এই বছরের শেষ চন্দ্রগ্রহণ তাও আবার শতাব্দীর দীর্ঘতম চন্দ্রগ্রহণ। সাধারণত এই গ্রহণ বাংলাদেশ ও ভারতে দৃশ্য এই গ্রহণ পশ্চিম আফ্রিকা, ইউরোপের পশ্চিমাংশে, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আটলান্টিক মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরে দৃশ্য। চন্দ্রাস্তের সময় দক্ষিণ আমেরিকার কতিপয় অংশে ইউনাইটেড কিংডম ও আটলান্টিক মহাসাগেরের উত্তর ভাগে দৃশ্য হবে। চন্দ্রোদ্বয়ের সময়ে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন ও রাশিয়ায় দৃশ্য হবে। উত্তর -পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে মূলত এই গ্রহণ দেখা যাবে। তার মধ্যে রয়েছে আসাম ও অরুণাচল প্রদেশ।
যে সকল স্থানে গ্রহণ দৃশ্য হবে সেই সকল স্থানে পাকপাত্র পরিত্যাগ করা বিধেয়। কিন্তু কারা কারা এই গ্রহণ দেখতে পারবে তার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে যা মেনে চলা বাঞ্ছনীয়।
গ্রহণ দর্শনে শুভাশুভঃ
এই গ্রহণ মেষ, কর্কট, ধনু, মীন ও মকর রাশির জাতকের দর্শনে শুভ। তবে এই রাশি হওয়া সত্ত্বেও কৃত্তিকানক্ষত্রাশ্রিত মেষ রাশি ও উত্তরাষাঢ়াননক্ষাত্রাশ্রিত ধনু ও মকর রাশির দর্শন নিষেধ। এই রাশি ছাড়া ভিন্ন রাশির জাতকের দর্শনে অশুভ।
গ্রহণ বৈধভাবে দর্শন করিলে অক্ষয় পুণ্য হয়।
গ্রহণের কুপ্রভাব নিয়ে জ্যোতিষ শাস্ত্রের মতামতঃ
চন্দ্রগ্রহণ হয় একেবারেই বৈজ্ঞানিক কারণে। কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাসে এই গ্রহণকে অনেকেই অশুভ বলে মনে করেন। এই সময় কোনও ধর্মীয় কাজ করা হয় না। ধর্মীয় বিশ্বাস মেনে অনেকেই গ্রহণ চলাকালীন শিব চালিশা পাঠ করেন এবং গ্রহণ শেষ হলে গঙ্গাজলে স্নান করেন। তারপর পুজোপাঠ করে দান করার রীতি রয়েছে।
গ্রহণের সময় কি করবেন না:
● শাস্ত্রে গ্রহণের সময় এবং গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত দৈবমূর্তি স্পর্শ নিষিদ্ধ।
● বাড়ির মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া উচিত, যাতে ভগবানের ওপর গ্রহণের কোনও প্রভাব না-পড়ে।
● সূতক কাল এবং গ্রহণের সময় অশুভ শক্তির ক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়, তাই এ সময় নির্জন স্থান বা শ্মশানে যাওয়া উচিত নয়।
● সূতক লাগার পর কোনও শুভ কাজ করবেন না।
● গ্রহণের সময় চুল এবং নখ কাটবেন না। এন ছাড়া ভোজন বা জল গ্রহণও অনুচিত।
গ্রহণের পরে অবশ্যই যা যা করবেন:
● চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ সম্পর্কিত মন্ত্র জপ করা উচিত।
● গ্রহণ শেষ হলে স্নান করে শুদ্ধবস্ত্র পড়ে দান করা উচিত।
● গ্রহণ শেষ হলেই অন্য কোনও কাজ করবেন।
● গ্রহণ শেষ হলে সারাঘরে গঙ্গাজল ছিটিয়ে শুদ্ধ করা উচিত।
● কাছাকাছি কোনও মন্দিরে পুজো করে দান করুন।
● গ্রহণ শেষ হলে, গোরুকে রুটি খাওয়ানো শুভ।
● লক্ষ্মীর কৃপা প্রাপ্তির জন্য গ্রহণের পরে ইন্দ্রের পুজো করার বিধান রয়েছে।
● তুলসী চারার পাশে অবশ্যই প্রদীপ জ্বালাবেন। এতে বাড়ির পরিবেশ প্রাণোজ্জ্বল থাকে।
গ্রহণ এবং গর্ভাবস্থা – এটা কি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকর?
চন্দ্রগ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য পরামর্শ
বিশ্বাস করা হয় যে গর্ভবতী মহিলারা চাঁদের গ্রহনকালে সেট করা কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললে তাদের এবং তাদের বাচ্চাদের ক্ষতি হয় না। চাঁদের গ্রহনকালে গর্ভবতী মহিলাদের পরামর্শ দেওয়া হয় এমন কিছু সাধারণ সতর্কতা হল:
● গ্রহণের সময় উপবাস।
● চন্দ্রগ্রহণের দিনে কিছু বুনন বা সেলাই না করা।
● আগের দিন রান্না করা হয়েছে এমন কিছু জিনিস রান্নাঘরে না রাখা।
● কাঁচি এবং ছুরির মত ধারালো বস্তু ব্যবহার করবেন না।
● দিনের বেলা সূর্যের আলোর রশ্মিতে উন্মুক্ত হবেন না। সূর্যালোক এড়াতে; ভারী পর্দা টানা উচিত, এবং জানালা খবরের কাগজ দিয়ে আচ্ছাদিত করা উচিত।
● গ্রহণের সময় ঘরের বাইরে যাবেন না।
● গর্ভবতী হলে হাত-পা মুড়ে বা বেঁকে ঘুমাবেন না।
● গ্রহণের সময় শরীর সোজা রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
সতর্কতা অনুসরণ করার সময় মনে রাখার জিনিস
এটা খুব সম্ভব যে আপনাকে গ্রহণের সময় খাওয়া বা পান করা এড়াতে বলা হবে। এটি আপনার এবং আপনার শিশুর উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে। এটা ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে। গ্রহণের সময় এবং আপনার প্রবীণদের বিভিন্ন বিধিগুলি মানার সময় অপ্রয়োজনীয় নিয়মগুলি আপনাকে উদ্বিগ্ন এবং ভীত করে তুলতে পারে। এতে রক্তচাপ বৃদ্ধি হতে পারে যা আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ হতে পারে।
গ্রহণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করার সময় আপনি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখছেন কিনা তা নিশ্চিত করুন:
● মাথা ঘোরা
● গুরুতর মাথাব্যাথা
● অচেতন হওয়ার মত অনুভূতি
● অম্বল বা বদহজম
আপনি যদি এই উপসর্গগুলি লক্ষ্য করেন, অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। একটি চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা ঘটলে এবং আপনি সতর্কতাগুলি অনুসরণ করে থাকেন তবে অগ্রিম ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন।