শুক্র যে শব্দের অর্থ “নির্মল, স্বচ্ছ, উজ্জ্বল, একজন প্রাচীন ঋষি ও দেবতা যিনি বৈদিক পুরাণ অনুসারে অসুর বা দৈত্যদের গুরু। মধ্যযুগীয় পুরাণ এবং হিন্দু জ্যোতিষ শাস্ত্রে, বিভিন্ন সময় তাকে শক্র গ্রহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি নবগ্রহের অন্যতম। তার নামানুসারে সপ্তাহের একটি দিন হল শুক্রবার। শুক্র হচ্ছেন ভৃগু মুনির পুত্র, যিনি সপ্তর্ষির অন্যতম। তিনি দৈত্য / অসুরদের গুরু, এবং এছাড়াও বিভিন্ন হিন্দু গ্রন্থে তাকে শুক্রাচার্য্য অথবা অসুরাচার্য্য নামে উল্লেখ করা হয়। মহাভারতের বর্ণনা অনুসারে, শুক্র নিজেকে দুইভাগে ভাগ করেছেন, একভাগ দেবতাদের জ্ঞানের উৎস, আরেকভাগ অসুরদের জ্ঞানের উৎস,শুক্র ভীষ্মের রাজনৈতিক জ্ঞানের গুরু। তিনি যোগের আচার্য। দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। তাঁর অধিদেবতা ইন্দ্রানী ও প্রত্যধিদেবতা ইন্দ্র। দৈতগুরু শুক্রাচার্যের বর্ন শ্বেত। বাহন রথ বা ঘোড়া। এই রথে আগুনের বর্নের ৮টি ঘোড়া বাধা থাকে। রথে অনেকগুলি পতাকা টাঙানো তাকে। শুক্রাচার্যের দুই পত্নীআছে। গো ও জয়ন্তী। গো পিতরের ও জয়ন্তী দেবরাজ ইন্দ্রের কন্যা। গোর চার ছেলে ত্বষ্টা, বরুত্রী, শণ্ড, ও অমর্ক। জয়ন্তীর একমেয়ে দেবযানী।
কে না চায় তার দিনটা ভালো কাটুক। শুক্রবার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন । এ দিন সন্তোষী মায়ের অর্চনা করার দিন । বৈদিক অ্যাস্ট্রোলজিতে শুক্র গ্রহকে বেজায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর কেন দেওয়া হবে নাই বা বলুন! কারও কুষ্টিতে এই গ্রহটির অবস্থান শক্তিশালী হয়ে উঠলে যেমন অফুরন্ত ভালোবাসার সন্ধান মেলে, তেমনি পরিবারিক জীবনে কোনও ধরনের অশান্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কাও আর থাকে না। শুধু তাই নয়, শুক্র গ্রহের শুভ প্রভাবে আরও একাধিক উপকার মেলে। যেমন ধরুন- অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে, বাড়ি-গাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়, কর্মক্ষেত্রে উন্নতির পথ প্রশস্থ হয় এবং সামাজিক সম্মান বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো। আর যদি কোনও কারণে এই গ্রহটি দুর্বল হয়ে পরে, তাহলে কিন্তু কোলো! কারণ নানাবিধ রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার সম্ভাবনা যায় বেড়ে। বিশেষত হাজারো চেষ্টার পরেও বাবা-মা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতে চায় না। সেই সঙ্গে লেজুড় হয় নানাবিধ পরিবারিক সমস্যা এবং টাকা-পয়সা সংক্রান্ত নানা ঝামেলা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠতে সময় লাগে না। তাই বলা হয় বন্ধু, শুক্র গ্রহ যাতে কোনও ভাবেই দুর্বল হয়ে না পরে সেদিকে খেয়াল রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু প্রশ্নটা হল এই কাজটি করবেন কীভাবে? সারা জীবন শুক্র গ্রহ আপনার বন্ধু হয়ে থাকুক, এমনটা যদি চান, তাহলে প্রতি শুক্রবার দুটি মন্ত্র নিয়ম করে পাঠ করতে হবে। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে এই দুটি মন্ত্র প্রতি শুক্রবার রাত দশটা থেকে বারোটার মধ্যে পাঠ করা শুরু করলে শুক্র গ্রহ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, কারও উপর শুক্র গ্রহের সুপ্রভাব পরলে য়ে কেবল উপরে আলোচিত উপকারগুলিই পাওয়া যায়, তেমন নয়। সেই সঙ্গে আরও কিছু উপকার মেলে।
“ওঁ হ্রীং শ্রীং শুক্রায় নমঃ” এবং ” ওঁ দ্রাং দ্রীং দ্রৌং সঃ শুক্রায় নমঃ”
♦ আয়ু বাড়ে চোখে পরার মতো: উপরে আলোচিত দুটি মন্ত্র পাঠ করা শুরু করলে শুক্র গ্রহের অবস্থান এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে নানাবিধ রোগ-ব্যাধি দূরে পালাতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে হঠাৎ করে কোনও দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আয়ু বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো।
♦ ক্রিয়েটিভ কাজে দারুন উন্নতি মেলে: শাস্ত্রে এমন উল্লেখ পাওয়া যায় যে কারও জন্ম কুষ্টিতে শুক্র গ্রহ শক্তিশালী হয়ে উঠলে ক্রিয়েটিভ কাজে একের পর এক সফলতা লাভের সম্ভাবনা যায় বেড়ে। বিশেষত যারা গান এবং নাচের সঙ্গে যুক্তি তাদের উন্নতি লাভের সম্ভাবনা সবথেকে বেশি থাকে।
♦ সম্মান বৃদ্ধি পায়: যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে শুক্র গ্রহকে প্রসন্ন করতে পারলে সামাজিক সম্মান তো বৃদ্ধি পায়ই, সেই সঙ্গে কর্মক্ষেত্রেও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো। তাই তো বলি বন্ধু, সারাক্ষণ যদি লাইম লাইটে থাকার স্বপ্ন পূরণ করতে হয়, তাহলে শুক্র মন্ত্র জপ করার মধ্যে দিয়ে শুক্র গ্রহকে বন্ধু বানাতে দেরি করবেন না যেন!
♦ শরীর এবং মন চাঙ্গা হয়ে ওঠে: আচ্ছা আজকাল কি অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পরেছেন। সেই সঙ্গে লেজুড় হচ্ছে মন খারাপ! তাহলে বন্ধু একবার কোনও জ্যোতিষ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না যেন! কারণ অনেক সময় শুক্র গ্রহের অবস্থান দুর্বল হয়ে পরলেও এমন ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে আরেকটি কাজও করতে পারেন। তা হল উপরে আলোচিত মন্ত্রগুলি নিয়মিত জপ করা শুরু করতে পারেন। আসলে এমনটা করলে শুক্র গ্রহের খারাপ প্রভাব কেটে যেতে সময় লাগে না। ফলে নিমেষেই শরীর এবং মন চাঙ্গা হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে মনোযোগ ক্ষমতারও উন্নতি ঘটে।
♦ মনের মতো জীবন সঙ্গী মেলে: এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে শুক্র গ্রহকে যদি প্রসন্ন করা যায়, তাহলে মনের মতে জীবন সঙ্গী মেলার সম্ভাবনা যেমন বাড়ে, তেমনি বৈবাহিত জীবনে কোনও ধরনের অশান্তি বা কলহ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। তাই তো বলি বন্ধু, হাজারো চেষ্টার পরেও যারা মনের মানুষটির সন্ধান পাচ্ছেন না, তারা নিয়ম করে এই মন্ত্রগুলি পাঠ করতে ভুলবেন না যেন!
♦ ব্যবসায় চরম সফলতা লাভের সম্ভাবনা বাড়ে: এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে যারা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তাদের সদা খেয়াল রাখা উচিত শুক্র গ্রহ যাতে কোনওভাবে দুর্বল হয়ে না পরে। কারণ জন্ম কুষ্টিতে এই বিশেষ গ্রহটির অবস্থান বিগড়ে গেলে ব্যবসায় মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে। অন্যদিকে যদি শুক্র গ্রহ শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তাহলে চরম সফলতা লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাহলে বন্ধু, এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন, ছোট-বড় সব ব্যবসায়িরই শুক্র মন্ত্র জপ করার প্রয়োজন কতটা!
জন্মছকে শুক্রগ্রহের প্রভাবে কি ঘটতে পারে ?
শুক্র গ্রহ হল সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ। এই পার্থিব গ্রহটিকে অনেক সময় পৃথিবীর “বোন গ্রহ” বলে আখ্যায়িত করা হয়, কারণ পৃথিবী এবং শুক্রের মধ্যে গাঠনিক উপাদান এবং আচার-আচরণে বড় রকমের মিল রয়েছে। বাংলায় সকালের আকাশে একে ‘শুকতারা’ এবং সন্ধ্যার আকাশে একে ‘সন্ধ্যাতারা’ বলে ডাকা হয়ে থাকে। এর কোনও উপগ্রহ নাই। ভেনাস অর্থাৎ শুক্র গ্রহ মানেই হলো ভালোবাসা, প্রেম পরিণয়ের দেবতা। তার কৃপা দৃষ্টি থাকলে, প্রেম থেকে দাম্পত্য জীবন হয়ে ওঠে মধুরতম।
জন্মছকে শুক্রের কোন অবস্থান, জীবনের কোন ভালো দিক নির্দেশ করে? জন্মছকে শুক্র গ্রহ নির্দেশ করে ভালোবাসা, সম্পর্ক, আকর্ষণ, অর্থ , বিদ্যা , রসায়নবিদ্যা ,চিকিৎসা ছাড়া বিপরীত লিঙ্গের রূপের আকর্ষণ ঘটায় শুক্র , সংগীত বা কোনো শিল্পসত্তা , শারীরিক ক্ষেত্রে কিডনি, মূত্র সম্পর্কিত সমস্যা, গলা এবং সাধারণ শারীরিক সমস্যা নির্দেশ করে শুক্র।
শুক্র – কাম-সম্বন্ধীয় কার্য, জাগতিক সুখ, বিভিন্ন শাস্ত্র, আমোদ-প্রমোদ, সৌখিন ও বিলাস দ্রব্য, সৌন্দর্য, মাধুর্য, মুখমণ্ডল, মোহ, শিল্প, সঙ্গীত, শয়নসুখ, দৃষ্টিশক্তি, যৌন আকর্ষণ, যৌনরোগ, অম্ল রস ইত্যাদি।
শুক্রের অপর নাম – কবি, সিত, ভার্গব, উশনা, ভৃগু, দৈত্যগুরু প্রভৃতি।
শুক্রের মিত্র – বুধ, শনি।
শুক্রের সম – মঙ্গল, বৃহস্পতি।
শুক্রের শত্রু – রবি, চন্দ্র।
শুক্রের প্রিয়/শুভ মাস – জ্যৈষ্ঠ, কার্তিক
শুক্রের প্রিয় বার – শুক্রবার
শুক্রের প্রিয় সংখ্যা – ৬
শুক্রের প্রিয় ধাতু – প্লাটিনাম
শুক্রের প্রিয় রত্ন – হীরা, শ্বেত প্রবাল, ওপাল
শুক্রের প্রিয় রং – সাদা
শুক্রের প্রিয় মূল – রামবাসক মূল
শুক্রের শান্তি মন্ত্র – ওঁ দ্রাং দ্রীং দ্রৌং সঃ শুক্রায় নমঃ। অথবা ওঁ হ্রীং শ্রীং শুক্রায় নমঃ। অথবা ওঁ বস্ত্রংমে দেহি শুক্রায় নমঃ।
শুক্রের মন্ত্র প্রতিকার – হ্রিঁং হূঁং শ্রীং শ্রীং লং বং স্বাহা – ১০৮ বার
শুক্রের টোটকা প্রতিকার – রুপোর সামগ্রী ব্যবহার করুন। সাদা রুমাল সঙ্গে রাখুন। মাতৃস্থানীয় লোকের সেবা করুন।
শুক্রের গায়ত্রী মন্ত্র – ওঁ ভৃগুসূতায় বিদ্মহে দিব্যদেহায় ধীমহি তন্নোঃ শুক্র প্রচোদায়াৎ।
শুক্রের প্রনাম মন্ত্র – হিমকুন্দমৃণলাভং দৈত্যানাং পরমং গুরুম্। সর্বশাস্ত্র প্রবক্তারং ভার্গবং প্রণমাম্যহম্।।
শুক্র গ্রহ বিবাহের ভাবকে প্রভাব বিস্তার করে। তবে একটি শুভ শুক্র গ্রহের প্রবাহে দাম্পত্য জীবন হয় খুবই সুখের। বিবাহের সঙ্গে যদি একটি শুভ শুক্র গ্রহের যোগ হয়, দাম্পত্য জীবন হয় খুব সুখের।
লগ্নে শুক্র – লগ্নে শুক্র থাকলে জাতক বা জাতিকা হয় খুব সৌখিন , সবসময় ফিটফাট থাকতে ভালোবাসবে। বিপরীত লিঙ্গের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়।
লগ্নের দ্বিতীয় শুক্র – শারীরিক সম্পর্কের জন্য জাতক বা জাতিকা খুব আগ্রহী হয়। অনেকসময় এরা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে আবদ্ধ হয়।
লগ্নের তৃতীয়ে শুক্র – নারী সবসময় পুরুষ ঘেঁষা হয় , এবং পুরুষ সবসময় নারী ঘেঁষা হয়। যাদের বন্ধুত্ব হবে বেশিরভাগ বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে।
লগ্নের চতুর্থে শুক্র – লগ্নের চতুর্থে শুক্র থাকলে জাতক বা জাতিকাকে কামপ্রবণ করে তোলে।
লগ্নের পঞ্চমে শুক্র – অনেক ক্ষেত্রে জাতক বা জাতিকা বাল্য অবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক করে ফেলে , চারিত্রিক দোষযুক্ত হয়।
লগ্নের ষষ্ঠে শুক্র – বিবাহিত জীবন খুব সুখের হয়, কিন্তু জাতক একাধিক নারীর সঙ্গে লিপ্ত থাকে।
লগ্নের সপ্তমে শুক্র – জাতক জাতিকা অনেকসময় যৌন রোগে আক্রান্ত হন।
লগ্নের অষ্টমে শুক্র – জাতকের বিবাহের পর ভাগ্যের উন্নতি হয়।
লগ্নের নবমে শুক্র- জাতক বা জাতিকার অত্যন্ত যৌন আসক্তি থাকে।
লগ্নের দশমে শুক্র – হটাৎ বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আসক্ত হয়ে পরে এবং আগে পিছনের কথা ভাবেনা।
লগ্নের একাদশে শুক্র – হটাৎ অপ্রত্যাশিত সূত্র থেকে অর্থলাভ হয়।
লগ্নের দ্বাদশে শুক্র – জাতক বা জাতিকা অত্যাধিক কামুক প্রকৃতির হয়। জাতক নারীসঙ্গের জন্য প্রচুর অর্থ নষ্ট করে এবং জাতিকাও পুরুষসঙ্গের জন্য অর্থব্যয় করে থাকে।
নিজের জন্মছকের সাথে মিলিয়ে নিন, উপরে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি। আর আগে থাকতেই বুঝে নিন, শুক্র গ্রহ আপনার জীবনে কোন ভালো দিক উন্মোচন করতে চলেছে?