যে কারণে অশ্বিনী কুমারদ্বয়ের ব্রত পালন করা হয়!

বারো মাসে তেরো পার্বনের দেশ বাংলাদেশ। আশ্বিন মাসের শেষদিন ও কার্তিক মাসের প্রথম দিন ঘিরে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রচলিত আছে এমন এক পার্বনের, যার নাম জলবিষুব সংক্রান্তি। এই পার্বন উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা করেন অশ্বিনী কুমারের ব্রত। এই ব্রত ‘ব্রতের ভাতের পূজা’ নামেও পরিচিত।

অশ্বিনী কুমার ব্রত পূজো চলিত বাংলায় যাকে আমরা বলে থাকি-“ব্রতের ভাত”। আশ্বিন মাসের শেষ দিন আর কার্তিক মাসের প্রথম দিন, এই দুদিন মিলিয়ে এই পুজোর আয়োজন করা হয়। আজ তাই বাঙ্গালী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি বহুল প্রচলিত এবং মজার একটি দিন।

যা আমাদের কাছে ব্রতের পুজায় ব্রতের ভাত খাওয়ার দিন তথা ‘অশ্বিনী কুমার ব্রত’ নামে পরিচিত। মূলত ঘরের মহিলারা এই পূজোটি করে থাকেন সন্তান, স্বামী ও পরিবারের বাকী সদস্যদের দীর্ঘায়ু, সুস্হজীবন ও মঙ্গল কামনায়। ব্রতের ভাত,কলা আর নারকেলের পুর দিয়ে অদ্ভুত এক কম্বিনেশন যা ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে সকলেই পছন্দ করে থাকেন।

নামকরন:অশ্বিনী (অশ্ব রূপিণী সূর্যপত্নী সংজ্ঞা) এবং তাঁর কুমার (পুত্র)। এই অর্থে অশ্বিনীকুমার।

স্বর্গের চিকিৎসক। এঁর পিতার নাম সূর্য ও মাতার নাম সংজ্ঞা। সংজ্ঞা সূর্যের অসহ্য তেজ সহ্য করতে না পেরে, সূর্যকে দেখলে চোখ নামিয়ে ফেলতেন। এই জন্য সূর্য ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দেন যে, সংজ্ঞা তাঁর চক্ষু সংযমন করার জন্য প্রজাদের সংযমনকারী যম-কে প্রসব করবেন।

এরপর এই অভিশাপের সূত্র সংজ্ঞা মৃত্যু দেবতা যমকে প্রসব করেন। এরপর তিনি অত্যন্ত ভীতা হয়ে চপলভাবে সূর্যের দিকে দৃষ্টিপাত করতে লাগলেন। তাঁর এই চপল চক্ষু দেখে সূর্য বললেন যে, তিনি চঞ্চলস্বভাবা একটি নদী প্রসব করার অভিশাপ দেন। এই অভিশাপের সূত্রে সংজ্ঞা, যমী নামক কন্যার জন্ম দেন।

এই কন্যা যমুনা নামে প্রবাহিত হয়। এই কারণে যমী’কে অনেক সময় যমুনা বলা হয়। যম ও যমী (যমুনা) জন্মের পর, স্বামীর রূপ ও ক্রোধ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, ইনি নিজের অনুরূপ ছায়া নামক এক নারীকে সৃষ্টি করেন। এরপর সূর্য ও নিজের পুত্র-কন্যার পরিচর্যার ভার ছায়ার উপর অর্পণ করে, পিতৃগৃহে যান। কিন্তু সংজ্ঞার পিতা বিশ্বকর্মা অসন্তুষ্ট হয়ে কন্যাকে সূর্যের কাছে ফিরে যেতে বলেন।

এরপর ইনি স্বামীর কাছে না গিয়ে উত্তর কুরুবর্ষে ঘোটকীর রূপ ধারণ করে ভ্রমণ করতে থাকেন। ছায়া নিজের সন্তানদের মত সংজ্ঞার সন্তানদের প্রতিপালন করতেন না। এতে যম একদিন ক্রুদ্ধ হয়ে ছায়াকে পদাঘাত করতে উদ্যত হয়েও পরমুহূর্তেই যম ছায়ার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু ছায়া ক্ষমা না করে যমকে অভিশাপ দিলেন যে, তাঁর পা খসে যাবে।

যম পিতার কাছে গিয়ে বিমাতার এই ব্যবহারের কথা বলেন। সুর্য নিজ পুত্র যমকে অভিশাপ থেকে মুক্ত না করে বলেন যে, তাঁর পায়ের মাংস নিয়ে কৃমিরা মাটিতে প্রবেশ করবে। এরপর যম, সংজ্ঞা যে তাঁর আপন মা নয়― সে কথা সূর্যকে জানালেন। সমস্ত বিবরণ গোপন রেখে ছলনা করবার জন্য সূর্য ছায়াকে অভিশাপ দিতে উদ্যত হলে, ছায়া সমস্ত কথা স্বীকার করে, সংজ্ঞার পিতৃগৃহে গমনের সমস্ত সংবাদ সূর্যকে বলে দেন।

এরপর সূর্য বিশ্বকর্মা’র কাছে গিয়ে, তাঁর স্ত্রীর (সংজ্ঞা) গৃহত্যাগের কারণ জানতে পারেন। এরপর সূর্য সমাধিস্থ হয়ে সংজ্ঞার অবস্থান এবং অশ্বীরূপ সম্পর্কে জানতে পারলেন। এরপর সূর্য বিশ্বকর্মা’র কাছে গিয়ে নিজের তেজ কমিয়ে অশ্বরূপ ধারণ করে ঘোটকীরূপিণী সংজ্ঞার সাথে মিলিত হলেন। এই মিলনের ফলে প্রথমে যুগল দেবতা অশ্বিনীকুমারদ্বয় ও পরে রেবন্তের জন্ম হয়। ―মার্কেণ্ডেয় পুরাণ, বৈবস্বত ও সাবর্ণির উপখ্যান।

এই মিলনের ফলে প্রথমে যুগল দেবতা অশ্বিনীকুমারদ্বয় ও পরে রেবন্তের জন্ম হয়। অশ্বিনী কুমারদ্বয় নামে খ্যাত পরবর্তী সময়ে এরা চিকিৎসাবিদ্যায় সুপণ্ডিত হয়ে উঠলে– স্বর্গবৈদ্য উপাধিতে ভূষিত হন। চিকিৎসা বিষয়ক এদের রচিত গ্রন্থের নাম হলো চিকিৎসা-সার-তত্ত্ব।

অশ্বিনী কুমারদ্বয় হলেন- নাসত‍্য ও দস্র। ঋগ্বেদ এবং সংস্কৃত সাহিত‍্যেও অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের নাম এসেছে। মহাভারতের আদিপর্বের পৌষ‍্যপর্বাধ‍্যায়ে উপমন‍্যোপাখ‍্যানে দেব-চিকিৎসক হিসাবে তাদের ভূমিকার কথা জানা যায়। আশ্বিন সংক্রান্তির রাতে সারারাত জেগে বিশেষ খাবার তৈরি করেন বাড়ির নারীরা। এর মধ্যে অন্যতম গুড়মিশ্রিত নারিকেল।

কার্তিকের সকালে সেই নারিকেল ও বাংলা কলা দিয়ে পূজায় নিবেদন করা পান্তা ভাত খাওয়া হয়। কার্তিক একসময় ছিল অভাবের মাস। সেই মাসের প্রথম দিনের সকালে সন্তানকে ভালোমন্দ খাইয়ে মায়েরা আশা করতেন- ‘পুরো বছরটা ভালো যাবে, সন্তান থাকবে দুধে ভাতে। ভক্তি সহকারে ব্রতের ভাত খাওয়ার ফলে রোগমুক্তি হয়।

এই পূজাতে বিভিন্ন অঞ্চলে এই সময়টাতে ১৩/২১ বেজোড় সংখ্যার চাল-ডাল, শাপলার ডগা, কাচা কলা, পেঁপে ও নানান সবজি মিলিয়ে রান্না করা হয়। মোমবাতি বা কুপির আলোকশিখার ওপর কলাপাতা রেখে দেওয়া হয়। সকালে কলাপাতায় জমে থাকা কালি ছোটদের কপালে টিপ আকারে লাগিয়ে দেওয়া হতো, যেন কারও খারাপ দৃষ্টি না পড়ে। কালক্রমে এসব সংস্কৃতি এখন বিলুপ্তির পথে।

এখন মূল কাহিনী হল যে বর চাই সেই বর কেন পাই ?
ঘোটকী রূপিণী সংজ্ঞার সাথে মিলনের পর উভয় পুনরায় আপন রুপে ফিরে আসে তখন গর্ভস্থায় ঘোটক রুপী মিলনের যে সন্তান তা অবশ্যই ঘোটক রুপে হবে , তাই শংকিত হয়ে দিকবেদিক ছুটছে সংজ্ঞা। অবশেষে বিশ্বকর্মা বলল এর এক মাত্র উপায় বলতে পারবেন মহাদেব । পুত্রী তুমি মহাদেবের নিকট গমন কর।

সংজ্ঞা মহাদেবের নিকট গিয়ে সমস্ত বিবরণ বললে , মহাদেব বলেন এর উপায় আমার জানা নেই কারন আমি পুরুষ , নারী সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য তুমি বরং তোমার মাতা পাবর্তীর নিকট যাও। সংজ্ঞা পাবর্তীর নিকট গিয়ে সবিষয়ে বললে পাবর্তী এক মুষ্টি চাউল প্রদান করে বলল এই অন্ন রন্ধন করবে আশ্বিন মাসের শেষ তারিখে পূর্ব রাত্রে শেষ দিবস রেখে ভক্তি পূর্বক মহাদেবের আচর্না করবে এবং কার্ত্তিক মাসের ১ম দিবসে মনে মনে তোমার চাওয়া সংকল্পক করে ভক্ষণ করবে। তাহলে তোমার মনস্কামনা পূর্ণ হবে। টিক তাই করল দেবী সংজ্ঞা এবং মহাদেব ও মাতা পার্বতীর আর্শিবাদে সূর্য্য ও সংজ্ঞা মানুষ আপন রুপী পুত্র দ্বয়ের পিতা মাতা হন। এই জন্য বলা হয় যে বর মাগে সেই বর পাই।

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.