কয়েক বছর পরের কথা । নর্ম্মদাতীরে ভূগুকচ্ছ নামক স্থানে বালি শততম অশ্বমেধ যজ্ঞটি শুরু করলেন । এটি সম্পন্ন হয়ে গেলেই ইন্দ্র আর তাঁর কাছ থেকে সিংহাসন ফিরিয়ে নিতে পারবেন না | সে যজ্ঞে বালি যে যাহা চাইতেছিল , তাহাই দান করতেছিল বালী। খর্বাকার বামনদেব সেই যজ্ঞস্থলে বাঁশের ছাতা হাতে নিয়ে অতিথি হয়ে রাজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন |
তাঁর জ্যোতিতে ম্লান হয়ে গেল চারদিক | মুগ্ধ বলীরাজ বামনদেবকে সমাদর করে পাদ্য – অর্ঘ্য দিয়া অভ্যর্থনা করে জিজ্ঞাসা করলেন – ” হে ব্রাহ্মণ , আপনার প্রার্থনা কি ? যা চান তা- ই পাবেন । ” বামন বললেন- ” আমার প্রার্থনা সামান্য । আমি ধনরত্ন চাই না ,আমি চাই সামান্য ত্রিপাদ ভূমি । ” বালি তা দিতে সম্মত হন |
শুক্রাচার্য্য দেখেই বুঝলেন – এই বামন নিশ্চয় ছদ্মবেশী বিষ্ণু । উদ্দেশ্য ভাল নয় । বালিকে তিনি বললেন – ” মহারাজ , সাবধান ! এই বামন যা চাইবে , তা – ই দিতে সম্মত হবেন না । এই বামন এসেছে আপনার সাথে ছলনা করতে ।
” গুরুর সাবধানবাণী শুনলেন না বালী | বালি বললেন – ” বিষ্ণু যখন তাঁর কাছে কিছু চাইতে এসেছেন‚ তখন বাকি সব তুচ্ছ | আমি যখন অঙ্গীকার করেছি , তখন ইনি যা চান , তা – ই দেব । যদি ইনি স্বয়ং বিষ্ণুই হন তাহলে তো স্বয়ং সমগ্র সংসার কে আশীর্বাদ প্রদানকারী ভগবান বিষ্ণুকেও হাত পেতে ভিক্ষা চাইতে হয়েছে। দানীর হাত সবসময় উপরেই থাকে গুরুদেব। ”
দান করিবার আগে আচমন করতে হয় । আচমনের জল যাতে বালি না পান , সেজন্য শুক্রাচার্য্য বালির ভূঙ্গারের মধ্যে প্রবেশ করে জলরোধ করলেন । ভূ্ঙ্গার ভরা , অথচ জল পড়ে না ! তখন বামন একটি কুশ নিয়া ভূঙ্গারের নলের মধ্যে খোঁচা দিলেন – তাহাতে শুক্রাচার্য্যের একটি চোখ অন্ধ হয়ে গেল । সেই থেকে দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য্যের একচোখ অন্ধ। যাই হোক , বালি আচমন করে দানে উদ্যত হলেন ।
বামনদেব তখন বিশ্বরূপ ধারণ করলেন । এক পায়ে তিনি পৃথিবী , অন্য পায়ে তিনি স্বর্গ আক্রমণ করলেন । তাঁহার নাভিদেশ হইতে তৃতীয় একটি চরণ নিঃসৃত হল। বামনদেব বললেন – ” এই পদটি কোথায় ফেলব , দৈত্যরাজ ? ”
তখন রাজা বালি সমস্ত বুঝতে পারেন। প্রহ্লাদের পৌত্র বালি , রক্তের মধ্যে হরিভক্তি ছিল – সেই ভক্তির চরম নিদর্শন দেখানোর সময় উপস্থিত। এরপর তিনি বিষ্ণুর সামনে নিজের মস্তক নত করে সেখানে বামনরূপী বিষ্ণুর তৃতীয় চরণ রাখার অনুরোধ করেন বালি। তৃতীয় পদ বালির মাথায় রাখার সাথে সাথে বালি বিষ্ণুর স্তব করতে থাকেন।
এমন সময় প্রহ্লাদ এসে বালি বন্ধন মুক্তির জন্য অনুরোধ করলে, বিষ্ণু বালিকে মুক্তি দেন এবং বালি সত্য রক্ষার জন্য বহুকষ্ট স্বীকার করেছেন বলে- বিষ্ণু দেবতাদের দুষ্প্রাপ্য পাতললোককে তাঁর বাসের জন্য দান করেন এবং সেখানকার রাজা ঘোষণা করেন। দেবতারা বামনের ছলনায় স্বর্গরাজ্য ফিরিয়া পেলেন। শ্রী হরিও চিরদিনের জন্য বলির কাছে বন্দী হয়ে রইলেন ।
পাতালে গিয়ে সেখানেও সুশাসন প্রবর্তন করলেন বালী | ভক্ত বালীর রাজ্যে গিয়ে দ্বারপালের কাজ করেন স্বয়ং বিষ্ণু | এমনকী‚ সেখানে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন মা লক্ষ্মীও | দুজনের আশীর্বাদে ধন্য হয় বালীর পাতালরাজ্য | স্বর্গ ছেড়ে পাতালে গিয়েও কোনও অনুতাপ ছিল না বালীর | আরাধ্য দেবতার সেবা করতে পেরে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেছিলেন |
সোর্সঃ সংগৃহিত