যেসব নীতি বাক্যের কারণে “চাণক্য নীতি” আমাদের জীবনের পাথেয়!

চাণক্য

ভারতীয় গণমানসের প্রতিচ্ছবি হিসেবে যদি চাণক্য-নীতিকে ধরা হয়, তবে নিঃসন্দেহে তা এক সামূহিক স্মৃতির কথা বলে। ভারতে প্রাচীন কাল থেকে প্রচলিত নৈতিক উপদেশাবলি ‘চাণক্য নীতি’ সত্যিই ‘অর্থশাস্ত্র প্রণেতা কৌটিল্য বিষ্ণুগুপ্ত চাণক্যের লেখা কি না, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পার। কিন্তু এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, ‘চাণক্য নীতি’ নামে পরিচিত নৈতিক উপদেশগুলি যথার্থই প্রাচীন। চাণক্যের এই কর্পোরেট-শাসিত বিশ্বেও দারুণভাবে সচল, একথা অনেকেই বলে থাকেন। আসলে ‘চাণক্য নীতি’ দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা গণস্মৃতির একটি দলিল। এতে যা রয়েছে, তা মানব সভ্যতারই অভিজ্ঞতার ফসল। এই স্মৃতি এই উপমহাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই স্মৃতিই আমাদের কর্তব্য-অকর্তব্যের দিশারী হয়ে দাঁড়ায় কখনও কখনও। তাকে চাণক্য-নীতির মতো আপ্তবাক্যের স্তরে নিয়ে যায় গণচৈতন্যই। চাণক্য যদি এই কথাগুলি না-ও বলে থাকেন, তা হলেও কিছু যায়-আসে না। এই ‘চাণক্য’ আসলে ইতিহাসের নিজস্ব কণ্ঠস্বর।

‘চাণক্য নীতি’-তে বহু সাবধানবাণীই উল্লিখিত রয়েছে। দেখা যাক কী রয়েছে এই সংক্রান্ত উপদেশে। চলুন দেখে নিই চাণক্যের নীতিগুলোর মধ্যে আজ প্রথম পর্ব-

• Rule: “সিংহের ঘুম ভাঙালে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বিপুল।”

• Rule: “সরীসৃপের ঘুম ভাঙালে সমস্যা অনেক। তিতবিরক্ত হতে পারেন তার দ্বারা।”

• Rule: “এইরকম কোনো দেশে কখনোই থাকা উচিত নয়, যেখানে আপনাকে কেউ সম্মান করেনা আর অর্থ উপার্জনেরও সেখানে কোনো সুযোগ থাকেনা”

• Rule: “যেখানে আপনার কোনো বন্ধু নেই অথবা যেখান থেকে আপনি কোনো জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন না, এইরকম জায়গায় মানুষের একদিনও থাকা উচিত নয়”

• Rule: “বুদ্ধিমান ব্যক্তির এই ৫টি জায়গায় যাওয়া উচিত নয়-
১.যেখানে রোজগারের কোনো সুযোগ নেই
২.যেখানকার মানুষদের মধ্যে কোনো ভয়ডর নেই
৩.যেখানকার মানুষদের মধ্যে কোনো লজ্জাবোধ নেই
৪.যেখানে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি বসবাস করেনা
৫.যেখানে মানুষ দান-ধর্মের বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করে”

• Rule: “একটি চাকরের পরীক্ষা তখনই নেওয়া উচিত, যখন সে তার কর্তব্য পালন না করে | আত্মীয়-পরিজনদের চেনা যায় তখনই,যখন আপনার চারিদিকে বিপদ ঘনিয়ে আসবে | একজন বন্ধুকে চিনতে পারবেন সেদিনকে, যেদিন আপনি বিপরীত পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন | আর যখন আপনার সময় ভালো যাবেনা, তখন আপনি আপনার নিজ স্ত্রীকে চিনতে পারবেন”

• Rule: “একজন প্রকৃত বন্ধু হলো সেই- যে আপনার কোনো প্রয়োজনে, আপনার কোনো দুর্ঘটনায়, দুর্ভিক্ষের সময়, যুদ্ধ লাগলে এবং জীবনের শেষ সময়ে পাশে থাকবে”

• Rule: “যেইসব শিক্ষার্থীরা দিনের বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে নষ্ট করে আর প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ঘুমানো পছন্দ করে, সেইসব শিক্ষার্থীরা জীবনে সফল হতে পারেনা এবং তারা বেশিরভাগ কাজ ঠিক মতো করতে অক্ষম হয়”

• Rule: “অলস শিক্ষার্থীরা ঠিক ততটাই জ্ঞান অর্জন করতে পারে, যতটা তাদের পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রয়োজন”

• Rule: “যেইসব শিক্ষার্থীরা সামান্য বিষয়ে রেগে যায়, তাদের মন সর্বদা চঞ্চল থাকে | কারণ জ্ঞান অর্জনের জন্য সর্বপ্রথম মনকে শান্ত করা অতি আবশ্যক”

• Rule: “চঞ্চল মন যেকোনো বিষয়ে সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করার পিছনে সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়”

• Rule: “একজন পন্ডিত ব্যক্তিও ঘোর দুঃখ-কষ্টের স্বীকার হতে পারেন যদি সে, একজন মূর্খ ব্যক্তিকে উপদেশ দেন অথবা কোনো দুষ্ট স্ত্রীর ভরন পোষণে লিপ্ত হন কিংবা কোনো দুঃখী ব্যক্তির সাথে দৈনন্দিন সম্পর্ক স্থাপন করেন”

• Rule: “দুষ্ট স্ত্রী,মিথ্যেবাদী বন্ধু ও বদমাশ চাকরের সঙ্গে থাকা আর কোনো বিষধর সাপের সঙ্গে একত্রে থাকা এক অর্থে মৃত্যুর সমান”

• Rule: “প্রথম ৫ বছর নিজের সন্তানকে স্নেহ দিয়ে লালন করবে, পরবর্তী ১০ বছর তাকে কঠোরভাবে শাসন করবে আর সন্তানের ১৬ বছর পূর্ণ হলে,তাঁর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করবে”

• Rule: “স্বভাবত কেউই আমাদের বন্ধু কিংবা শত্রু হয়না, একমাত্র কাজের দ্বারাই মানুষ আমাদের বন্ধু কিংবা শত্রু হয়”

• Rule: “সাধুগণ সকল জীবকেই তাঁর কৃপা প্রদান করে,এমনকি যাদের সদগুণ নেই তাদেরও | ঠিক যেমন সমাজচ্যুত ব্যক্তির ঘরে আলো বিতরণ করতে চাঁদও বিরত থাকেনা”

• Rule: “বিষের পাত্র থেকে অমৃত,অপবিত্র স্থান থেকে স্বর্ণ,সবচেয়ে নীচ ব্যক্তির কাছ থেকেও জ্ঞান এবং নীচ বংশের পরিবার থেকেও গুণবতী স্ত্রী গ্রহণ করা উচিত”

• Rule: “নখযুক্ত প্রাণী,শিংওয়ালা জন্তু,অস্ত্রধারী ব্যক্তি এবং রাজনীতিবীদকে কখনই বিশ্বাস করতে নেই”

• Rule: “শিশুদের ঘুম ভাঙাতে নেই। কারণ, ঘুমের ভিতরেই তারা বেড়ে ওঠে।”

• Rule: “বোকাদের ঘুমোতে দেওয়াই কাম্য। তারা জেগে থাকলে অনর্থের সম্ভাবনা।”

• Rule: “যার অধিকারে যতটুকু যা আছে,তার সবকিছুই বরং সৎ উদ্দেশ্যে ব্যয় করা উচিত | কারণ মৃত্যুকালে, কেউই তার সম্পদ সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারেনা”

• Rule: “বিদ্যা ও রাজনৈতিক ক্ষমতার কোনো তুলনাও চলেনা | রাজা শুধু নিজের রাজ্যে সম্মানিত হন আর বিদ্যান ব্যক্তি সর্বত্র সম্মানিত হন”

• Rule: “দূর থেকে কোনো সুন্দর পোশাক পরিহিত মূর্খ ব্যক্তিকে ততক্ষণই ভালো দেখায়, যতক্ষণ পর্যন্ত সে কথা না বলে”

• Rule: “শুধু ইচ্ছে করার মাধ্যমে কার্যসিদ্ধি হয়না, হয় প্রচেষ্টার মাধ্যমে | খাদ্য হিসাবে কোনো ঘুমন্ত সিংহের মুখে, বনের প্রাণীরা কিন্তু আপনা-আপনি প্রবেশ করেনা”

• Rule: “চাঁদ নক্ষত্রসমূহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে,একজন সুশাসক পৃথিবীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যেও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে”

• Rule: “জীবনের একটা মুহূর্তও যদি বৃথা ব্যয় হয়, তবে সেটিকে কোটি কোটি স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়েও ফিরে পাওয়া যায়না | সুতরাং বৃথা সময় নষ্ট করার চেয়ে বেশি ক্ষতি আর কি হতে পারে”

• Rule: “দুই ধরনের হিংসুক প্রাণী আছে, যথা সাপ ও সাপের মতোই ক্রূর স্বভাব বিশিষ্ট মানুষ | এরমধ্যে সাপের মতো ক্রূর স্বভাব বিশিষ্ট মানুষ অধিক ভয়ানক”

• Rule: “অতিরিক্ত স্নেহ করার ফলে,সন্তানের অনেক দোষ জন্মায়, কিন্তু কঠোরতার দ্বারা তার সুন্দর চরিত্র গড়ে ওঠে | তাই সন্তান ও শিষ্যের প্রতি কমল নয় কঠোর হও”

• Rule: “দুর্জনের সঙ্গ ত্যাগ করো, সাধু সঙ্গে ভজন করো | দিনরাত সর্বদা পুণ্য কর্মে লিপ্ত থাকো এবং সর্বদা এই জগতের অনিত্যতাকে স্মরণে রেখো”

• Rule: “যেকোনো ব্যক্তিরই আসন্ন বিপদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ধন সঞ্চয় করে রাখা উচিত | আর প্রয়োজন পরলে সেই ধন-সম্পত্তি ত্যাগ করে নিজের স্ত্রীর সুরক্ষা করা,একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির প্রধান ধর্ম”

• Rule: “দুর্জন ব্যক্তি বিদ্যান হলেও যেকোনো মূল্যে তাকে এড়িয়ে চলা উচিত,কারন মণিভূষিত বিষাক্ত সাপও অধিক ভয়ঙ্কর হয়ে থাকে”

• Rule: “যে পরের স্ত্রীকে মায়ের মতো, পরের দ্রব্যকে মাটির ঢেলার মতো এবং সমস্ত জীবকে নিজের মতো দর্শন করেন, তিনিই হলেন প্রকৃত পন্ডিত”

• Rule: “মহৎ গুনের দ্বারা মানুষ মহৎ হয়, শুধু উচ্চপদ অধিকার করে নয়”

• Rule: “সাপকে কখনও জাগাতে নেই। কারণ, ঘুম ভাঙলেই সে ছোবল মারতে পারে।”

• Rule: “ঘুমন্ত রাজার ঘুম কখনও ভাঙাতে নেই। তা হলে রাজরোষে পড়তে হয়।”

• Rule: “ভবিষ্যতে বিপদ আসতেই পারে,সেই কথা মাথায় রেখে প্রত্যেকটা মানুষেরই অর্থ সঞ্চয় করা উচিত | এটা কখনই ভাবা উচিত নয় যে, কোনো ধনবান ব্যক্তির জীবনে বিপদ আসতে পারেনা | যখন আপনার পর্যাপ্ত ধন শেষ হয়ে যাবে, তখন সঞ্চিত ধন-সম্পত্তির পরিমান দ্রুত গতিতে হ্রাস পেতে শুরু করবে”

• Rule: “একজন শিক্ষার্থীর কখনই ক্রোধ প্রকাশ করা উচিত নয়, কারণ ক্রোধের বশে মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম হয়ে পরে | তাই যেইসব বিষয় থেকে ক্রোধ হতে পারে, সেইসব বিষয়কে এড়িয়ে চলা উচিত”

• Rule: “একজন শিক্ষার্থীর কখনই কোনো মূর্খ ব্যক্তির সাথে বেশি কথাবার্তা বলা উচিত নয়, কারন একজন মূর্খ ব্যক্তির জ্ঞান খুবই সামান্য থাকে একজন বিদ্যান ব্যক্তির তুলনায়”

• Rule: “যদি কোনো শিক্ষার্থী অন্য কোনো মূর্খ ব্যক্তিকে জ্ঞানের পাঠ পড়াতে যায়, তাহলে সেটা তার সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয় | তাই মূর্খ ব্যক্তিদের সহিত দূরত্ব বজায় রাখা একজন শিক্ষার্থীর প্রধান ধর্ম হওয়া উচিত”

• Rule: “ছাত্র বা ছাত্রীর কোনো জিনিসের উপর অতিরিক্ত লোভ করা উচিত নয় | কারণ কোনো জিনিসের উপর লোভ করলে সেই শিক্ষার্থী সর্বদা সেই জিনিসটিকে পাওয়ার জন্য নানাবিধ পরিকল্পনা করতে থাকে, যারফলে সেই ছাত্র বা ছাত্রীর বিদ্যা অর্জনে বাঁধার সৃষ্টি হয়”

• Rule: “একজন শিক্ষার্থীর প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত বিনোদনে লিপ্ত থাকা উচিত নয়, কারন অতিরিক্ত বিনোদনের প্রভাব ক্ষতিকারক হতে পারে | তাই যতটা বিনোদন একটা শিক্ষার্থীর পক্ষে প্রয়োজন, ঠিক ততটাই বিনোদন করা উচিত নিজেকে”

• Rule: “একজন শিক্ষার্থীর কাম বাসনা থেকে সর্বদা দূরে থাকা উচিত | কারন কামের মায়াজালে জড়িয়ে গেলে শিক্ষার্থী, জ্ঞান ও অধ্যয়নের সময় মনোনিবেশ করতে পারেনা এবং মন সর্বদা কাম বাসনার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে”

• Rule: “সদগুণ সম্পন্ন একজন পুত্র,অযোগ্য শত শত পুত্রের চেয়ে অনেক শ্রেয় | কারণ রাতের আকাশে একটিমাত্র চাঁদই কিন্তু আকাশের সমস্ত অন্ধকারকে দূর করতে পারে”

• Rule: “ঋণগ্রহনকারী পিতা, অসতী মাতা, অধিক সুন্দরী স্ত্রী এবং অজ্ঞ পুত্র, পারিবারিক জীবনের এক বড় শত্রু”

• Rule: “অগ্নি,শত্রু ও রোগব্যাধি সম্পূর্ণ নির্মূল করা উচিত নাহলে অন্যথায় তা বাড়তেই থাকবে”

• Rule: “মহৎ ব্যক্তির আচরণ বড়ই বিস্ময়কর, ধন-সম্পদকে এরা গ্রাহ্যই করেনা কিন্তু এটিকে তারা দায়ভার হিসাবে গ্রহণ করেন”

 

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.