পূর্ণিমার আলোয় আলোকিত হবে চরাচর । হবে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো । সেই নরম চাঁদের আলোয় সাদা লক্ষ্মী পেঁচার পিঠে চেপে মর্ত্যে নেমে আসবেন লক্ষ্মী ঠাকুর । তাঁর কৃপায় ভরে উঠবে সংসার, সমৃদ্ধ হবে আমাদের জীবন ।
কিন্তু মা লক্ষ্মী বড়ই চঞ্চলা । তাই তাঁকে থিতু করা সহজ কথা নয় । দেবীর কৃপাধন্য হতে তাই কয়েকটি কাজ অবশ্যই করুন । এই সহজ কাজগুলি করলে আর থাকবে না টাকাপয়সার সমস্যা। মা লক্ষ্মী এতে সন্তুষ্ট হবেন ।
যা যা করবেন মায়ের কৃপাধণ্য হতে
• কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন চেষ্টা করুন বাড়িতে দক্ষিণাবর্ত শঙ্খ বা জলশঙ্খ প্রতিষ্ঠা করতে ।
• এই দিন গরীব-দুঃখীদের দান করুন । ব্রাহ্মণভোজন করান । আশাতীত পুণ্যলাভ হয় এতে ।
• এই দিন চেষ্টা করুন উপবাস থেকে, গঙ্গাস্নান করে পুজোয় বসতে । মা লক্ষ্মী সন্তুষ্ট হবেন ।
• এ দিন ঘরের দরজায় দরজায় অবশ্যই মা লক্ষ্মীর পদচিহ্ন আঁকুন ।
• লক্ষ্মীর ঝাঁপিতে দিন কড়ি । পুজোর পর সেই কড়ি মানিব্যাগে বা পয়সার কৌটোয় বা ক্যাশ বাক্সে রেখে দিন ।
• এ দিন অবশ্যই লক্ষ্মীর পাঁচালি পাঠ করুন ।
• বাজারে অনেক ধরনের লক্ষ্মী কড়ি পাওয়া যায়। সঠিক ভাবে বাছাই করে সুন্দর ও ভাল কড়ি কিনে কোজাগরী পূর্ণিমায় স্থাপন করলে বাড়ি ধন সম্পদে ভরে উঠবে।
• প্রসাদ রাখার দিক – মা লক্ষীর উপাসনা করার সময় সবসময় দক্ষিণ দিকে প্রসাদ রাখবেন।
• এই দিন যদি পারদের লক্ষ্মী মূর্তি স্থাপন করা হয়, তা হলে বাড়ি সুখ, শান্তি ও অর্থে ভরে উঠবে।
• এই দিন বাড়িতে স্ফটিকের শ্রীযন্ত্রম স্থাপন করলে বাড়ি থেকে নেগেটিভ শক্তি চলে যায় এবং পজিটিভ শক্তি ভরে যায়। এই যন্ত্রম বাড়িতে রাখলে বাড়িতে অর্থ সম্পদ বৃদ্ধি হয়।
• লক্ষ্মীর পাদুকা এই দিনে স্থাপন করা যেতে পারে। এর ফলে বাড়িতে সুখ সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়।
• দক্ষিণাবর্ত শঙ্খকে বলা হয় মা লক্ষ্মীর শঙ্খ। লাল, সাদা বা হলুদ রংয়ের একটি পরিষ্কার কাপড়, একটি রুপোর পাত্র অথবা মাটির পাত্রের উপর রাখতে হয় এই শঙ্খ। এই শঙ্খের মধ্য দিয়েই বাড়িতে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ প্রবাহিত হয়।
• এই দিন বাড়িতে কুবের মূর্তি স্থাপন করাও খুব মঙ্গলজনক বলে মনে করা হয়।
আর্থিক অবস্থার উন্নতি ও পরিবারের কল্যাণের জন্য বাড়ি বাড়ি লক্ষ্মী পুজো করা হয়। মা লক্ষ্মী ধনরাশির দেবী৷ তাই এই পুজো প্রায় প্রতিটি ঘরেই ধুমধাম করে হয়৷ এই পুজো নিষ্ঠা মেনে করলে ধনলাভ হবে এবং মা লক্ষ্মীর কৃপায় সংসারের সমস্ত সমস্যা দূর হবে, এই ধারণা যুগযুগ ধরে চলে আসছে৷
তবে এই পুজোয়ে শুধু আড়ম্বর করলে নয়, মনের ভক্তিযোগে পুজো করতে হবে, না হলে ফল মিলবে না৷ফলে যে কোন উপায়ে লক্ষ্মীর পুজো করলেই লক্ষ্মী খুশি হয়ে যাবেন এবং সংসারে সমৃদ্ধি আসবে, এটা সব সময় বলা যায় না।
শুধু ধুমধাম করে পুজো করলেই হবে না, মনে থাকতে হবে ভক্তি, না হলে লক্ষ্মী প্রসন্ন না হয়ে উল্টে তাদের প্রতি বিরুপ হয়ে যাবেন এবং কখনওই তাদের জীবনে সমৃদ্ধি আসবে না৷ পাঁচালীতেও এই কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷
সাধারণ মানুষ একে লক্ষ্মীর কোপ বলে থাকেন। কিন্তু বেশীর ভাগ মানুষই জানেন না যে লক্ষ্মীর কোপ কীভাবে পড়ে। তার ফলে তাঁরা সেই কোপ থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন হোম যজ্ঞ করেন। কিন্তু এভাবে তারা বাঁচতে পারেন না কোন মতেই।
তাই তাদের পুরোপুরি জানতে হবে কী কী কাজ একেবারেই না করা উচিত লক্ষ্মী পুজোর সময়। ভুল করেও লক্ষ্মী পুজোর সময় বাড়িতে এই কাজ করলে ডুবে যাবে সংসার।
যা যা করবেন না
• লক্ষ্মী পুজোয় কখনওই তুলসী পাতার ব্যবহার করবেন না। কারণ তুলসী বিষ্ণুর খুব প্রিয় এবং শিলায় আটকে থাকার সময় বিষ্ণুর সঙ্গে বিয়ে হয়৷ ফলে তুলসী সতীন হয় লক্ষ্মীর।
• লক্ষ্মী পুজোর সময় যে বাতিই জ্বালান না কেন তা যেন লাল রঙের হয়। অন্যান্য রঙের বাতি জ্বালানো কখনই উচিত্ নয়। বদলে আপনি প্রদীপ জ্বালাতে পারেন।
• মা লক্ষ্মীকে কখনওই সাদা রঙের ফুল অর্পণ করবেন না। মা লক্ষ্মী বিবাহিত, তাই সবসময় লাল বা গোলাপী রঙের ফুল দিয়ে তার পুজো করতে হবে।
• কোনও ভাবে যেন লক্ষ্মীর প্রসাদ নষ্ট করা বা ফেলা না হয়।
• লক্ষ্মী পুজোয় ভুল করেও কাঁসর ঘণ্টা বাজাতে নেই।
• লোহার তৈরি কোনও বাসন মা লক্ষ্মীর পুজোয় ব্যবহার করতে নেই। কারণ লোহার বাসন অলক্ষ্মী পুজোয় ব্যবহার করা হয়।
• ধূপ, দীপ অবশ্যই মায়ের ডান দিকে রাখতে হবে।
• কালো বা সাদা বস্ত্রের ওপর মায়ের মূর্তি স্থাপন করা যাবে না।
• পুজোর সময় নিজেকেও লাল বা হলুদ বস্ত্র পরতে হবে।
এইভাবে মা লক্ষ্মীর পুজা করুন। আপনার সংসারের সব অশান্তি দূর হয়ে যাবে। কর্মক্ষেত্রে উন্নতি ঘটবে এবং আপনার ধনলাভ হবে অবশ্যই।