জগদ্ধাত্রী যে দুর্গারই বিকল্প রূপ, তার প্রথম সুস্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায় শ্রীশ্রীচণ্ডীতে। সেখানে বলা আছে, যুদ্ধের সময় মত্ত মহিষাসুর নানা মায়ারূপ ধরে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন দেবীকে। একবার সেই প্রচেষ্টায় মহিষাসুর ধারণ করেন হস্তীরূপ। সেই হস্তী দেবীকে বধের চেষ্টা করলে দুর্গা ধারণ করেন এক চতুর্ভুজা মূর্তি। চক্রদ্বারা তিনি ছেদন করেন হাতির শুঁড়টি। সেই রূপটিই জগদ্ধাত্রীর। সেই জন্যই ধ্যানমন্ত্রে কোথাও উল্লেখ না থাকলেও মূর্তিতত্ত্বে আমরা দেখছি, জগদ্ধাত্রী বাহন সিংহ এক হস্তীর মৃত শরীরের উপর দাঁড়িয়ে। কখনও বা সেই সিংহ খেলা করে হস্তীর কাটা মাথা নিয়ে। সংস্কৃতে হাতির একটি নাম করী, সেই অনুসারে অসুরটির নাম করীন্দ্রাসুর। তাকে বধ করেন বলে জগদ্ধাত্রীর অপর নাম করীন্দ্রাসুরনিসূদিনী।
রামকৃষ্ণ পরমহংসের ভাষায়, “মন করীকে যে বশ করতে পারে তারই হৃদয়ে জগদ্ধাত্রী উদয় হন।… সিংহবাহিনীর সিংহ তাই হাতীকে জব্দ করে রেখেছে।” স্বামী নির্মলানন্দের মতে, “যে-কোনো সাধনায় মনকে সংযত করে বশে আনা সাধনার অপরিহার্য অঙ্গ। আমাদের মন মত্ত করী, মন-করীকে বশ করতে পারলে সাধনায় সিদ্ধিলাভ অবশ্যম্ভাবী।… মত্ত মন-করীকে বশ করে সাধক-হৃদয়ে জগদ্ধাত্রীর প্রতিষ্ঠায়ই জগদ্ধাত্রী-সাধনার সার্থকতা, পূজার পরিসমাপ্তি।” করীন্দ্রাসুর এর বর্ণনা ওই নামে না থাকলেও চণ্ডীতে উল্লেখ আছে মহিষাসুর এক মহাহস্তি রুপে দেবীকে আক্রমণ করে এবং দেবী তার মুণ্ড চ্ছেদ করেন…… তখন সে এক পুরুশ রুপে অবতীর্ণ হয়ে দেবীকে যুদ্ধে আওভান করলে ……… মা তাকে তিরে বিদ্ধ করেন……… এই তির ধনুক দেবির এই মূর্তিতে বর্তমান।।
সর্বদেবহিতার্থায় দুর্বৃত্তশমনায় চ।।
আবিরাসীৎ জগচ্ছান্ত্যৈ যুগাদৌ পরমেশ্বরী।।
-দেবগণের হিত, দুর্বত্তের প্রশমন এবং জগতের শান্তিবিধানের জন্য যুগের প্রারম্ভে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের মঙ্গলবারে পরমেশ্বরী (জগদ্ধাত্রী) আবির্ভূতা হলেন।
কার্তিকোঽমলপক্ষস্য ত্রেতাদৌ নবমেঽহনি।
পূজয়েত্তাং জগদ্ধাত্রীং সিংহপৃষ্ঠে নিষেদূষীম্।।
-ত্রেতাযুগের প্রারম্ভে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে সিংহপৃষ্ঠে সমাসীনা দেবী জগদ্ধাত্রীর পূজা করিবে।