যে কারণে হাতী বিশ্বকর্মার বাহন!

এই পৃথিবীর সকল শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম যার হাতে তৈরি তিনি আর কেউ নন আমাদের দেবতাদের মধ্যে অন্যতম সেরা ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বকর্মা। বিশ্বকর্মার মূর্তি যদি আমরা দেখি, তাহলে দেখি তাঁর বাহন হস্তী । কলকাতার কর্মকার সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট নেতা শিক্ষা ব্রতী স্বর্গত হরষিত কেশরী রায় প্রথম বিশ্বকর্মার হস্তী বাহন বিগ্রহের পূজা করেন ।

হাতী কেন বাহন ? পুরানের প্রনাম মন্ত্রে বিশ্বকর্মা কে মহাবীর বলে বর্ণনা করা হয়েছে । হাতীর কত টা শক্তি তার আন্দাজ করতে পারি। নিমিষে গাছ পালা মাথা দিয়ে ঠেলে ফেলে দেয় । কারোর ওপর চরণ ভার দিলে- তার মুখ দিয়ে রক্ত উঠে মৃত্যু- আর অস্থি সকল চূর্ণ চূর্ণ হবে । এমন প্রবাদ আছে, হাতী নাকি একটু বড় পাথর শুঁড়ে তুলে ছুঁড়ে মারতে পারে ।

বিশ্বকর্মার জন্ম সংক্রান্ত তথ্য যা আমরা বিভিন্ন পুরাণ থেকে আমরা পেয়ে থাকি তা হল দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা হলেন একজন বৈদিক শিল্পী। তার সম্পর্কে বিবরণ আমরা যেমন বিভিন্ন পুরাণের মধ্যে পেয়ে থাকি, তেমনি ঋকবেদেও পেয়ে থাকি। পুরাণমতে তিনি দেবগুরু বৃহস্পতির একমাত্র বোন যোগসিদ্ধার পুত্র এবং তার পিতা অষ্ট বসুর মধ্যে শ্রেষ্ঠ বসু প্রভাস।

আবার ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান মতে প্রজাপতি ব্রহ্মার নাভিদেশ থেকে বিশ্বকর্মার উৎপত্তি হয়েছিল। তেমনি এক মতে বিশ্বকর্মা ও তাঁর স্ত্রী ঘৃতাচী দুজনেই শাপ পেয়ে এই পৃথিবীতে জন্ম নেন আমরা এই বাস্তুশিল্পীর যে রূপ দেখতে পাই তা হল তিনি হলেন চতুর্ভুজা। তিনি গজারুঢ় অর্থাৎ হাতি তার বাহন।

বিশ্বকর্মার বাহন হাতি কেন?
পুরানের প্রনাম মন্ত্রে বিশ্বকর্মা কে মহাবীর বলে বর্ণনা করা হয়েছে। আর দেবতা বিশ্বকর্মা যেমন মহাবীর ঠিক তেমনি তার বাহন যে হবে অর্থাৎ তাকে বহন করার ক্ষমতা যার থাকবে, তাকেও অমোঘ ক্ষমতার অধিকারী হতে হবে। স্থলভুমিতে হাতীর মতো শক্তিযুক্ত প্রাণী আর দুটি দেখতে পাওয়া যায় না।

হাতির এই ক্ষমতার ব্যবহার আজ থেকে নয় বহু প্রাচীন কাল থেকেই করে আসছে মানুষ। প্রাচীন কালে রাজারা যুদ্ধে যাবার সময় সঙ্গে নিয়ে যেত হাতি বাহিনী। আর এই বাহিনী তারা প্রবল ভাবে ব্যবহার করতেন যুদ্ধে। যাদের কাছে এই হাতি বাহিনীর সংখ্যা বেশি থাকতো তাদের যুদ্ধে জয় ছিল নিশ্চিত। তাই এই স্থলভুমির অন্যতম শক্তিমান প্রানী এই দিক থেকে মহাবীর বিশ্বকর্মার বাহন হবার যোগ্যতা অর্জন করেন।

আবার অন্য দিক দিয়ে ভাবলে হাতির কিন্তু কোন হাত নেই । তবে একটি ‘কর’ বা ‘শুন্ড’ আছে । কর আছে বলেই হাতীর এক নাম ‘করী’ । ‘কৃ’ ধাতু থেকেই ‘কর’ শব্দটির উৎপত্তি। হাতি এই শুড়ের মাধ্যমেই জল পান করে, খাবার সংগ্রহ করে, গাছের ডালপালা ভেঙে বা শুড় দিয়েই জড়িয়ে ধরে সবকিছুকে অর্থাৎ শুড়কে হাতি নানারকম ভাবে ব্যবহার করে।

হাতীকে দিয়ে অনেক কাজ করানো হয় । বাস্তব জীবনে আমরা দেখি বন দপ্তর হাতীকে দিয়ে কাঠ সরানোতে কাজে লাগায় । মোটা মোটা গাছের গুঁড়ি, কান্ড মাহুতের নির্দেশে হাতী এক স্থান থেকে আর এক স্থানে নিয়ে যায়, আবার কখনো সে গাছের ডাল বয়ে নিয়ে যায় মাহুতের নির্দেশে । আবার বন্য হাতীদের তাড়াতে বন দপ্তর পোষা হাতী গুলিকে কাজে লাগায়।

হাতীর জীবন টাই এই রকম কাজের। নিজের খাদ্য আরোহণ থেকে , মাল বওয়া সব সময় কাজ । আর শিল্পের সাথে কর্মের সংস্থান জল আর ঠান্ডার মতো। জলে যেমন ঠান্ডা ভাব থাকে তেমনই কর্মের মাধ্যমেই শিল্পের বিকাশ। তাই বিশ্বকর্মা হলেন কর্মেরও দেবতা । হাতি শুড় দিয়ে নানান কর্মে সিদ্ধ তাই হাতিকেই বিশ্বকর্মার বাহন হিসাবে মেনে নেওয়া হয়েছে।

আবার কাজ করার সময় মাহুতের কাছে হাতীদের অবস্থা একদমই শান্ত থাকে। অর্থাৎ কাজের সময় ঠান্ডা ভাব থাকলেই কাজের মাধ্যমেই শিল্পের বিকাশ সম্ভব। তেমনিই বিশ্বকর্মা হলেন সূক্ষ শিল্পকর্ম থেকে বৃহৎ প্রাসাদ নির্মাণ অর্থাৎ সকল কর্মের দেবতা।তাই এখানে কাজের নিপুনতা যেমন দরকার তেমনি চাই দৈহিক ক্ষমতা এবং মাথা ঠান্ডা রাখার ধৈর্য্য। শ্রমিক হাতীর মধ্যে এই সকল গুন মিলে।তাই বিশ্বকর্মার বাহন হিসাবে হাতি একেবারে যুক্তিসঙ্গত।

শিল্পের বিকাশ , বেকার দের কর্ম সংস্থান , শিল্পকে কেন্দ্র করে একটি দেশের বিকাশ যথার্থ বিশ্বকর্মা পূজা । কর্ম রূপে যেনো আমরা বিশ্বকর্মার পূজা করতে পারি। শ্রম দিবস হিসাবে এই বিশ্বকর্মা পূজার দিন টা যেনো পালন করতে পারি- এই প্রার্থনাই সকলে বিশ্বকর্মার কাছে করবো।

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.