শুধু শিবের পুজোয় নয়, জেনে নিন কীভাবে বেল আমাদের শরীরের কাজে আসে!!!

বেল পাকলে কাকের কি? কাকের কিছু হোক বা না হোক মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বেল এক আশির্বাদ স্বরুপ। গ্রীষ্মে শরীরে জলের অভাব পূরণের জন্য ফল খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই ঋতুতে কিছু বিশেষ ফল আপনার স্বাস্থ্যকে উন্নত করে এবং গ্রীষ্মের প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এমনই এক ফল হ’ল বেল। বেল গোলগাল একটি ফল। কাঁচা থাকতে সবুজ আর পাকলেই হলদে। শক্ত খোসার এই ফলটি শারীরিক বিভিন্ন রোগের দাওয়াই হিসেবে বিবেচিত। শুধুই বেলই নয় বেলের পাতায় যে অবিস্মরণীয় উপকার রয়েছে, তা আমরা কজনাই বা জানি। বেলের পাতা থেকে শুরু করে শেকড় পর্যন্ত প্রতিটা অংশই ঔষধী গুণে ভরপুর। শিবের প্রিয় এই গ্রীষ্মকালীন মরশুমি ফলে রয়েছে ট্যানিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ফাইবার, প্রোটিন এবং আয়রনের মতো পুষ্টি উপাদান যা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ লাভজনক। বেল কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়ার মতো রোগে খুব উপকারে আসে। বেলে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। বেল ফলের মতো এর পাতা ও খুব উপকারী। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক বেল পাতার উপকারিতা সম্পর্কে-

বৈদিক শাস্ত্র মতে বেলপাতাকে অনেক রকম ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
• বেল গাছের তিনটি পাতা একত্রে থাকলে তবেই তাকে একটি বেলপাতা বলা হয়। এই তিনটি বেলপাতা হল ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর।
• এই তিনটি পাতাকে যথাক্রমে তিনটি চোখ বলা হয়।
• তিনটি পাতা যথাক্রমে– পূজা, স্তোত্র ও জ্ঞান।
• বেলডাল যথাক্রমে সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়কে উপস্থাপনা করে।
• বেলপাতার সামনের অংশকে অমুর্যাম বলা হয়।
• যে কোনও পূজার ক্ষেত্রে যদি অসম্পূর্ণ বা ছেঁড়া বিল্বপত্র অর্পণ করা হয়, তা হলে তা পাপ করার তূল্য হয়।
• বেলফলকে শ্রীফল বলা হয়। শিবপূজার একটি উত্তম উপাদান বেলপাতা।

জ্যোতিষমতে বাড়ির দিক অনুসারে বেলগাছ থাকার কী উপকার—

• উত্তর-পূর্ব দিকে বেলগাছ সম্পদ প্রাপ্তি ঘটায় ও অশুভত্ব থেকে মুক্তি দেয়।
• পূর্ব দিকে বেলগাছ সর্বপ্রকার সম্পদ ও শান্তি লাভ ঘটায়।
• পশ্চিম দিকে বেলগাছ সুসন্তান দেয়।
• দক্ষিণ দিকে বেলগাছ দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি দেয়।

শারীরিক প্রয়োজনে বেলগাছ
• বেলে থাকা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-প্যারাসাইট উপাদান হজমের জন্য বেশ উপকারী।
• বেলের শরবৎ শরীর ঠাণ্ডা করে। প্রচণ্ড গরমে নাক থেকে রক্তপাত হলে এই ফলের শরবৎ ওষুধ হিসেবে খাওয়ানো যায়।
• বেলে থাইমনি এবং রাইবোফ্লেভিনের মতো ভিটামিন পাওয়া যায়। এই ভিটামিনও যকৃতের জন্য উপকারী।
• বেল পেট ব্যাথা, গ্যাস, ডায়রিয়া এবং পেট খারাপের সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়। কারও এ ধরনের সমস্যা থাকলে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ টি বেল পাতা খেলে উপকার করেন।
• বেলে ল্যাকসটেভি বৈশিষ্ট্যি রয়েছে যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে ব্যথা বা হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
• বেল ভিটামিন সি-এর ভাল উৎস। ভিটামিন সি-এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়, বেল পাতার রস খেলে এ ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
• যদি বেলফল চিনির সঙ্গে সেবন করা যায় তা হলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
• বেলের গুঁড়ো যদি ক্ষত স্থানে লাগানো হয়, তা হলে খুব তাড়াতাড়ি উপশম হয়।
• বেলফল ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে মিছরি সহকারে পান করলে লিভারের সমস্যা দূর হয়।
• ভিটামিন সি-এর পরিপূরক হওয়ায় বেল শরীরের কার্যকারিতা বাড়ায়। কিডনির জন্যও বেল বেশ উপকারী।
• বেলে থাকা বিটা-ক্যারোটিন যকৃতকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
• শরীরের ইনসুলিন এবং গ্লুকোজ লেভেল নিয়ন্ত্রণ করায় বেল পাতার রস ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী।
• বেল পাতার রস রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। সেই সঙ্গে নানা রোগ প্রতিরোধ করে।
• মধু ও গোল মরিচের সঙ্গে বেল পাতার রস মিশিয়ে খেলে জণ্ডিস দ্রুত ভাল হয়।
• বেল পাতার রস উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
• যে নারীরা স্তন্যপান করান, তাদের শরীরে দুধের উৎপাদন বাড়াতে বেল পাতার রস খুব উপকারী।
• পিরিয়ডের সময় বেশি রক্তপাত হলে বেল পাতার রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।
• বেলফল সরষের তেলের মিশ্রণে দিয়ে যদি কোনও ব্যথায় মালিশ করা হয় তবে খুব উপকার পাওয়া যায়।
• হাত ও পা ফুলে গেলে বেল পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে খুব দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
• বেলফলের গুঁড়ো দুধের সঙ্গে পান করলে রক্তাল্পতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
• হাই ব্লাড সুগারে নিয়মিত বেলফল খাওয়া হলে এই রোগ থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া যায়।

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.