বিভিন্ন পৌরাণিক সূত্র অনুযায়ী দুর্বাসা-ইন্দ্র সাক্ষাতই অনুঘটক ছিল সমুদ্রমন্থনের | একদিন ভ্রমণ করছিলেন দুর্বাসা | সাক্ষাত্ হল অপ্সরা বিদ্যাধরীর সঙ্গে | অপ্সরার কণ্ঠে এক অপূর্ব পুষ্পহার দেখে মুগ্ধ হলেন দুর্বাসা | স্বর্গীয় সেই কণ্ঠহার তাঁকে দিয়ে দিলেন অপ্সরা | ওটা গলায় পরেই পদব্রজে এগোচ্ছিলেন ঋষি | এ বার দেখা হল ঐরাবতে আসীন দেবরাজ ইন্দ্রর সঙ্গে | তাঁকে ওই কণ্ঠহার উপহার দিলেন দুর্বাসা |
কোথায় রাখবেন বুঝে না পেয়ে সেটা ঐরাবতের মাথায় রাখলেন ইন্দ্র | এদিকে ফুলের গন্ধ মোটেও ভাল লাগল না ঐরাবতের | সে মাথা ঝাঁকিয়ে ফেলে দিল পুষ্পহার | পা দিয়ে পিষ্ট করে দিল সেটা | তাঁর দেওয়া উপহারের এই পরিণতি দেখে দুর্বাসা তো সীমাহীনভাবে ক্ষুব্ধ | তিনি অভিশাপ দিলেন যে একদিন স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত হবেন ইন্দ্র | দেবরাজের বহু অনুনয়েও কাজ হল না |
দ্রবীভূত হল না দুর্বাসার মন | সত্যি তাঁর অভিশাপে স্বর্গ থেকে দেবতাদের বিতাড়িত করল অসুররা | উপায় না দেখে ব্রহ্মার পরামর্শে বিষ্ণুর কাছে গেলেন দেবতারা | তখন বিষ্ণু পরামর্শ দিলেন সমুদ্রমন্থন করে অমৃতকুম্ভ তুলে আনতে | ফলে কার্যত দুর্বাসার অভিশাপেই অমরত্ব পেয়েছিলেন দেবতারা |
দেবমাতা অদিতি ও বিষ্ণুঃ
পুত্র ইন্দ্রকে বিমর্ষ দেখে ব্যাকুল হলেন অদিতি | জানতে চাইলেন কারণ | সব শুনে আশ্বাস দিলেন‚ পুত্রের সিংহাসন ফিরিয়ে দিতে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করবেন | কোনও পথ না পেয়ে দেবমাতা অদিতি বিষ্ণুর শরণাপন্ন হলেন | ভগবানকে তিনি বললেন‚”বালী হয়তো যোগ্য | কিন্তু তারপর? বংশানুক্রমিক ভাবে স্বর্গরাজ অসুরদের করায়ত্ত হয়ে গেলে তো রসাতলে যাবে | বৎস , তুমি ছাড়া ত আমার ছেলেদের আর স্বর্গরাজ্য ফিরে পাওয়ার উপায় দেখছি না ।
তুমি একটা উপায় কর ।” এবার বালীর কাছ থেকে সিংহাসন ইন্দ্রকে ফিরিয়ে দিতে রাজি হলেন বিষ্ণু | বিষ্ণু বললেন- “মা , প্রতিকার করবার জন্য তোমার গর্ভেই আমি একবার জন্ম নেব । তুমি নিশ্চিন্ত হয়ে যাও । এবার আমি বামন হয়ে জন্মাব । ” শ্রীবিষ্ণু অদিতির গর্ভে বামনরূপে জন্ম নিলেন । ঋষি কশ্যপ এবং অদিতির ঘরে জন্ম নিল এক পুত্রসন্তান | ঘোর কৃষ্ণবর্ণ‚ কিন্তু মুখের হাসি স্বর্গীয় | দেবোপম সেই শিশু কিন্তু বড় হল খর্বকায় রূপেই | তিনি দ্বাদশ আদিত্যের অন্যতম। ইনি ইন্দ্রের কনিষ্ঠ ভ্রাতা রূপেও পরিচিত।
সোর্সঃ সংগৃহিত