শাস্ত্রে অষ্টলক্ষ্মীর কথা আছে । দেবীর লক্ষ্মীর আটটি রূপ এঁনারা ।
৮ জন লক্ষ্মী হলেন- আদিলক্ষ্মী, ধনলক্ষ্মী, ধান্যলক্ষ্মী, গজলক্ষ্মী, সন্তানলক্ষ্মী, বীরলক্ষ্মী, বিজয়ালক্ষ্মী ও বিদ্যালক্ষ্মী ।
“আদিলক্ষ্মী” হলেন মহর্ষি ভৃগু মুনির কন্যা। আবার এঁনাকে কিছু পুরাণে সাগর কন্যা বলা হয়। সমুদ্র মন্থনের সময় ইনি প্রকটিত হয়ে ভগবান বিষ্ণুকে পতি রূপে বরণ করেন ।
“ধনলক্ষ্মী” হলেন সোনাদানা, অর্থ ইত্যাদির প্রদায়িত্রী। ইনি প্রসন্না হলে সাধক কে অর্থ, ঐশ্বর্য এমনকি পারমার্থিক ধন সম্পত্তি ব্রহ্মবিদ্যা প্রদান করেন ।
“ধান্যলক্ষ্মী” হলেন চাল, ডাল, ধান, গম ইত্যাদি কৃষিজ ফসলের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এঁনার কৃপায় কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে মাঠ ফসলে ভরে ওঠে। কৃষকেরা গৃহে ফসল তুলে লক্ষ্মীর মুখ দেখতে পান। মাঠ ভরা ধান, গম এই লক্ষ্মীর প্রতীক।
“গজলক্ষ্মী” হলেন পশু সম্পত্তি এমনকি পশু পালনের মারফৎ যে অর্থ আসে- তাঁর অধিষ্ঠাত্রী প্রদায়িনী দেবী। পশুপালনের দ্বারা সভ্যতার বিকাশ, লাঙল, রথ টানা ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজের বিকাশ হয়েছিলো । এই দেবীর কৃপায় দেবতাদের রাজা ইন্দ্র দেব ঐরাবত বাহন রূপে প্রাপ্ত করেন ।
“সন্তানলক্ষ্মী” হলেন সন্তান সন্ততি প্রদায়িনী দেবী। এঁনার কৃপায় সন্তান সুখ লাভ হয় ।
“বীরলক্ষ্মী” বলতে দেবী এই রূপে সাহস, উদ্যম প্রদান করেন। এঁনারা কৃপায় হতাশা, অলসতা আদি শত্রুর নিরাময় ঘটে । নিস্কাম সাধকের মনে ধর্ম ও অধর্মের মধ্যে যে সংগ্রাম হয়- তখন ইনি সাধক কে সাহস, উদ্যম, ক্ষমতা দিয়ে অধার্মিক রিপুগুলিকে ধ্বংস করবার শক্তি প্রদান করেন ।
“বিজয়ালক্ষ্মী” বলতে যুদ্ধের পর যে বিজয়শ্রী প্রাপ্ত করা হয় । সাধক যখন রিপুগুলিকে পরাজিত করে শুভশক্তির প্রকাশ ঘটান তখন তিনি যে পারমার্থিক সুখ লাভ করেন তা প্রদান করেন এই দেবী ।
“বিদ্যালক্ষ্মী” হলেন জ্ঞান রূপ ধন প্রদায়িনী। তিনি সাধককে সমস্ত রকম বিদ্যা রূপ ঐশ্বর্য প্রদান করেন ।
এছাড়াও ঐশ্বর্যলক্ষ্মী যিনি ঐশ্বর্য প্রদান করেন ,
সৌভাগ্যলক্ষ্মী যিনি সৌভাগ্য প্রদান করেন,
রাজ্যলক্ষ্মী যিনি রাজগৃহে থাকেন, রাজসুখ প্রদায়িনী ,
বরলক্ষ্মী যিনি সকল প্রকার শুভ আশীষ ও সৌন্দর্য দান করেন
ইত্যাদি দেবীর নাম শোনা যায় ।
পুরানে আছে সাগর মন্থন কালে দেবী লক্ষ্মী সমুদ্র থেকে প্রকট হন । সাগর হল লক্ষ্মী দেবীর পিতা । সাগরেই মুক্তা , প্রবাল আদি রত্ন পাওয়া যায় । রত্ন হল ধন , যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন লক্ষ্মী ।
তিনি বিষ্ণুপ্রিয়া । তিনি শ্রী বিষ্ণুর সহধর্মিণী । তিনি সীতা , তিনি রাধা তথা রুক্মিণী । তিনি মহাপ্রভুর সহধর্মিণী লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী । তিনি ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেবের সহধর্মিণী মা সারদা । শরত ঋতু তে আমরা যে দুর্গাদেবীর পূজো করি তিনিও মহালক্ষ্মী স্বরূপা । দেবী লক্ষ্মী মহামায়া আদিশক্তির এক অংশ ।
দেবী লক্ষ্মী কে চঞ্চলা বলা হয় । কারণ লক্ষ্মী দেবী নাকি এক জায়গায় থাকেন না । ধন হস্তান্তর হয় । কুপাত্রের হাতে বিপুল ধন আসলে সে ধনের অসৎ প্রয়োগ করে লক্ষ্মী কে হারায় ।
রাবণ লক্ষ্মী সীতা দেবীকে অসৎ উপায়ে ভোগ করতে চেয়েছিলেন , এই কারনে গোটা লঙ্কা ধ্বংস হয়েছিল । রাবন নিহত হয়েছিলেন । এই থেকে আমরা শিক্ষা লাভ করি লক্ষ্মীর কৃপা সব সময় এ শুভ কাজেই ব্যবহার করা উচিৎ ।
এবং কখনো অসৎ উপায় অবলম্বন করে লক্ষ্মী প্রাপ্তির আশা করা উচিত নয় । না হলে রাবনের মতো আমাদেরও বিনাশ নিশ্চিত ।
কৃতজ্ঞতাঃ oneindia