কেন রথযাত্রার জন্য সোনার কুড়াল দিয়ে ৮৮৪টি গাছ কাটতে হয়? কতটা সত্যি? জেনে নিন।

কেন রথযাত্রার জন্য সোনার কুড়াল দিয়ে ৮৮৪টি গাছ কাটতে হয়? কতটা সত্যি? জেনে নিন।

প্রতি বছর পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, আষাঢ় মাসে ভগবান জগন্নাথদেবের রথযাত্রা পালন করা হয়। পঞ্জিকা অনুসারে, এ বছর ২০ জুন, জগন্নাথদেবের রথযাত্রার উত্‍সব পালিত হবে।
পুরুষোত্তম জগন্নাথ ‘দারুব্রহ্ম’ নামেও পরিচিত। দারু কথার অর্থ হল কাষ্ঠ বা কাঠ, আর সেই কাঠ হল নিমকাঠ।জগন্নাথ-সুভদ্রা ও বলরামের দেহ তৈরি হয় পবিত্র নিমকাঠ দিয়ে। প্রসারিত চোখ নিয়ে জগন্নাথদেবের অসম্পূর্ণ মূর্তি তৈরি করতে এই নিমকাঠই ব্যবহার করা হয়। পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, প্রতি বছর আষাঢ় মাসে ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রা পালন করা হয়। পঞ্জিকা অনুসারে, এ বছর ২০ জুন, জগন্নাথদেবের রথযাত্রার উত্‍সব পালন করা হবে।

নিয়ম অনুসারে, ভগবান জগন্নাথদেবের জন্য রথের তৈরির কাজ কয়েক মাস আগে থেকে শুরু করা হয়। আর রথ তৈরী করতে ব্যবহৃত কাঠ একটি সোনার কুড়াল দিয়ে কাটা হয়। ভগবান জগন্নাথকে নিয়ে যেমন অনেক লোককথা রয়েছে, তেমনি রথযাত্রাকে নিয়েও রয়েছে বিভিন্ন লোকমত যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে প্রকাশিত হয়।

 

জগন্নাথদেবের রথ তৈরির নিয়মাবলী:
রথ তৈরি করতে প্রায় “দুই” মাস সময় লাগে। এই সময়েও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মেনে চলতে হয়। সাধারণত একটি রথ তৈরিতে, প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কাঠ নির্বাচন করা। প্রথা অনুসারে, রথের জন্য পেরেক বা কাটা কাঠ ব্যবহার যায় না। রথের কাঠ হতে হবে সোজা ও খাঁটি এবং মজবুত। রথ প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত কারিগররাও পুরো “দুই” মাস সেখানে উপস্থিত থাকেন। প্রাচীন নিয়মকানুন মেনে পদ্ধতি মেনে রথ তৈরি করা হয়।

রথ তৈরির কারিগররা বংশপরম্পরায় উত্তরাধিকার সূত্রে একই কাজ সারা বছর করে থাকেন। রথ তৈরি করার সময় একই সাথে খান। । এইসময় তাঁরা কেউই আমিষ খাবার গ্রহণ করেন না। একদম সাধারণত খাবার খাওয়ার নিয়ম রয়েছে। এই সময়ে, কারিগরদের ব্রহ্মচর্য পালন করা বাধ্যতামূলক বা অতি আবশ্যক। সুতক বা রক্ষকের মতো কারিগরের পরিবারের কোনও সদস্যের সাথে যদি কোনও অপ্রীতিকর বা বিশ্রী কোন ঘটনা ঘটে, তবে সেই কারিগরকে রথ তৈরির কাজ থেকে সরে বা বেরিয়ে আসতে হবে।

 

রথ তৈরিতে সোনার কুড়ালের ব্যবহার
জগন্নাথদেবের রথযাত্রার জন্য রথ নির্মাণ কাজ শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকেই। রথ নির্মাণের জন্য নির্দিষ্ট জঙ্গল থেকে কাঠ আনা হয়। সেই নিম গাছের জঙ্গলের কাঠ নির্বাচন করার সময় মন্দির কমিটির শ্রমিকরা বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য পাঠান। তারপরে যে বৃক্ষের কাঠগুলি রথ তৈরিতে ব্যবহার করা হবে, সেই বৃক্ষগুলিকে পুজো করেন। পুজোর পর সেই বৃক্ষগুলি সোনার কুড়াল দিয়ে কাটা হয়। সেই সোনার কুড়াল প্রথমে ভগবান জগন্নাথের বিগ্রহের কাছে স্পর্শ করা হয় তারপর সোনার কুড়াল দিয়ে সেই কাঠ কাটার কাজ মহারানারা করে থাকেন।

 

রথ নির্মাণে যে কাঠ নির্বাচন করা হয়:
জগন্নাথের রথ নির্মাণে ব্যবহার করা হয় নিম ও হাসি গাছের কাঠ। রথযাত্রায় ভগবান জগন্নাথ, জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বলরাম ও কনিষ্ঠ ভ্রাতী সুভদ্রার প্রত্যেকের জন্য একটি করে রথ নির্মাণ করা হয়। এভাবে মোট “তিনটি” রথ তৈরি হয়। ৩ টি রথ তৈরীর জন্য প্রায় ৮৮৪টি গাছের ১২-১২ ফুট কাণ্ডও ব্যবহার করা হয়। এই কাঠ দিয়ে রথের খুঁটিগুলি তৈরি করা হয়।

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.