যেসব কারণে সনাতন ধর্মে মুখাগ্নি করা হয়!


মুখাগ্নি বা অন্ত্যোষ্টি হল জীবনের শেষ যজ্ঞ। অন্ত+ ইষ্টি = অন্ত্যোষ্টি। অন্ত মানে শেষ আর ইষ্টি মানে হল যজ্ঞ।  আমরা জানি আমাদের সুপ্রাচীন পূর্বপুরুষেদের বৈদিক সমাজ ছিল যজ্ঞপ্রধান।

জীবনের শুরু থেকে শেষ অবধি সবই হত যজ্ঞের মাধ্যমে ঈশ্বর কে উদ্দেশ্য করে। অশ্বমেধ যজ্ঞ, অগ্নিহোত্র যজ্ঞ ইত্যাদি যজ্ঞে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হবি উতসর্গ করা হত।

এ হল ঈশ্বরের দেয়া জীবন ও দেহ দ্বারা ঈশ্বরের সৃষ্ট প্রকৃতির উপাদান সম্যুহ ভোগ করার প্রেক্ষিতে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কৃতজ্ঞতাস্বরুপ তার উপাসনা করা।

তাই অন্ত্যোষ্টি তথা জীবনের শেষ যজ্ঞে ঈশ্বর প্রদত্ত দেহ  ঈশ্বরের উদ্দেশ্যেই হবি (হোমের দ্রব্য) রুপে উতসর্গ করা। এটা সত্যিই চমত্কার ব্যাপার।

জন্মিলেই মরিতে হবে” এ ধ্রুব সত্য। আমরা অস্বীকার করতে পারি না। এ পৃথিবীতে যে কয়টি ধ্রুব সত্য আছে তার মধ্যে অন্যতম হল প্রানীর মৃত্যু। যে প্রানী জন্মগ্রহণ করবে প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী তাকে একসময় না একসময় দেহ ত্যাগ করতে হয়।

এ দেহ ত্যাগের জন্য সনাতন ধর্মের অনুসারিরা বিশ্বাস করে যে, মানুষ মৃত্যুর পর স্বর্গবাসী হয় অথ্যাৎ দেবলোকে যায়। কিন্তু, তিনি স্বর্গে বা দেবলোকে যাবেন কিভাবে?

বৈদিক নিয়ম অনুসারে দেবলোকে বা স্বর্গলোকে পাঠাতে হলে দেবতাদের পুরোহিত অগ্নিতে আহুতি দিতে হয়। অগ্নিদেবই সে অর্চনা বা আহুতি দেবলোকে নিয়ে যান।

তাই যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন তার প্রাণবায়ু অগ্নিদেবকে আহুতি না দিলে তিনি কি করে স্বর্গবাসী হবেন? প্রানবায়ু মুখ দিয়ে বের হয় বলে মুখে অগ্নি সংযোগ করে মন্ত্র পাঠ করতে হয়-

“ওঁ কৃত্বা তু দুষ্কৃতং কর্মং জানতা বাপ্য জানতা ।
মৃত্যুকাল বশং প্রাপ্য নরং পঞ্চত্বমাগতম্
ধর্মাধর্ম সমাযুক্তং লোভ মোহ সমাবৃতম্
দহেয়ং সর্বগাত্রানি দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু” (ক্রিয়াকান্ড বারিধি)

অনুবাদঃ তিনি জেনে বা না জেনে অনেক দুষ্কর্ম করে থাকতে পারেন। কালবশে মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে। এ দেহ ধর্ম, অধর্ম, লোভ, মোহ প্রভৃতি দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। হে অগ্নিদেব, আপনি তার সকল দেহ দগ্ধ করে দিব্যলোকে নিয়ে যান।

চলুন দেখে নিই মুখাগ্নির কারণ গুলোঃ

আধ্যাত্মিক কারণঃ আমরা সনাতন ধর্মের অনুসারিরা পুনর্জন্মে বিশ্বাসী। এই ত্রিতাপদগ্ধ সংসারে পুনরায় জন্মগ্রহন করে মানুষ দুঃখজ্বালা ভোগ করুক এটা কেউ চাই না।

যে দেহে তিনি এতদিন বাস করেছেন, তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন, পৃথিবীর যাবতীয় সুখের স্বাদ তাকে দিয়েছেন সে দেহের প্রতি আকর্ষণ ও মায়া থাকা স্বাভাবিক।

দেহের প্রতি আকর্ষণে পুনঃ দেহ ধারনে তার আকাঙ্ক্ষা জাগতে পারে, ঐ আকাঙ্ক্ষা দূর করার উদ্দেশেই আকর্ষণের বস্তু দেহটিকে পোড়ানো হয়।

বৈজ্ঞানিক কারণঃ মানুষ বিভিন্ন কারনে মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্য রোগে মৃত্যুই সর্বাধিক। এই সকল মৃতদেহে পচন ধরলে পরিবেশে বিভিন্ন রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব চিন্তা থেকেই আর্য ঋষিগণ শব পোড়াবার বিধি দিয়েছেন।

সামাজিক কারণঃ আর্য ঋষিদের ভবিষ্যৎ চিন্তা এতে প্রতিফলিত হয়েছে। মানুষ সৃষ্টি হবে এবং এমন একদিন আসতে পারে যখন স্থানাভাব দেখা দেবে। মানুষের দেহ না পুড়িয়ে মাটিতে পুঁতে রেখে দিলে ক্রমশ মাটিতে রাখার জায়গার অভাব দেখা দিতে পারে। এই কারনেই দেহ পোড়াবার বাবস্থা।

জেনে রাখা ভালো:

পুরুষের মৃত্যু সংবাদ শ্রবণে বলুন–দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু।
নারীর মৃত্যু সংবাদ শ্রবণে বলূন– দিব্যান্ লোকান্ সা গচ্ছতু।

সোর্সঃ sonatonvabona

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.