যে কারণে প্রায় নির্দিষ্ট দিনেই হয় বিশ্বকর্মার পূজা!

বিশ্বকর্মা পুজো মানেই দুর্গাপুজোর ঘণ্টা বেজে গেল। আকাশে ঘুড়ির মেলা মন নিয়ে যায় সেই ছোটবেলায়। দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার আরাধনা যেন এই বঙ্গভূমিতে নিয়ে আসে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উত্‍সব দুর্গাপুজোর আগমন বার্তা।

সাধারণত বেশিরভাগ কলকারখানায় বিশ্বকর্মার পুজো হলেও এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে ঘুড়ি উত্‍সব। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ঘুড়ি না ওড়ালে যেন সবটাই ফাঁকা ফাঁকা লাগে। এই জেট যুগে বিশ্বকর্মা পুজোয় আকাশে ঘুড়ির মেলা কমে এলেও ভো-কাট্টার নির্মল আনন্দ এখনও আকর্ষণ করে ছেলে-বুড়ো সবাইকেই।

বিশ্বকর্মা লঙ্কা নগরীর নির্মাতা। তিনি বিশ্বভুবন নির্মাণ করেন। বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিব এর ত্রিশূল, কুবের এর অস্ত্র, ইন্দ্রের বজ্র, কার্তিকেয়র শক্তি প্রভৃতি তিনি তৈরি করেছেন। শ্রীক্ষেত্র বা পুরীর প্রসিদ্ধ জগন্নাথ মূর্তিও তিনি নির্মাণ করেছেন। বিশ্বকর্মাকে বিশ্বের প্রথম স্থপতিকারও বলা হয়ে থাকে।

ছোটবেলা থেকেই দুর্গাপুজোর আগমন ঘণ্টা হিসেবে জড়িয়ে আছে বিশ্বকর্মা পুজো। তখন থেকেই বিশ্বকর্মা পুজো ঘিরে একটা প্রশ্ন মনে বারবার উঁকি মেরেছে। তা হল, অন্য সব দেব-দেবীর তিথি মেনে হওয়ায় ক্যালেন্ডারে কোনও নির্দিষ্ট দিন না থাকলেও কেন বিশ্বকর্মা পুজো প্রায় প্রতি বছর ১৭ সেপ্টেম্বর উদযাপিত হয়?

বিদ্যার দেবী সরস্বতী, অর্থের দেবী লক্ষ্মী বা শক্তির দেবী দুর্গা-কালী সবার পুজোরই কোনও বাঁধাধরা তারিখ নেই। কিন্তু শিল্পের দেব বিশ্বকর্মার পুজো মানেই ১৭ সেপ্টেম্বর। ইংরাজি ক্যালেন্ডারে এই দিনটি কেন স্থির তা জানতে একটু পঞ্জিকা উলটে দেখতে হবে।

আসলে হিন্দু ধর্মে সব দেব-দেবীর পুজোর তিথি স্থির হয় চাঁদের গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। এ বিষয়ে চান্দ্র পঞ্জিকা অনুসরণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু বিশ্বকর্মার পুজোর তিথি স্থির হয় সূর্যের গতিপ্রকৃতির উপর ভিত্তি করে। ভাদ্রমাসের সংক্রান্তির দিন বিশ্বকর্মার পুজা করা হয়।

সূর্য সিংহ থেকে কন্যা রাশিতে প্রবেশ করে

সূর্য নিয়ম মেনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন কন্যা রাশিতে। আকাশে ইতিমধ্যেই রঙীন ঘুড়ি ভিড় জড়ো হয়েছে, যা জানান দিচ্ছে বিশ্বকর্মা পুজো নিকটে। যখন সূর্য সিংহ রাশি থেকে কন্যা রাশিতে গমন করে, তখনই সময় আসে উত্তরায়ণের। দেবতারা নিদ্রা থেকে জেগে ওঠেন এবং শুরু হয় বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজন।

হিন্দু পঞ্জিকার দুই প্রধান শাখা সূর্যসিদ্ধান্ত এবং বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত- উভয়েই এ বিষয়ে একমত। আসলে বিশ্বকর্মার পুজো দিন ভাদ্র মাসের শেষ তারিখে নির্ধারিত। এই ভাদ্র সংক্রান্তির আগে বাংলা পঞ্জিকায় পাঁচটি মাসের উল্লেখ মেলে। এই পাঁচটি মাসের দিন সংখ্যাও প্রায় বাঁধাধরাই- সাকুল্যে ১৫৬টি দিন!

এই নিয়ম ধরে বিশ্বকর্মা পুজোর যে বাংলা পঞ্জিকা মতে তারিখটি বেরোয়, তা ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ১৭ সেপ্টেম্বরেই পড়ে। কোনও কোনও বছরে এই পাঁচ মাসের মধ্যে কোনওটা যদি ২৯ বা ৩২ দিনের হয়, একমাত্র তখনই বিশ্বকর্মা পুজোর দিন পিছিয়ে বা এগিয়ে যায়। তবে তা খুবই ব্যতিক্রমী ঘটনা।

প্রতি বছর কেন একই দিনে পড়ে বিশ্বকর্মা পুজো?

হিন্দু ধর্মে সব দেব -দেবীর পুজোর তিথি স্থির হয় চন্দ্রের গতি প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে। কিন্তু শুধুমাত্র বিশ্বকর্মা পুজোর তিথি স্থির করা হয়, সূর্যের গতি প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। যখন সূর্য সিংহ রাশি থেকে কন্যা রাশিতে গমন করে, তখন সময় আসে এই উত্তরায়ণের। মনে করা হয়, সেই সময়ই দেবতারা নিদ্রা থেকে জেগে ওঠেন এবং বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজন করা হয়। শুধু তাই নয়, হিন্দু পঞ্জিকার দুই মত- সূর্য সিদ্ধান্ত এবং বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত উভয়ই এই পুজোর ক্ষেত্রে একমত।

এই বিশেষ দিনটি ভারতীয় সৌর বর্ষপঞ্জি এবং বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসের শেষ দিন। এই ভাদ্র সংক্রান্তির আগেই বাংলা পঞ্জিকাতে ৫ মাসের উল্লেখ মেলে, যার দিন সংখ্যা মোট ১৫৬ দিন। তাই বিশ্বকর্মা পুজোর বাংলা তারিখটি, ইংরাজি ক্যালেন্ডারে ১৭ সেপ্টেম্বর পড়ে।

বিশ্বকর্মা পুজোর তারিখের পরিবর্তন হয়?

কোনও কোনও বছর, উল্লেখিত ৫ মাসের মধ্যে যদি ২৯ কিংবা ৩২ দিন থাকে কোনও মাসে, একমাত্র সেক্ষেত্রে বিশ্বকর্মা পুজোর তারিখ পরিবর্তন হয়। তবে সেটি খুবই ব্যতিক্রমী ঘটনা। ২০১৯ সালে বিশ্বকর্মা পুজো উদযাপিত হয়েছিল ১৮ সেপ্টেম্বর।

আকাশ রঙিন হয়ে উঠবে ঘুড়ির সম্ভারে। আসন্ন উত্‍সবের সূচনার বার্তা নিয়ে আসছে তারা।

শুধু কলকারাখানা, শিল্পক্ষেত্র নয়, অনেক বাড়িতেও বিশ্বকর্মা পুজো করা হয়। এই বিশেষ দিন পুজোর পর রকমারি খাওয়া দাওয়ায় মেতে ওঠেন সকলে। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন সমবেতভাবে ঘুড়ি ওড়ানো রীতি রয়েছে। এছাড়াও এই পুজোর আগের দিন পশ্চিমবাংলার লোকেরা আদী বাসিন্দারা অর্থাৎ এদেশীয়রা সাড়া রাত জেগে রান্না পুজো করেন। এটিও বাঙালিদের একটি জনপ্রিয় পার্বণ।

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.