যেভাবে নবগ্রহের শান্তি, বিশেষ স্নান, স্তব ও গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ করবেন!

আমরা প্রায়শই কোনও না কোনও সমস্যার মধ্যে দিন কাটাই। কখনও ছোট সমস্যা আবার কখনও বড় তথা জটিল সমস্যা। প্রত্যেক মানুষের জীবনে বিভিন্ন গ্রহের সু-প্রভাবের পাশাপাশি কু-প্রভাবও আছে। এমন একজন মানুষও হয়তো পাওয়া যাবে না, যার জীবনে সমস্যা নেই বা নয়টি গ্রহই শুভ স্থানে আছে। এই গ্রহ দোষ সম্পূর্ণভাবে কাটানো সম্ভব নয় কিন্তু এর কু-প্রভাব অবশ্যই কিছুটা কমানো যেতে পারে। তার জন্য বিভিন্ন প্রতিকারের ব্যবস্থা আছে যেমন উপযুক্ত রুদ্রাক্ষ ধারণ, রত্ন ধারণ, মন্ত্র পাঠ, বিভিন্ন ক্রিয়া ইত্যাদি। আবার অশুভ শক্তিকে পরাহত করে শান্তি লাভ করতে নবগ্রহ স্তব ও গায়ত্রী মন্ত্র জপ করা অপরিহার্য।

গোচরে বা বিলগ্নে বা সে গ্রহারিষ্টসূচকাঃ।
পূজয়ে তান্‌ প্রযন্তেন পূজিতাঃ স্যুঃ শুভপ্রদাঃ।।
(গোচরে বা জন্মকুণ্ডলীতে যে গ্রহ অনিষ্টকারক , তার শান্তি করিয়ে প্রসন্নতা লাভ করানো প্রয়োজন। প্রসন্ন হয়ে সেই গ্রহ শুভ ফল প্রদান করেন। নবগ্রহ স্তব ও গায়ত্রী মন্ত্র জপের দ্বারা গ্রহগণের শান্তি অতি শীঘ্রই হয়ে থাকে অর্থাৎ নবগ্রহের শান্তি মানে আমাদের শান্তি)।

চলুন দেখে নিই আমাদের নবগ্রহের বিশেষ স্নান, স্তব ও গায়ত্রী মন্ত্রঃ

আমরা আমাদের জীবনে অনেক তীর্থস্থানে যাই। সেখানে নদীতে অথবা সাগরে স্নান করি। তীর্থ স্থানে স্নান করার একটি বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। আমাদের শাস্ত্রে সাত রকম স্নানের কথা বলা হয়েছে যথা —
১) মন্ত্র স্নান , ২) মৃত্তিকা স্নান, ৩) অগ্নি স্নান, ৪) বায়ব্য স্নান , ৫) দিব্য স্নান, ৬) বরুণ স্নান , ৭) মঙ্গল স্নান
এই স্নান গুলির মধ্যে সব থেকে শক্তিশালী স্নান হচ্ছে মঙ্গল স্নান এবং এটি বহুল প্রচলিত একটি প্রথা।

মঙ্গল স্নানঃ
মঙ্গল স্নান করে জীবনে অনেক সময়ে আমরা অনেক উপকার পেয়ে থাকি। মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গা স্নান, কার্ত্তিক পূর্ণিমায় গঙ্গা স্নান ও কুম্ভ স্নান সহ বিভিন্ন মঙ্গল স্নান করলে জীবনে অনেক পূর্ণ অর্জন করা যায়। গঙ্গা জলকে পবিত্রতার প্রতীক মানা হয়। গঙ্গা জল আমাদের জন্ম থাকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রয়োজন হয়।

নবগ্রহকে শান্ত রাখার জন্য মঙ্গল স্নানের পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিনঃ
প্রথমে একটি মাটির কলস নিন, এরপর অল্প আতপ চাল, অল্প সাদা সর্ষে, পাঁচটি দুর্বা, পাঁচটি তুলসী পাতা, পাঁচটি ছোট এলাচ, অল্প লাল চন্দন, অল্প কেশর, অল্প কালো তিল, পাঁচটি লবঙ্গ, অল্প পরিমাণে হিং এবং পাঁচটি গুগুলের দানা ওই কলসের মধ্যে দিন। তারপর নবগ্রহের শান্তি কামনা করে ওই কলসের মধ্যে তিন গ্লাস গঙ্গাজল দিন। নিজের মনের বাসনা জানিয়ে কলসটিকে প্রণাম করে ঘরে রেখে দিন। এরপর কলস থেকে এক গ্লাস জল বের করে নিজের স্নানের জলের সঙ্গে মিশিয়ে স্নান করুন, এই ভাবে পর পর তিন দিন করার পর কলসটি সব জিনিস সমেত গঙ্গায় ফেলে দিন। এই প্রক্রিয়াটি যে কোনও ভাল তিথিতে করতে পারলে অবশ্যই সুফল পাবেন।

নবগ্রহের স্তব মন্ত্রঃ

জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্‌।
ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্‌।।

দিব্যশঙ্খতুষারাভং ক্ষীরোদার্ণব সম্ভবম্‌।
নমামি শশিনং ভক্ত্যা শম্ভোর্মুকুট ভূষণম।।

ধরণীগর্ভসম্ভুতং বিদ্যুৎপুঞ্জসমপ্রভম।
কুমারং শক্তিহস্তষ্ণ লোহিতাঙ্গং নমাম্যহম।।

প্রিয়ঙ্গুকলিকাশ্যামং রূপেণাপ্রতিমং বুধম্‌।
সৌম্যং সর্বগুণোপেতং নমামি শশিনঃ সুতম্‌।।

দেবতানামৃষীণাঞ্চ গুরুং কনকসন্নিভম্‌।
বন্দ্যভূতং ত্রিলোকেশং তং নমামি বৃহস্পতিম্‌।।

হিমকুন্দমৃণালাভং দৈত্যানাং পরমং গুরুম্‌।
সর্বশাস্ত্র প্রবক্তারং ভার্গবং প্রণমাম্যহম্‌।।

নীলাঞ্জনচয়প্রখ্যং রবিসুনুং মহাগ্রহম্‌।
ছায়ায়া গর্ভসম্ভুতং বন্দে ভক্ত্যা শনৈশ্চরম্‌।।

অর্দ্ধকায়ং মহাঘোরং চন্দ্রাদিত্যবিমর্দ্দকম্‌।
সিংহিকায়াঃ সূতং রৌদ্রং ত্বং রাহুং প্রণমাম্যহম্‌।।

পলালধুমসঙ্কাশং তারাগ্রহবিমর্দ্দকম্‌।
রৌদ্রং রুদ্রাত্মকং ক্রুরং তং কেতুং প্রণমাম্যহম্‌।।

নবগ্রহের গায়ত্রী মন্ত্র :
•  রবি (সূর্য) গ্রহ – ওঁ ভাস্করায় বিদ্মহে মহাতেজায় ধীমহিঃ তন্নঃ সূর্যঃ প্রচোদয়াৎ।
•  সোম (চন্দ্র) গ্রহ – ওঁ ক্ষীরপুত্রায় বিদ্মহে অমৃতত্বায় ধীমহিঃ তন্নঃ চন্দ্রঃ প্রচোদয়াৎ।
•  মঙ্গল গ্রহ – ওঁ অঙ্গরকায় বিদ্মহে শক্তিহস্তায় ধীমহিঃ তন্নঃ ভৌমঃ প্রচোদয়াৎ।
•  বুধ গ্রহ – ওঁ সৌম্যরূপায় বিদ্মহে বাণেশায় ধীমহিঃ তন্নঃ বুধঃ প্রচোদয়াৎ।
•  বৃহস্পতি গ্রহ – ওঁ আঙ্গিরসায় বিদ্মহে দণ্ডায়ুধায় ধীমহিঃ তন্নঃ জীবঃ প্রচোদয়াৎ।
•  শুক্র গ্রহ – ওঁ ভৃগুসুতায় বিদ্মহে দিব্যদেহায় ধীমহিঃ তন্নঃ শুত্রঃ প্রচোদয়াৎ।
•  শনি গ্রহ – ওঁ সূর্যপুত্রায় বিদ্মহে মৃত্যুরূপায় ধীমহিঃ তন্নঃ সৌরিঃ প্রচোদয়াৎ।
•  রাহু গ্রহ– ওঁ শিরোরূপায় বিদ্মহে অমৃতেশায় ধীমহিঃ তন্নঃ রাহুঃ প্রচোদয়াৎ।
•  কেতু গ্রহ – ওঁ গদাহস্তায় বিদ্মহে অমৃতেশায় ধীমহিঃ তন্নঃ কেতুঃ প্রচোদয়াৎ।

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.