পেঁচক মা লক্ষ্মীর বাহন । ধান হল লক্ষ্মীর প্রতীক । চাল , অন্ন , খাদ্যশস্য হল লক্ষ্মীর প্রতীক । তাই যারা খাদ্য অপচয় করেন , তাঁদের ওপর দেবী লক্ষ্মী কখনোই তুষ্ট হন না । ধানক্ষেতের আশেপাশে মূষিক এর বাস ।
এবং এরা ধানের ক্ষতি করে থাকে । পেঁচক এর আহার হল এই মূষিক । গোলাঘর কে লক্ষ্মীর প্রতীক বলা হয় । গোলাঘরের আশেপাশে মূষিক কূলের নিবাস । পেচক এই মূষিক দের ভক্ষণ করে খাদ্যশস্য কে রক্ষা করে । তাই এদিক থেকে পেঁচক মা লক্ষ্মীর বাহন হিসাবে যথার্থ মানানসই ।
পেঁচক দিনে অন্ধ । সে রাত্রে জাগে । তাই আমরা যেনো পরধন সমন্ধে তেমন অন্ধ হই । কখনো যেনো অন্যের ধন আত্মস্যাৎ করার ইচ্ছা মনে না জাগে ?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন –
“যা নিশা সর্বভূতানাং সা নিশা জাগরতি সংযমী ।
যস্যাং জাগ্রতি ভূতানি সা নিশা পশাতো মুনেঃ ।। “
অর্থাৎ সর্ব ভূতের যা রাত্রি , সংযমীর পক্ষে তা দিন । তাঁদের যা দিন , তাঁর তা রাত্রি । সকল প্রানী পরমার্থ বিষয়ে নিদ্রিত কিন্তু বিষয়ভোগে জাগ্রত । কিন্তু সংযমী সাধু যোগী পরমার্থ বিষয়ে জাগ্রত , বিষয়ভোগে নিদ্রিত ।
দেখা যায় দিবাকালে অন্য প্রাণীরা যখন জাগ্রত পেচক তখন নিদ্রিত । পেচক নিশাচর । নিশীথের নিস্তব্ধ পরিবেশ সাধুদের সাধনার অনুকূল । তাই পেচক আমেদের পরমার্থ চিন্তার আদর্শ সেখায় , যার মাধ্যমে আমরা দেবীর কৃপা পেতে পারি ।
লক্ষ্মীর আর এক নাম শ্রী, সম্পদ । তাই ছন্নছাড়া জীবনযাপনকারীকে লক্ষ্মীছাড়া বলা হয় । আবার সাজানো গোছানো বাড়ি-ঘর দেখে তবেই লোকে বাড়ির গৃহিণীকে লক্ষ্মীমন্ত বলেন । আর এর বিপরীত হলেই লক্ষ্মীছাড়া বা অলক্ষ্মী ।
এই অলক্ষ্মী ও লক্ষ্মীর সহাবস্থান কখনই সম্ভব নয় । তাই অলক্ষ্মী যাকে আশ্রয় করেন, লক্ষ্মী তাঁকে ত্যাগ করেন । এই জন্য দীপান্বিতায় যে লক্ষ্মী পুজো হয় তখন প্রথমে অলক্ষ্মীকে গোবর দিয়ে তৈরি করে বাড়ির বাইরে ফেলে আসা হয় । তারপর শুরু হয় লক্ষ্মীপুজো । একেই সাধারণভাবে লক্ষ্মী-অলক্ষ্মী পুজো বলে ।
ভারতে লক্ষ্মীপুজোর ইতিহাস বহু প্রাচীন। ঋগ্বেদে লক্ষ্মীর কোনও সরাসরি উল্লেখ না থাকলেও শ্রী শব্দের উল্লেখ রয়েছে বেশ কয়েকবার। এখানে শ্রী অর্থে সৌন্দর্যের আধার। যদিও পরবর্তী কালে শ্রীসুক্তে অবশ্য উল্লেখ রয়েছে শ্রী নামক এক দেবীর, যিনি পদ্মের উপর দণ্ডায়মান।
সেই আদি যুগ থেকেই লক্ষ্মীর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে পদ্ম। তাই তিনি পদ্মাসনা, পদ্মালয়া। যুগ যুগ ধরে লক্ষ্মীকে বিভিন্ন রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। শুক্ল যজুর্বেদে শ্রী তথা লক্ষ্মীকে আদিত্যের দুই পত্নী রূপে উল্লেখ করা হয়েছে।
অথর্ববেদে উল্লেখ মেলে পুণ্যালক্ষ্মী এবং পাপী লক্ষ্মীর। রামায়ণে সীতাকে লক্ষ্মী রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি হল, সমুদ্রমন্থনের সময় লক্ষ্মীর আবির্ভাব।
তবে শুধু হিন্দু ধর্মে নয়, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মেও উল্লেখ রয়েছে দেবী লক্ষ্মীর। যেমন বৌদ্ধ ‘অভিধানপ্পদীপিকা’-তে তিনি সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধির দেবী। তেমনই ‘শালিকেদার’ এবং ‘সিরি-কালকন্নি’ জাতকে তাঁকে সৌভাগ্য ও জ্ঞানের দেবী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবার বৌদ্ধতন্ত্রে তিনি বসুধারা নামে পূজিত হতেন। তিনি দেবী লক্ষ্মীর বৌদ্ধ প্রতিরূপ। অন্য দিকে জৈন ধর্মে তাঁর উল্লেখ রয়েছে মহাবীরের মাতা ত্রিশলা, যে রাতে জিনকে স্বপ্নে ধারণ করেছিলেন সেই রাতেই গজলক্ষ্মীকে স্বপ্নে দেখেছিলেন।
প্রাচীন ভারতের শিল্পকলায় এমনকী মুদ্রায় দেবী লক্ষ্মীর অসংখ্য নিদর্শন পাওয়া যায়। প্রাচীন বৌদ্ধ শিল্পকলায় ভারহুত, সাচী কিংবা অমরাবতীর ভাস্কর্যে লক্ষ্মীর সন্ধান মেলে। ভারতীয় সংগ্রহালয়ে রক্ষিত খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের, বেসনগরের যে কল্পবৃক্ষ রয়েছে তাতে প্রচুর ধনসম্পদের সঙ্গে শঙ্খ ও পদ্মের চিহ্ন দেখা যায়।
গবেষকদের মতে এই কল্পবৃক্ষের সঙ্গে কুবের অথবা লক্ষ্মীর সম্পর্ক রয়েছে। প্রাচীন ভারতীয় মুদ্রায় গজলক্ষ্মী কিংবা অভিষেক রত লক্ষ্মীর অসংখ্য নিদর্শন পাওয়া যায়। লক্ষ্মী মূলত দ্বিভুজা অথবা চতুর্ভুজা হলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে তিনি বহুভুজাও।
কৃতজ্ঞতাঃ oneindia