এবার প্রশ্ন হইলো, নক্ষত্রমণ্ডলের আদি নক্ষত্রের নাম অশ্বিনীই বা কেনো হইল? আর সূর্য্যদেবের স্ত্রী সংজ্ঞাও কেনোই বা অশ্বিনী রুপ ধারণ করিলেন? আবার অশ্বিনীকুমারদ্বয় “ঋষি আথর্বণ দধ্যঙ্” এর দেহে অশ্বমুন্ডই বা কেনো বসাইলেন? আরও অনেক তো প্রাণী ছিলো ! তাহা হইলে, কেনো বার বার অশ্বকেই বাছিয়া লওয়া হইল? এই তিনটি ক্ষেত্রেই দেখা যাইতেছে অশ্বেরই প্রাধান্য ।
এখন দেখা যাক কেনো এই অশ্বকেই বার বার প্রাধান্য দেওয়া হইয়াছে বিভিন্ন অসাধ্য কর্ম্মে । যেমন অশ্বমেধযজ্ঞেও অশ্বের প্রাধান্য,ভুমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম । আবার ঋষিরা সমগ্র ভারতবর্ষকে তিনটি ক্রান্তায় বিভাজিত করেছিলেন ১) বিষ্ণুক্রান্তা, ২) অশ্বক্রান্তা, ৩) রথক্রান্তা । এখানেও ক্রান্তিয় বিভাগেও অশ্বের নাম দিয়ে দেওয়া হইলো।
আবার সূর্য্যের রথ, ইন্দ্রের রথ ইত্যাদি সমস্ত রথেরই গতিবাহক হইলো অশ্ব। আবার দেখা যায়, ত্রিপুর দহনকালে মহাদেব এক অকল্পনীয় রুপ ধারণ করিয়াছিলেন । মহাক্রান্তি বিষুবে তিনটি পুরী সমরেখায় উপস্থিত হইলে দেবাদিদেব সংহারমূর্তি ধারণ করিলেন। তৎকালে প্রজাপতি ব্রহ্মা এক মহাভীমকায় দীব্যরথের রুপ ধারণ করিলেন। আর বিষ্ণু ধারণ করিলেন মহোগ্রতেজা সেই দিব্যরথের মহাবলশালী অশ্বদ্বয়রুপ।
মহাকালরুপী রুদ্র আরুঢ় হইলেন সেই কালগ্রাসী রথে । দৈবনির্ধারিত সেই মহাসন্ধিক্ষণে তিনটি পুরী একই রেখায় উপস্থিত হইলে পর দেবাদিদেব নিক্ষেপ করিলেন ঊনপঞ্চাশ পবন বাহিত মহাশাম্ভবী বাণ। মুহুর্তে ভস্মীভূত হইল ত্রিপুর । “ব্রহ্মরথ হরের্হয়ঃ কালান্তক মহেশ্বরঃ। বিনাশার্থ ত্রিপুরাস্তৎ ত্রিপুরাসুরঞ্চৈব সঙ্কটাৎ ।।”
এই কাহিনীটি উল্লেখের কারণ হইল, এখানেও দেখা যাইতেছে যে,সেই দিব্যরথের অশ্ব রুপ ধারণ করিয়াছিলেন স্বয়ং শ্রীবিষ্ণু । তাহা হইলে কে এই অশ্ব? সমুদ্র মন্থনে বহুবিধ বস্তু উঠিয়াছিল । তাহার মধ্যে ছিল ঐরাবত গজ এবং উচ্চৈঃশ্রবা হয়ঃ অর্থাৎ দিব্য অশ্ব।
এবার দেখা যাক্ অশ্ব শব্দের মধ্যে কি অর্থ লুকিয়ে আছে । অশ্ব=অশ্ + কন্। অশ্ ধাতুর উত্তরে কন্ প্রত্যয় করে এই শব্দ নিষ্পন্ন হইয়াছে । সাধারণ সংস্কৃতে “অশ্” ধাতু খাওয়া বা ভক্ষণ করা অর্থে ব্যবহৃত হয়। মহর্ষি পৈল ঋগ্বেদীয় “শিক্ষা”য় বৈদিক অর্থে “অশ্” ধাতুর অর্থ বলিয়াছেন “ওজঃ চৈতন্যমাদায় তেজোরব্যয়ম” অর্থাৎ চৈতন্য হইতে নির্গত অব্যয় তেজঃস্বরুপ ওজঃই হইল “অশ্”।
আবার মহর্ষি “ঋগ্বেদোক্ত শিক্ষা” এবং ঋগ্বেদ প্রাতিশাখ্যানুসারে “কন্” প্রত্যয়ার্থে বলিলেন “উপমানাৎ কন্ রক্তম্”,এখানে রক্তম্ শব্দের বৈদিকার্থ রঞ্জিত> অনুরঞ্জিত হওয়া । সুতরাং ঋগ্বেদাচার্য্য পৈল দেখাইলেন অশ্ব শব্দের অর্থ হইল “চৈতন্য হইতে নির্গত অব্যয় তেজঃস্বরুপ ওজঃ, যাহা ব্রহ্মরাগে রঞ্জিত।” অর্থাৎ “ব্রহ্মতেজ” । সুতরাং অশ্বের মধ্যে অমিত ব্রহ্মতেজ প্রচ্ছন্নাবস্থায় নিহিত রহিয়াছে । আর সেই কারণেই উৎকৃষ্ট ব্রহ্মযজ্ঞে, অশ্বমেধযজ্ঞে, সঞ্জীবনী বিদ্যায় প্রযুক্ত হয় অশ্ব, এমনকি রথে ও সৈন্যদের অতি তীব্রতম বেগবান বাহন হিসেবেও ব্যবহৃত হইয়া থাকে ।
আবার বিজ্ঞানেও অতিউচ্চশক্তি সম্পন্ন একক অশ্বের নামে দেওয়া হইয়াছে “অশ্বশক্তি” বা “Horse power” আবার ঋগ্বেদেও দেখা যায়, “অশ্বিনা যজ্বরীরিষো দ্রবত্পাণী শুভস্পতী। পূরুভূজা চনস্যতম্।।” এখানে সায়ণাচার্য্য বলিলেন, সূর্য্যের আলোক আকাশের দিকে ধাবিত হয় বলিয়া রশ্মিসমূহকে ঋগ্বেদে অশ্ববৎ সম্বোধন করা হইয়াছে । আবার অগ্নিকেও অশ্ব বলিয়া সম্বোধন করা হইয়াছে। কারণ অগ্নি ব্রহ্মের প্রত্যক্ষ তেজঃস্বরুপ। তাই বলা হইল অশ্বীনা অর্থাৎ হে আলোকরশ্মিসমূহ আপনারা শুভকর্মের পালক ও ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন ও বিস্তীর্ণভূজ বা বহুভোজী। আপনারা যজ্ঞান্ন হবিঃ গ্রহণার্থ উপনীত হউন ।
লেখকঃ আচার্য শিবগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়
বি. দ্রঃ এই প্রবন্ধটি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই লেখাটি যে অবস্থায় পেয়েছি তা হুবহু প্রকাশ করা হয়েছে কোনরূপ ব্যতিক্রম ব্যতীত। এই লেখা যেস্থান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে সেখানে কোন শিরোনাম ছিল না। তাই আমরা একটি শিরোনাম দিছি। কারো যদি প্রকৃত শিরোনামটি জানা থাকে তাহলে প্রমাণ সহ [email protected] এ ইমেল করলে আমরা শিরোনামটি পালটিয়ে দিবো এবং কৃতজ্ঞ থাকবো।