রুদ্রাক্ষ ধারণ করা অতি পবিত্র বিষয় বলে ধারনা করা হয় সনাতন ধর্মে। রুদ্রাক্ষকে বলা হয়ে থাকে মহাদেবের প্রত্যক্ষ আশীর্বাদ।
সব মানুষের রুদ্রাক্ষ ধারণ করার অধিকার আছে। যদি নিষ্কাম বাসনায় মানুষ রুদ্রাক্ষ ধারণ করে তাহলে সে সর্ব পাপ থেকে মুক্ত হয়ে পরম গতি লাভ করেন। শুদ্ধভাবে রুদ্রাক্ষ ধারণ,স্পর্শ, দর্শন ও নিয়মিত পূজা করলে মানুষ নির্ভয় কাম ক্রোধ লোভ হিংসা ও অসত্য ত্যাগ করে দীর্ঘদিন আনন্দের সঙ্গে জীবন ধারণ করেন।
এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ মৃগী শুকনো কাশি মানসিক রোগ, মূর্ছা রোগ,চুলকানি,শ্বেতী চর্মরোগ, গেঁটেবাত, অর্শ্ব হৃদয় প্রভৃতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন রুদ্রাক্ষ ঔষধি রূপেও প্রয়োগ করা হয়।
সাধারণত শাস্ত্রে ১ থেকে ২১ মুখি রুদ্রাক্ষের উপস্থিতির কথা জানা গেলেও ১৪ মুখী পর্যন্ত ফল শাস্ত্রে বর্ণিত আছে বাকি সকল রুদ্রাক্ষ ধারন করাও উপকারী।
চৌদ্দ ধরনের রুদ্রাক্ষ কোন দেবতার প্রতীক এবং কোন মন্ত্রে এটি ধারণ করবেন?
অনেকেই রুদ্রাক্ষ ধারণ করেন।মুখ সংখ্যা অনুযায়ী ১ থেকে ১৪ মুখী বিশেষত্ব পৃথক পৃথক। নির্দিষ্ট মন্ত্র এবং দেবতা অনুযায়ী সেই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে বিশেষ লাভ হয়।
একমুখী রুদ্রাক্ষ- এই রুদ্রাক্ষ শিবের অত্যন্ত প্রিয়। একমুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে অনেক প্রকার বাধা বিপত্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়,কেবল তাই নয় ভগবান শিবের প্রতি বিশেষ ভক্তি প্রদর্শিত হয়।ক্রমে ক্রমে আধ্যাত্মিক উন্নতিও ঘটে।তাই একমুখী রুদ্রাক্ষ সকলের সেরা।যে ব্যক্তির ধন-সম্পদ এবং ভৌতিক বস্তুর আকাঙ্ক্ষা থাকে তিনি এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করে থাকেন।
একমুখী রুদ্রাক্ষ যা আজকাল অতিশয় দুর্লভ।সৌভাগ্যবশত যদি কেউ একমুখী রুদ্রাক্ষ পেয়ে থাকেন তাহলে তাকে নিয়ম অনুসারে পুজো করে তবে ধারণ করবেন। ওম হ্রীং নম: মন্ত্র জপ করে এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করতে হয়।
দ্বিমুখী রুদ্রাক্ষ- অর্ধনারীশ্বরের রুদ্রাক্ষ হিসেবে পরিচিতএবং এটি ব্যক্তির সমস্ত ইচ্ছে পূরণ করে বলে ধারনা করা হয়। একে ধারণের পূর্বে ওম নম: মন্ত্রের জপ করা উচিত।
ত্রিমুখী রুদ্রাক্ষ- এটিকে অগ্নিদেবের রুদ্রাক্ষ বলা হয় থাকে। এটি ধারণ করলে ব্যক্তির সমস্ত ইচ্ছে শীঘ্র পূর্ন হয়। ওম ক্লীং নম: মন্ত্র জপ করে একে ধারণ করা উচিত।
চতুর্মুখী রুদ্রাক্ষ– সাক্ষাৎ ব্রহ্মার রুদ্রাক্ষ এটি। যা ধারণ করলে, ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ লাভ হয়। ওম হ্রীং নম: মন্ত্র জপ করে একে ধারণ করতে হয়।
পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ- এটিকে কালাগ্নি দেবতার রুদ্রাক্ষ বলা হয়ে থাকে। একে ধারন সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়। একে ধারণের পূর্বে ওম হ্রীং নম: মন্ত্র জপ করবেন।
ষষ্ঠমুখী রুদ্রাক্ষ- এটি কার্তিকের রুদ্রাক্ষ। এটি পরলে ব্রহ্মহত্যার পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পরার সময় ওম হ্রীং হুম নম: মন্ত্র জপ করবেন।
সপ্তমুখী রুদ্রাক্ষ– একে সপ্তর্ষি সপ্তমাতৃকায়েং রুদ্রাক্ষ বলা হয়ে থাকে। যে ব্যক্তির অত্যধিক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে এবংহতাশাগ্রস্থ হয়ে পরেছেন তা কাটিয়ে ওঠার কোনও উপায় তাঁর হাতে নেই তাঁদের এই রুদ্রাক্ষ পরা উচিত। ওম হুম নম: মন্ত্র জপ করে এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করা উচিত।
অষ্টমুখী রুদ্রাক্ষ- ওম হুম নম: মন্ত্র জপ করে এই রুদ্রাক্ষ পরলে ব্যক্তির রোগ মুক্তি হয়ে থাকে।
নবমুখী রুদ্রাক্ষ- একে নব’দেবীর স্বরূপ বলে ধারনা করা হয়ে থাকে।সমাজে প্রতিষ্ঠার ইচ্ছে থাকলে, এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করা উচিত। এক্ষেত্রে ওম হ্রীং হুম নম: মন্ত্র জপ করতে হয়।
দশমুখী রুদ্রাক্ষ- একে বিষ্ণুর স্বরূপ বলে মনে করা হয়। জীবনে আনন্দের আগমন ঘটানোর জন্য রুদ্রাক্ষ ধারণ করা হয়ে থাকে, যার জন্য ওম হ্রীং নম: মন্ত্রের জপ করতে হয়।
একাদশমুখী রুদ্রাক্ষ– এটি রুদ্রদেবের স্বরূপ। জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য এটি ধারণ করতে হয়। এর জন্য ওম হ্রীং হুম নম: মন্ত্র জপ করা উচিত।
দ্বাদশমুখী রুদ্রাক্ষ– এটি অন্য সকল রুদ্রাক্ষের থেকে আলাদা। ওম ক্রৌং ক্ষৌং রৌং নম: মন্ত্র জপ করে এই রুদ্রাক্ষ চুলে ধারণ করা উচিত।
ত্রয়দশমুখী রুদ্রাক্ষ- ওম হ্রীং নম: মন্ত্র জপ করে এই রুদ্রাক্ষ পরলে ব্যক্তির ভাগ্য উজ্জ্বল হয়।
চতুর্দশমুখী রুদ্রাক্ষ- এই রুদ্রাক্ষ ব্যক্তির পাপ মুক্তির লক্ষ্যে ব্যবহার করা হয়। ওম নম: মন্ত্র জপ করে এটি ধারণ করা উচিত।
রুদ্রাক্ষ ধারণের উপযুক্ত দিনক্ষণ ও বিশেষ নিয়মাবলি
রাশিচক্র অনুসারে নির্দিষ্ট মুখী রুদ্রাক্ষে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে শুভ দিনক্ষণে ধারণ করলে ভাগ্য বিড়ম্বনা দূর-সহ নানা প্রাপ্তি ঘটে থাকে।
শ্রাবণ মাসের সোমবার রুদ্রাক্ষ ধারণ করার উপযুক্ত সময়। রুদ্রাক্ষ অন্য কোনও শুভ ক্ষণেও ধারণ করা যেতে পারে। রুদ্রাক্ষ ধারণ করার জন্য কাঁচা দুধ, পঞ্চগব্য, পঞ্চমৃত বা গঙ্গাজল যুক্ত করে রুদ্রাক্ষকে শুদ্ধ রে নিতে হবে।
জাফরান, অষ্টগন্ধা, চন্দন, ধূপ-গভীর, ফুল ইত্যাদি দিয়ে শিবলিঙ্গ এবং রুদ্রাক্ষের উপাসনা করে নির্দিষ্টমুখী রুদ্রাক্ষের নির্দিষ্ট জন্য মন্ত্র জপ করে ধারন করতে হবে।রুদ্রাক্ষের মন্ত্র না জানা থাকলেও কেবলমাত্র ‘ওঁ নমঃ শিবায়’’ ১০৮ বার জপ করে ধারণ করলেও ভাল পাওয়া যায়। সব সময় মনে রাখতে হবে যে রুদ্রাক্ষ কোনও দিন অশুভ ফল প্রদান করে না। এর গুণাবলীর শেষ নেই।
যে কোনো বয়সের নারী-পুরষই ধারণ করতে পারে, গলায় বাজুতে এবং কব্জিতে।
সাধারণত বীজগুলোকে একসাথে সুতায় গেঁথে মালা মালা তৈরি করা হয় হয়। পরম্পরা ভাবে বিশ্বাস করা হয় রুদ্রাক্ষের সংখ্যা হবে ১০৮ যোগ ১। অতিরিক্তটি হলো বিন্দু। মালার সাথে সর্বদা একটি বিন্দু থাকতে হবে, অন্যথায় শক্তি চক্রাকারে পরিণত হতে পারে এবং সংবেদনশীল লোকের চঞ্চল হয়ে ওঠার সম্ভবনা রয়েছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ৮৪ টি যোগ একটি বিন্দু – এর কম সংখ্যক মালা পরা অনুচিত। এর বেশি যে কোন সংখ্যা ব্যবহারযোগ্য।
এছাড়াও লাল সুতোর, সোনার বা রৌপ্যের তারে সুতোর মাধ্যমে রুদ্রাক্ষ ধারণ করা যেতে পারে ।
রুদ্রাক্ষ ধারণ করার পর প্রতি সকালে শিবের নাম স্মরণ করা উচিত এবং আমিষ ভোজন অনুচিত।
সোর্সঃ উইকিপিডিয়া