সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণকে ঘিরে বহুকাল থেকেই অনেক পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। শুধু ভারত নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রহণ ঘিরে রয়েছে একাধিক ধর্মীয় ও সংস্কৃতিগত ‘বিশ্বাস’। আমেরিকা থেকে শুরু করে আফ্রিকা বিশ্বের সর্বত্রই সূর্যগ্রহণ নিয়ে রয়েছে নানা পৌরানিক কাহিনি।প্রসঙ্গত, চাঁদ যখন পরিভ্রমণরত অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবীর কোন দর্শকের কাছে সূর্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায় কিছু সময়ের জন্য। এই ঘটনাকে সূর্যগ্রহণ বলা হয়। অন্যদিকে, যখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে চাঁদ অবস্থান নেয়, তখন পৃথিবীপৃষ্ঠের পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে সূর্য চাঁদের পেছনে আড়ালে চলে যায় এবং সূর্যের গ্রহণ ঘটে। আবার পৃথিবী যখন চাঁদ ও সূর্যের মধ্যে আসে তখন পৃথিবীর আড়ালে চাঁদ ঢাকা পড়ে এবং চন্দ্রগ্রহণ হয়। সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণকে ঘিরে বহুকাল থেকেই অনেক পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। শুধু ভারত নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রহণ ঘিরে রয়েছে একাধিক ধর্মীয় ও সংস্কৃতিগত ‘বিশ্বাস’। আমেরিকা থেকে শুরু করে আফ্রিকা বিশ্বের সর্বত্রই সূর্যগ্রহণ নিয়ে রয়েছে নানা পৌরানিক কাহিনি। দেখে নেওয়া যাক, সেই সব কাহিনিকে। কোরিয়ানরা মনে করেন যে সূর্যকে চুরি করে নিয়েছে কোনও রাক্ষুসে কুকুর। কোরিয়ান লোক সঙ্গীতে এই নিয়ে বহু সুরও বাঁধা হয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকার বেনিন ও টোগে উপজাতির মানুষরা বিশ্বাস করেন যে ‘গ্রহণ’ মানে সূর্য ও চন্দ্রের মধ্যে ক্রমাগত যুদ্ধ। তাঁদের আরও ধারণা যে একমাত্র পৃথিবীই এই যুদ্ধ মেটাতে সক্ষম। প্রাচীন গ্রিসের পৌরনিক কাহিনিতে মনে করা হত সূর্যগ্রহণের ঘটনা মানেই কোনও না কোনও দেবদেবী রুষ্ট হয়েছেন। যার ফলে কোনও দুর্যোগের আশঙ্কা করা হত। মূলত এই মহাজগতিক ঘটনাকে নেতিবাচক চোখে দেখা হত এখানে। অন্যদিকে,জ্যোতিষ মতে মনে করা হয় অনেকেরই কোষ্ঠীতেই গ্রহণ দোষ থাকে। কালসর্প,পিতৃদোষ, মাঙ্গলিকের মতো গ্রহণ দোষও একটি দোষ।
বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ কী?
পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে এক সরলরেখায় চাঁদ এসে গেলে সেই ছাড়ায় পৃথিবী পৃষ্ঠে পড়ে। এই মহাজাগতিক ঘটনার নাম সূর্যগ্রহণ। যদিও এই মুহূর্তে চাঁদ পৃথিবী থেকে কিছুটা দূরে থাকার কারণে চাঁদের প্রচ্ছায়া পৃথিবীর উপরে পড়বে। এর ফলে সূর্যকে একটি বলয়ের মতো দেখাবে।
কখন হয় গ্রহণ?
প্রসঙ্গত, চাঁদ যখন পরিভ্রমণরত অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবীর কোন দর্শকের কাছে সূর্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায় কিছু সময়ের জন্য। এই ঘটনাকে সূর্যগ্রহণ বলা হয়। অন্যদিকে, যখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে চাঁদ অবস্থান নেয়, তখন পৃথিবীপৃষ্ঠের পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে সূর্য চাঁদের পেছনে আড়ালে চলে যায় এবং সূর্যের গ্রহণ ঘটে। আবার পৃথিবী যখন চাঁদ ও সূর্যের মধ্যে আসে তখন পৃথিবীর আড়ালে চাঁদ ঢাকা পড়ে এবং চন্দ্রগ্রহণ হয়।
বছরে কতবার হতে পারে সূর্যগ্রহণ?
একটি বছরে দুই থেকে ৫ টি সূর্যগ্রহণ সংগঠিত হতে পারে। তবে একটিই বছরে ৫ টি পর পর সূর্যগ্রহণ অত্যন্ত বিরল। এমনই জানাচ্ছে মার্কিন মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র নাসা। শেষবার ১৯৩৫ সালে একই বছরে পর পর ৫ টি সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। এরপর ২২০৬ সালে একই বছরে ৫ টি সূর্যগ্রহণ হবে বলে দাবি ‘টাইম অ্যান্ড ডেট ডট কম’ এর।
অনলাইনে সূর্যগ্রহণ দেখবেন কীভাবে?
Slooh.com ওয়েবসাইট থেকে এই সূর্যগ্রহণ লাইভ স্ট্রিম করা হবে। এছাড়াও YouTube থেকে গ্রহণের দিন ভারতীয় সময় সকাল 8 টায় গ্রহণের অনলাইন স্ট্রিম শুরু হবে।
সুরক্ষিত উপায়ে সূর্যগ্রহণ দেখবেন কীভাবে?
নিজে চোখে সূর্যগ্রহণ দেখার আগে চোখের সঠিক সুরক্ষা অবশ্যই নিতে হবে। খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখলে চিরতরে চোখের ক্ষতি হতে পারে।
গ্রহণ এবং গর্ভাবস্থা – এটা কি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকর?
চন্দ্রগ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য পরামর্শ
বিশ্বাস করা হয় যে গর্ভবতী মহিলারা চাঁদের গ্রহনকালে সেট করা কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললে তাদের এবং তাদের বাচ্চাদের ক্ষতি হয় না। চাঁদের গ্রহনকালে গর্ভবতী মহিলাদের পরামর্শ দেওয়া হয় এমন কিছু সাধারণ সতর্কতা হল:
● গ্রহণের সময় উপবাস।
● চন্দ্রগ্রহণের দিনে কিছু বুনন বা সেলাই না করা।
● আগের দিন রান্না করা হয়েছে এমন কিছু জিনিস রান্নাঘরে না রাখা।
● কাঁচি এবং ছুরির মত ধারালো বস্তু ব্যবহার করবেন না।
● দিনের বেলা সূর্যের আলোর রশ্মিতে উন্মুক্ত হবেন না। সূর্যালোক এড়াতে; ভারী পর্দা টানা উচিত, এবং জানালা খবরের কাগজ দিয়ে আচ্ছাদিত করা উচিত।
● গ্রহণের সময় ঘরের বাইরে যাবেন না।
সতর্কতা অনুসরণ করার সময় মনে রাখার জিনিস
এটা খুব সম্ভব যে আপনাকে গ্রহণের সময় খাওয়া বা পান করা এড়াতে বলা হবে। এটি আপনার এবং আপনার শিশুর উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে। এটা ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে। গ্রহণের সময় এবং আপনার প্রবীণদের বিভিন্ন বিধিগুলি মানার সময় অপ্রয়োজনীয় নিয়মগুলি আপনাকে উদ্বিগ্ন এবং ভীত করে তুলতে পারে। এতে রক্তচাপ বৃদ্ধি হতে পারে যা আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ হতে পারে।
গ্রহণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করার সময় আপনি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখছেন কিনা তা নিশ্চিত করুন:
● মাথা ঘোরা
● গুরুতর মাথাব্যাথা
● অচেতন হওয়ার মত অনুভূতি
● অম্বল বা বদহজম
আপনি যদি এই উপসর্গগুলি লক্ষ্য করেন, অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। একটি চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা ঘটলে এবং আপনি সতর্কতাগুলি অনুসরণ করে থাকেন তবে অগ্রিম ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন।
গর্ভাবস্থায় সূর্যগ্রহণের প্রভাব
এটা বিশ্বাস করা হয় যে প্রত্যাশিত মহিলাদের সরাসরি গ্রহণের দিকে তাকানো উচিত না। এতে গর্ভাবস্থায় গর্ভপাত হতে পারে বা সন্তান বিকৃতির সঙ্গে জন্ম নিতে পারে।
সূর্যগ্রহণকালে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সতর্কতা
সমস্ত গর্ভবতী মহিলারা এই প্রশ্নটি মনে রাখেন, “গ্রহণ কি গর্ভধারণকে প্রভাবিত করে?” বিজ্ঞান কিছু বিশ্বাসকে ফিরিয়ে আনতে পারে, যদিও কিছুর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কিন্তু এখানে সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কিছু সতর্কতা রয়েছে যা অবলম্বন করতে হয়:
● বাইরে যাবেন না, সরাসরি সূর্যের দিকে তাকাবেন না।
● একটি গ্রহণকালে ঘুমানো এড়িয়ে চলুন। ‘দূর্বা ঘাস’ পেতে চেষ্টা করুন এবং মেঝেতে ছড়িয়ে দিন ও ‘দূর্বা ঘাস’-এ বসুন।
● একটি গ্রহণকালে পিন, ছুরি, বা সূঁচের মত ধারালো বস্তু ব্যবহার করবেন না।
● গ্রহণকালে খাবেন না, পান করবেন না বা রান্না করবেন না।
● গ্রহণের সময় ‘মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র’ বা ‘শান্তনা গোপাল মন্ত্র’ উচ্চারণ করুন।
● গ্রহণ শেষ হওয়ার পরে স্নান করা পরামর্শ দেওয়া হয়।
● আপনার বাড়ির বয়ষ্কদের সঙ্গে সম্মান সহকারে আচরণ করুন এবং স্নানের পর তাদের আশীর্বাদ নিন।
কল্পকথা না সত্য
আমাদের বয়ষ্করা মানেন এমন কিছু বিশ্বাস আছে। চলুন দেখি সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ এবং গর্ভাবস্থায় প্রভাবগুলি কল্পকথা কিনা।
১) ঘরের মধ্যে থাকুন এবং সূর্যের দিকে তাকাবেন না
এটি সত্য যে একটি গর্ভবতী মহিলাকে গ্রহণের সময় বাইরে যাওয়া উচিত না এবং নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য খালি চোখে সূর্যের দিকে দেখবেন না:
● সরাসরি সূর্যের বিকিরণের দিকে তাকানো ক্ষতিকারক।
● গ্রহণের দিকে সরাসরি তাকালে আপনার রেটিনা সূর্যের তীব্র দৃশ্যমান আলোতে থাকা এক্সপোজার প্রভাবিত করতে পারে।
● এটি রেটিনা পুড়ে যাওয়ার কারণ হয় আলো সংবেদনশীল রড এবং শঙ্কু কোষে ক্ষতি করে।
● এটি সাধারণ সত্য। আপনি গর্ভবতী হোন বা না হোন, আপনি সরাসরি একটি গ্রহণের দিকে তাকানো উচিত নয়।
২) একটি গ্রহণের সময় রান্না করা, খাওয়া বা পান করবেন না
এটি একটি প্রমাণিত সত্য। এর পিছনে কারণ হল সূর্যের রশ্মি একটি গ্রহণের সময় আরালে আটকে যায় বলে তাপমাত্রা হ্রাস হয়। তাপমাত্রার হ্রাস এবং সূর্যের রশ্মির অনুপস্থিতির কারণে ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলি ছড়িয়ে পড়তে পারে। অতএব, গ্রহণের সময় রান্না, পান করা বা খাওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।
দাবি পরিত্যাগী
গ্রহণ সম্পর্কিত কুসংস্কার বিশ্বাস করা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা আপনার পছন্দ। আপনি হয়তো আপনার বাবা-মার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার জন্য বা কিছু প্রকৃত গর্ভাবস্থার জটিলতার ক্ষেত্রে দোষ এড়ানোর জন্য তাদের অনুসরণ করতে চাইতে পারেন। গ্রহণ একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ আপনার গর্ভাবস্থায় কোন প্রভাব ফেলে না। গ্রহণ সম্পর্কিত বিশ্বাস এবং নিয়মনীতি অনুসরণ করা ব্যক্তিগত পছন্দ। আপনাকে যা করতে হবে তা হল শিথিল থাকা এবং ঘটনাটি শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা।
সূর্যগ্রহণের সময় কী করবেন, কী করবেন না জেনে নিন
১. খালি চোখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য সূর্য গ্রহণ দেখলেও তা রেটিনার উপর প্রভাব ফেলে। যার কারণে একটা চোখে দৃষ্টিশক্তিও হারাতে পারে মানুষ। তাই খালি চোখে এই গ্রহণ দেখতে না করেছে নাসা।
২. পেরিস্কোপে, টেলিস্কোপ, সানগ্লাস বা দূরবীন, কোনও কিছুর সাহায্যে গ্রহণ দেখার সময় সূর্যের দিকে সরাসরি তাকাতে বারণ করা হয়েছে। গ্রহণের সময় সূর্য রশ্মি অত্যন্ত সংবেদনশীল থাকে যা চোখে প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. সানগ্লাস বা ঘষা কাঁচ দিয়েও এই গ্রহণ দেখতে বারণ করেছে নাসা। কারণ এইগুলো নিরাপদ না।
৪. বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বিশেষ গ্রহণ গ্লাস বা সোলার ফিল্টার দিয়েই এই গ্রহণ দেখা উচিত।
৫. বাজারে আইএসও স্বীকৃত বিশেষ সোলার গ্লাস দিয়ে একমাত্র এই গ্রহণ দেখা নিরাপদ।
৬. সে সব গ্লাস ব্যবহারের আগে অবশ্যই ব্যবহার নির্দেশিকা (instructions) পরে নিতে উপদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কোনোভাবে সেই গ্লাস ভাঙা বা দাগ থাকলে ব্যবহার করতে না করেছে তাঁরা।
৭. সূর্যগ্রহণ চলাকালীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র, খাবার খেতে বারণ করেছে। একমাত্র বৃদ্ধ, অসুস্থ ও গর্ভবতী মহিলারা হালকা খাবার নিতে পারবেন বলে বলা আছে। যদিও আধুনিক বিজ্ঞান এই দাবিকে মান্যতা দেয়নি।
৮. প্রাচীন ভারতীয় গাঁথা বলে, রাহুর গ্রাসে সূর্য। তাই গ্রহণ হয়। যা জন-জীবনে প্রভাব ফেলে। রোগ-ব্যাধি ছড়ায়। সে কারণে আগেকার দিনে ভারতীয়রা রান্না বন্ধ রেখে বাইরে বেরিয়ে এসে সূর্য প্রণাম করতেন কিংবা স্নান করে শুদ্ধ হতেন।কিছু কিছু কুসংস্কার আবার এমন আছে, গর্ভবতী মহিলার গর্ভে থাকা বাচ্চার জন্য সূর্য গ্রহণ অত্যন্ত বিপদজনক। তাই সে সব মহিলাদের গ্রহণ চলাকালীন ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হতো না।
গর্ভবতী মহিলারা কী করবেন?
মনে করা হয়, গর্ভবতী মহিলারা এই গ্রহণের সময় যদি বাইরে বের হন, তাহলে তা নিঃসন্দেহে খারাপ ঘটনা তাঁদর পক্ষে। শাস্ত্র বলছে, গর্ভবতী মহিলারা যেন এমন দিনে থাকেন বাড়ির ভিতরেই। সূর্যগ্রহণ ও স্নান সূর্যগ্রহণ ঘিরে স্নান সূর্যগ্রহণ ঘিরে করণীয়ের মধ্যে থাকছে স্নান। শাস্ত্রজ্ঞদের মতে , গ্রহণের সময় স্নান করে কাপড় বদলে ফেলে শুদ্ধবস্ত্র পরা , অত্যন্ত শুভ কাজ। তবে এই সময়ের মধ্যে কোনও মতেই খাবার খাওয়া বা রান্না করা উচিত নয় বলে দাবি শাস্ত্রজ্ঞদের।
গ্রহণ কাটতেই কী কী করণীয়?
শাস্ত্রজ্ঞরা বলছেন, গ্রহণ মিটে গেলে , তারপর পূজার সময় ঈশ্বরকে কোনও কিছু অর্পণ করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। পাশাপাশি, গ্রহণের পর সূর্যদেবতার মন্ত্রপাঠ করা অত্যন্ত শুভফলদায়ক বলে মনে করা হয়।
গ্রহণ ঘিরে কোন কাজ করা উচিত নয়?
শাস্ত্র বলছে, সূর্যগ্রহণের সময় বাইরে থাকা, বা কোনও কারণে বেড়ানো ঠিক কাজ নয়। তাতে জ্যোতিষমতে খানিকটা খথারাপ প্রবাব পড়তে পারে ব্যক্তির উপর। কোনও শুভ কাজ গ্রহণের সময়কালের মধ্যে করতে বারণ করছেন শাস্ত্রজ্ঞরা।
কোষ্ঠীতে গ্রহণ দোষ কী?
বৈদিক জ্যোতিষদের মতে সূর্য ও চন্দ্রের গহণের মাধ্যমে অনেকরই ভাগ্যে গ্রহণ দোষ থাকে। এই অশুভ দোষের জন্য অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয় মানুষের জীবনে। যদি কারোর কোষ্ঠিতে লগ্নের দিক থেকে দ্বাদশভাবে সূর্য ও চন্দ্রের সঙ্গে রাহু বা কেতুর মধ্যে কোনও একটি গ্রহ স্থিত হয়, তাতে তখন তৈরি হয় গ্রহণ দোষ। এর ফলে কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় সমস্যা তৈরি হয়। জ্যোতিষবিদদের মতে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের দিনগুলিতে এই গ্রহণদোষের কথা মাথায় রেখে অনেকেই নিজের পদক্ষেপ নির্ধারণ করে থাকেন।
বাস্তু টিপস সূর্যগ্রহণ ঘিরে
বাস্তুশাস্ত্র বলছে, সূর্যগ্রহণের দিন জলের মধ্যে রেখে দিতে হবে একটি তুলসীর পাতা। আর ততেই যাবতীয় বিপত্তি নাশ হতে পারে এই গ্রহণ ঘিরে।
জল পান নিয়ে বাস্তু টিপস
সূর্যগ্রহণের দিন যে সময় গ্রহণ লাগছে সেই সময় যেন ১৫ মিনিটের জন্য গৃহস্থ কেউ জল পান না করেন। বাস্তুশাস্ত্র মতে এই কাজে সুফল মেলে পরবর্তী পর্যায়ে।
কী কী দান করা যায়?
সূর্যগ্রহণের দিন চিনি, গম, নুন জাতীয় বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য় যেন কাউকে দান করা হয়, এমনই পরামর্শ দিচ্ছেন বাস্তুশাস্ত্রবিদরা। তাঁদের দাবি, এই সময়ে এমন দান করলে তা গৃহস্থের সমস্যা দূর করে।
যে সংস্কারটি মানবেন
সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের দিকে সরাসরি তাকানো বারণ। এই সংস্কার অবশ্যই মানবেন। সত্যি বলতে, যেকোনো সময়েই সূর্যের দিকে সরাসরি তাকাতে নেই। সে হোক গ্রহণের সময়, কিংবা স্বাভাবিক সময়ে। সূর্যগ্রহণ দেখতে কাঁসার পাত্রে জল থেকে শুরু করে ব্যবহার করা হয়েছে ফেলে দেওয়া এক্স-রে প্লেটও। এখন অবশ্য বিশেষ রোদচশমা দিয়ে সূর্যগ্রহণ দেখা যায়।
সূর্যগ্রহণ নিয়ে কোনো কুসংস্কারে পাত্তা দেওয়ার কোনো মানে নেই। আপনি যদি প্রসূতি মা হয়ে থাকেন, নিজের শরীরের যত্ন নিন। অনাগত সন্তানের জন্য শরীরে যথেষ্ট পুষ্টির ব্যবস্থা করুন।
এছাড়াও কিছু প্রচলিত কুসংস্কারগুলি তুলে ধরা হল
১. সূর্যগ্রহণের সময় জন্ম নেওয়া শিশুদের ব্যাপারে দুই ধরনের গল্প শুনতে পাওয়া যায়। এক, শিশুটি অসুস্থ হবে এবং দুই, শিশুটি চালাক হবে। তবে এ দুটি ধারণার কোনোটার ক্ষেত্রেই বিশ্বাস করার মতো যুক্তি বা তথ্য পাওয়া যায় না।প্রাচীন অ্যাজটেক সভ্যতায় বিশ্বাস করা হতো, চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের এক টুকরো খেয়ে ফেলা হয়। ম্যাক্সিকান সংস্কৃতিতে এটা বিশ্বাসে পরিণত হয়, প্রসূতি মা সূর্যগ্রহণ দেখলে তার অনাগত সন্তানের এক টুকরো খেয়ে নেবে দেবতারা!
২. হিন্দু বিশ্বাসে রাহু গ্রাস করে সূর্য বা চন্দ্রকে। তাই এই সময় গর্ভবতী মহিলাদের ঘরের বাইরে বেরনো বারণ। তাতে সন্তানের মুখ বিকৃত হতে পারে, জন্ম চিহ্ন থেকে যেতে পারে বলে ধারণা। তবে এর কোনও বাস্তব সম্মত ব্যাখ্যা মেলে না। সূর্যগ্রহণ দেখতে গিয়ে সূর্যের দিকে খালি চোখে তাকালে চোখ খারাপ এমনকী, অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে। সে গর্ভবতী মহিলা শুধু নয়, যে কোনও কারও ক্ষেত্রেই এটি হতে পারে। আলাদা করে গর্ভবতী মহিলাদের শারীরিক কোনও ক্ষতি হয় বলে প্রমাণ মেলে নি।
৩. গ্রহণের সময় শাড়িতে পিন বা সাধারণ ভাবে সেফটিপিন, কোনও গয়না পরতে বারণ করা হয়। নিষেধ থাকে ছুরি বা বঁটি দিয়ে ফল-সবজি কাটাতেও। এতে নাকি বিপদ হতে পারে। এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায় নি।
৪. মেক্সিকানরা মনে করেন আবার উল্টোটা। তাঁদের কুসংস্কার, গ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলারা পেটের কাছে ছুরি ধরে বসে থাকতে পারেন বা লাল অন্তর্বাস পরতে পারেন। এতে নাকি গ্রহণের কু-প্রভাব পড়ে না। রক্ষা পায় গর্ভের সন্তান।
৫. সূর্যগ্রহণে গর্ভবতী মায়েদের শান্তি নেই। সেন্ট লুইসে অবস্থিত মার্সি হাসপাতালের গাইনোকোলজিস্ট শাফিয়া ভুট্টোর মতে, সূর্যগ্রহণের সময় পাকিস্তানে মায়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চিত করে শোয়ানো হতো। নইলে নাকি গর্ভের শিশু বিকলাঙ্গ হয়!