প্রতিবছরের ন্যায় এই বছরও জন্মাষ্টমী পালিত হবে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি এই উৎসবের মাধ্যমে পালিত হয়। পুরাণ মতে, শ্রীবিষ্ণুর অষ্টম অবতার হিসাবে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। বিশ্বে যখনই হিংসা, নিষ্ঠুরতা ও খারাপ কাজকর্ম বেড়ে যায় ভগবান বিষ্ণু তখনই মানব অবতারে পৃথিবীতে এসে তাঁর ভক্তদের রক্ষা করেন। মথুরায় দেবকি ও বাসুদেবের সন্তানরূপে জন্মগ্রহণ করে কৃষ্ণ। অত্যাচারী মামা কংসের হাত থেকে রক্ষা করতে বাসুদেব তাঁকে বৃন্দাবনে নিজের বন্ধু নন্দ ও যশোদার কাছে রেখে আসেন। দেবকি ও বাসুদেবের বিয়ের দিনেই দৈববানীর মারফৎ কংস জানতে পারে তাঁদের অষ্টম সন্তানই হবে কংসের মৃত্যুর কারণ। এরপর দেবকি ও বাসুদেবকে আটক করে কংস এবং একে একে তাঁদের সব সন্তানকে জন্মমাত্রই হত্যা করে। কোনওক্রমে কৃষ্ণ বেঁচে যায় এবং পরবর্তীকালে কংসকে হত্যা করে তাঁর অত্যাচারের হাত থেকে রাজ্যের প্রজাদের রক্ষা করে।
বৃন্দাবনে বেড়ে ওঠার সময় কৃষ্ণ ও তাঁর বন্ধুরা গ্রামের বিভিন্ন মানুষদের সঙ্গে নানা রকম মজার কাজকর্ম করতো, তা সত্ত্বেও গ্রামের সকলের অত্যন্ত প্রিয় পাত্র ছিল কৃষ্ণ। ছোট্ট কৃষ্ণকে মাখন চোর নামে ডাকা হত। একবার কৃষ্ণ নিজের ছোট্ট আঙ্গুলে করে গোবর্ধন পর্বত তুলে গ্রামবাসীকে রক্ষা করেছিল। পুরাণ অনুযায়ী তারপর থেকেই কৃষ্ণের জন্মতিথিতে ছাপ্পান্ন ভোগ বা প্রসাদ নিবেদনের রীতি প্রচলিত হয়েছে। জন্মাষ্টমী ও গোবর্ধন পুজো উপলক্ষে ভক্তরা কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে ছাপ্পান্ন ভোগ উৎসর্গ করে। কিন্তু ছাপ্পান্ন ভোগ কেন? অন্য কিছুই বা নয় কেন? চলুন খুঁজে নেওয়া যাক ছাপ্পান্ন ভোগের তাৎপর্য।
ছাপ্পান্ন ভোগের তাৎপর্য এবং ছাপ্পান্ন পদ থাকার কারণঃ
হিন্দু শাস্ত্র মতে বৃন্দাবন অরণ্যে বসবাসকারী মানুষ ভগবান ইন্দ্রকে সুস্বাদু খাদ্য উৎসর্গ করতো- যাতে বছরে সময় মতো বৃষ্টিপাত এবং ফসলের ভাল ফলন হয় ইন্দ্রদেব তাঁদের আশীর্বাদ করেন। ছোট্ট কৃষ্ণের মনে হয় গরিব কৃষকদের পক্ষে এই রীতিটা মেনে চলা কষ্টকর। তিনি গ্রামবাসীদের অনুরোধ করেন ইন্দ্রদেবকে তুষ্ট না করে নিজেদের খেয়াল রাখতে। এরপর ইন্দ্রদেব রেগে যান এবং বৃন্দাবনে প্রবল বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত হয়। বেশ কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হওয়ায় বন্যা দেখা দেয়। গ্রামবাসীরা কৃষ্ণকে অনুরোধ করেন তাঁদের প্রাণ রক্ষা করতে। কৃষ্ণ তখন সকলকে গোবর্ধন পর্বতের কাছে জমা হতে বলেন। সকলে উপস্থিত হলে কৃষ্ণ নিজের আঙ্গুলে গোবর্ধন পর্বত তুলে নেন এবং সকলকে পর্বতের নিচে আশ্রয় দেন। এরপর টানা সাতদিন প্রবল বৃষ্টিপাত হয় এবং কৃষ্ণ আঙ্গুলে করে গোবর্ধন পর্বত ধরে রাখেন।
ওই সাতদিনে কৃষ্ণ কোথাও নড়াচড়া করেননি এবং ছিটেফোঁটা খাদ্যগ্রহণও করেননি। শেষমেশ ভগবান ইন্দ্র বৃন্দাবনে বৃষ্টি বন্ধ করেন। শোনা গেছে শ্রীকৃষ্ণ দিনে আটবার খাদ্যগ্রহণ করতেন। বৃষ্টি থামার পর গ্রামবাসীরা সকলে কৃতজ্ঞতাবশত কৃষ্ণের জন্য ছাপ্পান্ন রকমের (সাত দিনের আট রকমের খাবার) খাবার তৈরি করে নিয়ে আসেন।
ভারতীয়দের কাছে জন্মাষ্টমী এক উল্লেখযোগ্য উৎসব। অনেক ভক্তই এই দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বিভিন্ন রকম ভোগ প্রসাদের জন্য তৈরি করেন। ছাপ্পান্ন ভোগে মাখন মিশ্রি, পায়েস, রসগোল্লা, জিরে লাড্ডু, জিলিপি, রাবড়ি, মাঠ্রি, মালপোয়া, মোহনভোগ, চাটনী, মোরোব্বা, শাক, দই, ভাত, ডাল, তরকারি, ঘেভর, ছিলা, পাপড়, মুগ ডালের হালুয়া, পকোড়া, খিচুড়ি, বেগুনের তরকারি, লাউয়ের তরকারি, লুচি, বাদাম দুধ, টিক্কা, কাজু, আমন্ড বাদাম, পেস্তা, এলাচ ইত্যাদি খাবার থাকে। নির্দিষ্ট রীতি অবলম্বনে এই খাবারগুলো পরিবেশন করা হয়। প্রথমে দুধের তৈরি জিনিস, তারপর নোনতা এবং সবশেষে থাকে মিষ্টি।
সকলকে জানাই জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা!
সোর্সঃ ndtv