালের ধ্যান করবেন মনে মনে। ধ্যান সমাপনের পর জলশঙ্খ স্থাপন করবেন । বিগ্রহ অভিষেক করবেন পঞ্চামৃত বা সুগন্ধি বারি দ্বারা । এরপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধারানী ও গোপালের পূজা করবেন । ১০৮ তুলসী পত্রের মালা রাধামাধবকে দিতে হবে । কৃষ্ণের ধ্যান আপনি যে কোনো বইতে পাবেন । রাধারানীর ধ্যান-
ওঁ অমলকমল- কান্তিং নীলবস্ত্রাং সুকেশীং,
শশধরসমবক্ত্রাংখঞ্জনাক্ষীং মনোজ্ঞাং ।
স্তনযুগগত- মুক্তাদামাদীপ্তাং কিশোরীং ,
ব্রজপতি- সুতকান্তাং রাধিকামাশ্রয়েহম্ ।।
এরপর গোপালের পূজা করবেন ।
গোপালের পূজার্চ্চনার নিয়ম-
ধ্যানানুরুপ মুর্তিতে শ্রীকৃষ্ণের পূজার্চ্চনাদি করিবেন । এই শ্রীকৃষ্ণের মূর্ত্তি- দ্বিভুজ, মেঘের ন্যায় শ্যামবর্ণ, ত্রিভঙ্গ । অর্থাৎ স্থান ত্রয়ে বক্র অ মোহনা-কৃতি বংশীধারী । বন-মালায় সুসজ্জিত । শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করিবেন । পরে শ্রীকৃষ্ণের কাম গায়ত্রী পাঠ করিয়া উপকরণ নিবেদন করিবেন
প্রণাম মন্ত্র-
বসুদেব সুতং দেবং কংসচানুরমর্দ্দনম্ ।
দেবকী পরমানন্দং কৃষ্ণং বন্দে জগদ্ গুরুম্ ।।
শ্রীকৃষ্ণের বীজ মন্ত্র ও উপকরণ নিবেদন মন্ত্র-
মূল বীজ মন্ত্র-
ক্লীঁ।
জপের বীজ মন্ত্র-
ক্লীদ কৃর্ষ্ণায় স্বাহা । ক্লীঁ কৃষ্ণায় নমঃ ।
ক্লীঁ কৃষ্ণায় স্বাহা । ক্লীঁ কৃষ্ণায় গোবিন্দায় স্বাহা ।
ক্লীঁ কৃষ্ণায় গোবিন্দায় গোপীজন বল্লভায় স্বাহা । বল্লভায় স্বাহা ।
শ্রী কৃষ্ণের কাম গায়ত্রী-
ওঁ ক্লীঁ (নমঃ ক্লীঁ) কামদেবায় বিদ্মহে পুষ্প বানায় ধীমহি তন্নোহনঙ্গঃ প্রচোদয়াৎ ।
উপকরণ নিবেদন মন্ত্র- নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ ।(বা স্ব-কৃষ্ণ মন্ত্র)
শ্রীকৃষ্ণকে বসিবার জন্য আসন নিবেদন করিবেন ।
আসনঃ- ইদং আসনং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নিবেদয়ামি নমঃ, বলিয়া নিবেদন করিবেন ।
একটি সচন্দন পুষ্প হস্তে লইয়া শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান করিয়া প্রথম পুষ্পটি নিজ মস্তকে এবং দ্বিতীয় বার ধ্যান করিয়া আর একটি পুষ্প শ্রীকৃষ্ণের প্রতিছবি বা শ্রীমূর্ত্তির চরণে অর্পন করিবেন ।
শ্রীকৃষ্ণের পূজার উপকরণ নিবেদন-
জল- এতৎ পাদং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া পাদ পদ্মে জল নিবেদন করিবেন, দুইবার ।
শ্রীকৃষ্ণের কাম গায়ত্রী পাঠ করিয়া উপকরণ নিবেদন করিবেন ।
অর্ঘ্যঃ- এষ অর্ঘ্যং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া অর্ঘ্য নিবেদন করিবেন ।
আচমণঃ- ইদমাচমনীয় জলং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া জল নিবেদন করিবেন ।
চন্দনঃ- এষ গন্ধঃ নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । চরণ দ্বয়ে দুইবার ও
পুষ্পঃ- এতৎ সচন্দন পুষ্পং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ দুইবার ও
মাল্যঃ- এতৎ সচন্দন পুষ্প মাল্যং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ ও
তুলসীঃ- তুলসী ইদং সচন্দন তুলসী পত্রং নমঃ কঈ শ্রী কৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া । দুইটি বা আটটি তুলসী পত্র চিৎ করিয়া চরণদ্বয়ে নিবেদন করিবেন ।
ধুপঃ- এষ ধুপঃ নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নিবেদয়ামি নমঃ । ও
দীপঃ- এষ দীপঃ নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া নিবেদন করিবেন ।
শ্রী কৃষ্ণকে ভোগের সামগ্রী নিবেদন করিবেন –
আচমন- ইদমাচমনীয় জলং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া জল নিবেদন করিবেন । নৈবদ্যে ও পানীয় জলে তুলসী পত্র নিবেদন, তৎপর উভয় পাত্রে ১০ বার মূল মন্ত্র স্মরনান্তে নিবেদন করিবেন ।
নৈবদ্যঃ-
“ইদং সঘৃত সোপকরণ আমান্নঃ নৈবেদ্যং নমঃ”
ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বা ইদং সঘৃত সোপকরণ অন্নব্যঞ্জন নৈবদ্যং নমঃ
ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ
বলিয়া নিবেদন অরিবেন ।
পানীয় জল- ইদং পানীয় জলং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া জল নিবেদন করিবেন । (ভোজনের পর আচমনীয় জল নিবেদন করিবেন ।)
আচমনঃ- ইদমাচমনীয় জলং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া জল নিবেদন করিবেন ।
তাম্বুল- এতৎ তাম্বুলং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ, বলিয়া দিবেন ।
আচমনঃ- ইদং পানীয় জলং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া জল নিবেদন করিবেন । আরতি ও আরতি কীর্ত্তনাদি করিবেন-
পূজা সমাপনের সময় হস্তে একটু জল লইয়া শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে চরণে জল অর্পন করিবেন ।
মন্ত্র যথা- “এতৎ পাদ্যং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় অর্পণমস্তু” বলিয়া হস্তের জল শ্রীকৃষ্ণের চরণের উদ্দেশ্যে অর্পণ করিবেন ।
এরপর শ্রীকৃষ্ণ মন্ত্র (বীজ মন্ত্র) ১০৮ বার জপ করিবেন । জপ করে শ্রীকৃষ্ণকে জপ সমর্পণ করবেন ।
সমর্পন মন্ত্র-
গুহ্যাতি গুহ্য গোপ্তাত্বং গৃহানাস্মৎ কৃতং জপং ।
সিদ্ধি ভবতু মে দেব ত্বৎ প্রসাদাৎ জনার্দন ।।
এরপর সুনন্দ , উপানন্দ, বসুদেব, দেবকী, যশোদা, রোহিনী, বলরাম, সুভদ্রা, উদ্ভব, অক্রুর, নন্দ, ষষ্ঠী, মার্কণ্ড, শ্রীদাম, সুদাম, দাম, বসুদাম, সুবল,বৃন্দারাণী, বৃন্দাবন, অষ্ট সখী, যোগমায়া, শিব, দুর্গা, গঙ্গা ও যমুনা দেবীর নামে একটি একটি করে পুস্প তামার পাত্রে দেবেন । এছাড়া ভগবানের অঙ্গ ভূষণ যেমন বংশী, ময়ূর পেখম ইত্যাদির নামের পুস্প ও ভগবানের অস্ত্রাদি যেমন সুদর্শন চক্র, গদা, শঙ্খ, শার্ঙ্গ ধনুক ইত্যাদির নামে পুস্প দেবেন । পূজা শেষ হলে ভোগ নিবেদন করবেন । এরপর আরতি করবেন । ধুপকাঠি, পঞ্চপ্রদীপ, কর্পূর প্রদীপ মাষ্ট , জল শঙ্খ , বস্ত্র, পাখা, চামর, পুস্পের পাত্র দ্বারা আরতি করবেন । তামার পাত্রে গুড়ো ধূপ রেখে তার ওপর কর্পূর প্রজ্বলিত করে বিষ্ণু দেবের আরতি করলে উনি প্রসন্ন হন ( হরিভক্তিবিলাস ) । এরপর “ওঁ গোবিন্দায় নমঃ” বলে তিনবার পুস্পাঞ্জলি দিয়ে স্তব পাঠ ( ১০৮ নাম পড়লেও হবে) করে ক্ষমা প্রার্থনা চেয়ে গোবিন্দকে প্রনাম করে শঙ্খ , কাঁসর ধ্বনি করবেন ।
শ্রীকৃষ্ণের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা-
নমো যদক্ষরং মাত্রাহীনঞ্চ যদ্ ভবেৎ ।
পূর্ণং ভবতু ত্বং সর্বং ত্বং প্রসাদাৎ জনার্দ্দন ।।
মন্ত্রহীনং ক্রিয়াহীনং ভক্তিহীনং জনার্দ্দন ।
যৎ পূজিতং ময়াদেব পরিপূর্ণং তদস্তুমে ।।
শ্রীকৃষ্ণকে শয়নের জন্য শর্য্যা নিবেদন করিবেন । শর্য্যাকে গন্ধ ও পুষ্পাদি দিয়া সুসজ্জিত করিবেন । প্রণাম মন্ত্র স্মরণ করিয়া শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করিবেন ।
শ্রীকৃষ্ণের প্রণাম মন্ত্রঃ-
হে কৃষ্ণ করুণা সিন্ধো দীন বন্ধো জগৎ পতে ।
গোপেশ গোপিকা- কান্ত রাঁধা কান্ত নমোহস্তু তে ।।
শ্রীকৃষ্ণের প্রদক্ষিণ মন্ত্রঃ-
হে কৃষ্ণ রাধিকা কান্ত গোবিন্দ মধুসূধন ।
প্রদক্ষিণং করোমি ত্বাং করুনাং কুরু মাধব ।।
শ্রীগুরু দেবতা ও শ্রীকৃষ্ণের ডাইন পার্শ্ব দিয়া প্রদক্ষিণ মন্ত্র বলিতে বলিতে কর জোড়ে চারিবার প্রদক্ষিণ করিবেন । প্রতি ফিরে সন্মুখ হইলে কর জোড়ে প্রণাম করিবেন । শেষবার চরণে প্রণাম করিবেন । (প্রদক্ষিণ মন্ত্র বা হরি নাম করিতে করিতেও প্রদক্ষিণ করিতে পারিবেন ।)
শ্রীকৃষ্ণের নিকট প্রার্থনা- হে গোবিন্দ আপনার আপার করুণার দয়ায় এই দুর্ল্লভ মানব জনম লাভ করিয়াছি, সংসার মায়া জালে আবদ্ধ হইয়া, এই ক্ষণস্থায়ী মানবজনম বিফলে হারাইয়াছি, হে গোবিন্দ আপনি অগতির গতি পতিত পাবন, নিজ গুণে কৃপা করিয়া পতিতকে আপনার চরণে স্মরণাপন্ন হওয়ার মত শক্তি প্রদান করুণ ।
শ্রীকৃষ্ণের চরণামৃত লওয়ার মন্ত্র-
ওঁ অকাল-মৃত্যু-হরণং সর্ব্ব ব্যাধি-বিনাশনং ।
কৃষ্ণ পাদোদকং পীত্বা শিরসা ধারয়াম্যহং ।।
পূজা সমাপন হলে প্রসাদ পরদিন সেবা নেওয়ার নিয়ম। অসমর্থ ব্যাক্তি পূজার পর প্রসাদ নিতে পারেন । পরদিন কোনো মন্দিরে বা সন্ন্যাসীকে সামান্য দান দিয়ে ভগবানের অন্ন প্রসাদ সেবা নেবেন । যদি পারেন তাহলে গোটা অষ্টমী তিথি উপবাস রাখবেন, নাহলে পূজার পর প্রসাদ গ্রহণ করতে পারেন । তালের বরা, সন্দেশ এ যেহেতু আটা ময়দা থাকে- তাই এই প্রসাদ সেদিন নেবেন না, পরদিন নেবেন । অষ্টমী পার হলে যারা ঘটে পূজো করবেন- তারা ঘট নাড়িয়ে দেবেন ।
শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান:
(ক)
বন্দে বৃন্দাবন গুরু কৃষ্ণ কমল লোচনম্ ।
পীতাম্বরং ঘণশ্যামং বনমালা বিভুষিতাম্ ।।
শ্যামং শান্তং দ্বিভুজং মুরলী ধরং ।
রচিতং তিলকং তালে বিভ্রতং মণ্ডলাকৃতিম্ ।।
তরুণাদিত্য-সঙ্কাশং-কুণ্ডলাভ্যাং বিরাজিতম্ ।
শ্রীধাম-সুধাম সুবল স্তোক কৃষ্ণার্জ্জুনাবৃতম ।।
গোপী বল্লভ মধ্যস্থং রাধিকা প্রাণ বল্লভম্ ।
(খ)
ত্রিভঙ্গ ভঙ্গিমা রুপ বেণু রন্ধ্র কর পল্লাম্ ।
গোপী মণ্ডল মধ্যস্থং শোভিত শ্রীনন্দ নন্দনম্ ।।
জোর করে জলপান, ঔষধ (ঔষধ উপবাসে গ্রহণ করলে দোষ হয় না) ছেড়ে কেউ উপবাস করবেন না।