একাদশী হিন্দুদের পূজার একটি বিশেষ দিন। এই দিনে হিন্দুরা উপবাস রেখে বিশেষভাবে ভগবান শ্রী-বিষ্ণুকে প্রসন্ন করার জন্য পূজা করে থাকেন। এই দিনে উপবাস রাখলে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ও জন্ম-জন্মান্তরের অনেক পাপ থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়। এতে আমাদের অনেক পাপ মোচন হয়। একাদশীর উপবাস প্রতি মাসে ২ বার পালন করা হয়। বছরে ২৪টি একাদশী পালন করার রীতি বা নিয়ম আমাদের হিন্দুশাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে।
হিন্দু ধর্মে প্রতিটি উৎসব এবং উপবাসের নিজস্ব পুণ্য ফল রয়েছে। সেই কারণেই ভক্তরা পূর্ণ ভক্তি সহকারে একাদশীর ব্রত পাঠ ও উত্সব পালন করে থাকেন। সনাতন ধর্মে, প্রতিটি দিনকে এক বা অন্য ঈশ্বরকে উৎসর্গ করা হয়। ভক্তরা প্রতি মাসে দুইবার একাদশীর ব্রত পালন করে থাকেন। অর্থাৎ উভয় সময়েই আর্ধমাসিকে পূর্ণ ভক্তিসহকারে ও বিশ্বাসের সাথে পূজা পাঠ ও পালন করে থাকেন। এই ব্রত ও উপবাস পালন করলে চিরস্থায়ী ফল লাভ করা যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। একাদশীর দিন ভক্তরা ঘরে সুখ ও সমৃদ্ধি বজায় রাখতে উপবাস রাখেন। একাদশী কৃষ্ণপক্ষে একটি ও শুক্লপক্ষে একটি, তবে একাদশীর দিন বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক বলে মনে করা হয়।
একাদশীতে কি কি বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হয় ও পালন করা উচিতঃ
১. একাদশীতে পঞ্চ রবিশস্য গ্রহণ নিষিদ্ধ, যদি গ্রহণ করেন ব্রত নষ্ট হবে।
২. একাদশী ব্রত করলে যে কেবল নিজের জীবনের সদগতি হবে শুধু তাই নয়, একাদশী পালনকৃত ব্যক্তির মৃত পিতা-মাতাও নরকে গমন থেকে উদ্ধার হবে।
৩. শাস্ত্রমতে, একাদশীতে অন্ন গ্রহন নিষিদ্ধ। এটি বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে অন্ন গ্রহণকারী ব্যক্তি নিন্ম জীবের যোনি প্রাপ্ত হোন। এর সাথে, যারা এই দিন একাদশীর উপবাস রাখেন না তাদেরও অন্ন গ্রহণ করা উচিত নয়।
৪. একাদশীতে পারন পঞ্জিকাতে একাদশী পালনের সময় দেয়া থাকে সেই সময়ের মধ্যে ভগবানকে ভোগ নিবেদন করে প্রসাদ গ্রহণ করার পরে পারণ করতে হয় বা করা উচিত। নয়তো একাদশী পালনে কোন ফল লাভ হয় না, নরকবাসী হতে হয় ।
৫. একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস নয়, নিরন্তর “শ্রী বিষ্ণুর” নাম জপ, মনে ও শ্রবণ-কীর্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হবে ।
৬. ধর্মীয় মতামত অনুসারে, একদশীর দিন ব্রহ্মাচার্য পালন করা উচিত। একাদশী সময়টি ভগবান “শ্রী বিষ্ণুকে” উত্সর্গ করা হয় বলে মনে করা হয়। তাই এই দিনে ভগবান শ্রীবিষ্ণুর যথাযথ আরাধনা বা উপাসনা করলে সুখ এবং সমৃদ্ধি আসে।
৭. একাদশীতে তর্ক-বিতর্ক থেকে বিরত থাকতে হয়। এই দিনে আরও বেশি করে জগৎ পালক “শ্রী বিষ্ণুর” নাম ধ্যান করা উচিত।
৮. একাদশীর দিনে কখনও কোনো মহিলাকে অপমান করা যাবে না। এটি বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনটিতে যারা মহিলাদের অপমান করবে তারা আজন্মকাল দুর্ভোগ ভোগ করে। কারন, “শ্রী বিষ্ণুর” পত্নী মাতা “লক্ষ্মী দেবী” তিনি একজন নারী বা মহিলা। তাই নারীকে অপমান করলে “শ্রী বিষ্ণু” পত্নীকে অপমান করা হয়।
একাদশীতে কি শ্রাদ্ধ করার নিয়ম রয়েছেঃ
হ্যাঁ শ্রাদ্ধ করা যায় । মানবজাতির মধ্যে ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্য এই চার জাতেরই পিন্ডদান বিধি একই। পিন্ডের দ্রব্যাদিও চার জাতের জন্য একই। ১৩ দিনের দিন যেহেতু যমদূতেরা মৃতব্যক্তিকে নিয়ে যমালয়ে দিকে যাত্রা শুরু করেন, তাই শ্রাস্ত্র সিদ্ধান্ত হলো ১০ দিন অশৌচ পালন ও ক্ষৌরকর্ম, ১১ দিনে শ্রাদ্ধ বা পিন্ডদান (একাদশী থাকলে ১২ দিনে)। ১৩ দিনের দিন যেহেতু যমদূতেরা মৃতব্যক্তিকে নিয়ে যমালয়ে দিকে যাত্রা শুরু করেন, তবে ১৩, ১৫, ২০ অথবা ৩০ দিনে শ্রাদ্ধ বা পিন্ডদান করলে সেই পিন্ড খাবে কে? ব্রাহ্মণেরা এইভাবে আমাদেরকে ভুল পথে চালিত করছে । এইজন্য আমাদের ধর্মকে ভালোভাবে জানতে হবে।
মাসিক চলাকালীন কি একাদশীর ব্রত পালন করার নিয়ম রয়েছেঃ
এক্ষেত্রে ‘শ্রীশ্রীহরিভক্তিবিলাস’ এ শ্রীল সনাতন গোস্বামীপাদ মহর্ষি শৃঙ্গির কথা উল্লেখ করে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দিয়েছেন ।
” একাদশ্যাং ন ভূঞ্জিথাঃ নারী দৃষ্টা রজস্যাপি “
অর্থাৎ নারী যদি রজস্বলাও হয় তথাপি একাদশীতে খাদ্য গ্রহণ করবে না। অর্থাৎ, মাসিক হলেও একাদশী পালন কর্তব্য।
একাদশীতে কি লবণ খাওয়ার নিয়ম রয়েছেঃ
হ্যাঁ অবশ্যই সন্ধুক লবণ ব্যবহার করতে হবে, এটা সকল উপবাসের জন্য প্রযোজ্য।
একাদশীতে কি বাদাম খাওয়ার নিয়ম রয়েছেঃ
হ্যাঁ। বাদাম ছাড়াও অন্যান্য খাবার যেমনঃ দুধ, কলা, আপেল,আঙ্গুর, আনারস, আখঁ, আমড়া, তরমুজ, বেল, মিষ্টি আলু ও লেবুর শরবত ইত্যাদি ফলমূল খাওয়ার নিয়ম আছে খেতে পারেন।
একাদশীতে মৃত্যু হলে কি করনীয়ঃ
একাদশী থাকাকালীন যদি কারো মৃত্যু হয় তাহলে, সে স্বর্গে নয় তৎক্ষণাৎ বৈকুন্ঠলোকে গমন করে।
একাদশীর আগের দিন কি সহবাসের নিয়ম আছেঃ
না, একাদশী পালনের সময় আমাদের অবশ্যই সংযমী হতে হবে। একাদশীর আগের দিন, সহবাস সম্পূর্নভাবে নিষিদ্ধ।
একাদশীতে কি ঔষধ খাওয়ার নিয়ম রয়েছেঃ
একাদশী,জন্মাষ্টমী ইত্যাদি উপবাসে ঔষধ খেলে উপবাস বা ব্রত ভেঙ্গে যাবে না। এর প্রমাণ স্বরূপ হরিভক্তি বিলাসে (১২/৪০) এবং জৈবধর্ম গ্রন্থে মহাভারতের উদ্যোগপর্ব থেকে উল্লেখপূর্বক বলা হয়েছেঃ
অষ্টৈতানাব্রতাঘ্নানি আপো মূলং ফলং পয়ঃ।
হবির্ব্রাহ্মণকাম্যা চ গুরোর্বচনমৌষধম্।।
অনুবাদ- আটটি দ্রব্য গ্রহনে ব্রত ভেঙ্গে যায় না । তা হলো জল, মূল, ফল, দুধ, ঘৃত, ব্রাহ্মণকাম্যা, গুরুদেবের বচন এবং ঔষধ।”
ঔষধে যদি পঞ্চ রবিশস্য মেশানো থাকে, তাহলেও তা গ্রহন করা যাবে। কারণ ঔষধের মধ্যে বিভিন্ন দ্রব্যাদির মিশ্রন থাকাটা স্বাভাবিক।
যেহেতু মূল শ্লোকের মধ্যে ” ঔষধম্” শব্দটি রয়েছে,তাই যে দ্রব্য দিয়েই তৈরি হোক না কেন, যদি তা রোগ নিরাময়ের ঔষধ হয় তবে উপবাসে তা সেবনে কোন বাধা নেই।
একাদশীতে কি সাবু খাওয়ার নিয়ম রয়েছেঃ
একাদশীর তিথির সময়ের মধ্যে চাল, গম, তৈল, যব ও ভুট্টা এই পাঁচ প্রকার শস্য থেকে প্রস্তুত কোনো প্রকার খাবার গ্রহণ নিষেধ। একাদশী তিথির দৈর্ঘ্য সাধারণত ২৬/২৭ ঘন্টা। এই দীর্ঘ সময় কেউ যদি কেউ না খেয়ে থাকে, তাহলে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে এবং তার প্রতিদিনের জীবনযাত্রার কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হবে। সেজন্য একাদশী তিথির মধ্যে একবার যেকোনো ফল, জল এবং দুধ খাবার বিধান রয়েছে, এই সময়
সাবুও গ্রহণ করা যায় একারণে যে সাবু উপরে উল্লেখ করা পঞ্চ রবিশস্যের মধ্যে পড়ে না।
সাবু একটি গাছের গুড়ার ফল থেকে তৈরি । বিষয়টি কাছাকাছি হলেও কিছুটা ভিন্ন। সাবু, পাম গাছের কাণ্ডের ভেতরের নরম অংশ থেকে তৈরি করা হয় । সাবুতে শর্করা, আমিষ, খনিজ লবন এবং বিভিন্ন রকম ভিটামিন আছে, এটি খুবই সহজে হজম হয় বলে সাধারণত শিশু এবং রোগীদের খাওয়ানো যেতে পারে।
একাদশীতে কি জল খাওয়ার নিয়ম রয়েছেঃ
হ্যাঁ, তবে যারা নির্জলা একাদশী পালন করবেন তারা জলপান করতে পারবেন না । তবে, শিশুরা পঞ্চ রবিশস্য বাদে সকল ফলমূলাদি এবং জলপান করতে পারেন। তবে সেটা দুপুরের পরে সময়ে হলে উত্তম হয়।
একাদশীতে কি সিগারেট খাওয়ার নিয়ম রয়েছেঃ
যারা সাত্ত্বিক আহারী নন এবং চা, বিড়ি, সিগারেট, পান, কফি ইত্যাদি নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করেন, একাদশী ব্রত পালনের সময়কালীন পর্যন্ত এগুলি সেবন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। শাস্ত্রে এমনিতেই মাদকদ্রব্য সেবনকে পাপ বলা হয়েছে । আর এই পাপ যদি আপনি একাদশীর দিন করেন। তাহলে, তার ক্ষমা আপনি কোনদিনও পাবেন না। সুতরাং সাবধান থাকুন। একাদশীর দিনে কোন মাদকদ্রব্য সেবন করা যাবে না।
আরো আপডেট পেতে
Bangla Panjika 2023 Paji 1430 Download করুন
For Bangla Calendar, Bangla Panjika, Bengali Calendar, Horoscope download Bangla Panjika 2023 Paji 1430