হিন্দুধর্মালম্বীরা আদিকাল থেকে প্রকৃতির পূজা করে আসছেন। প্রকৃতির মধ্যে থাকা সকল সৃষ্টি যেমনঃ নদী-সাগর, পাহাড়-পর্বত, বৃক্ষ বা গাছ গাছালি, পশু-পাখি, অরণ্য বা বন ইত্যাদি। তার মধ্যে বৃক্ষ অন্যতম। তার জগদীশচন্দ্র বলেছেন, বৃক্ষের প্রাণ আছে। তারা মানুষের মতই জীবন ধারণ করে তবে একটু ভিন্নভাবে। বৃক্ষ সূর্যালোক ও ক্লোরোফিলের উপস্থিতিতে পানি ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে কাজে লাগিয়ে শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে যাকে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বলে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় আলোকশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রুপান্তরিত হয়। সবুজ উদ্ভিদে প্রস্তুতকৃত খাদ্য উদ্ভিদ নিজে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বিপাকীয় প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে ব্যবহার করে এবং অবশিষ্ট খাদ্য ফল, মূল, কান্ড, অথবা পাতায় সঞ্চিত রাখে। উদ্ভিদে সঞ্চিত এই খাদ্যের উপরেই মানবজাতি ও অন্যান্য জীবজন্তুর অস্তিত্ব নির্ভর করে। অর্থাৎ পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বৃক্ষ ছাড়া আমাদের জীবন ধারণ অসম্ভব। প্রকৃতিতে বৃক্ষ না থাকলে আমরা খাদ্যাভাবে মারা যাবো।
সনাতন ধর্মালম্বীরা বৃক্ষকে তাদের সকল কার্যক্রমের একমাত্র উপকরন হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন । পূজার অনুষ্ঠানে নৈবদ্য থেকে শুরু করে দেব-দেবীদের আরাধনা সহ সকল ক্ষেত্রে বৃক্ষ ও তার অংশ বিশেষ যথাঃ ফুল, ফল, পাতা, বীজ প্রভৃতি অতি প্রাচীনকাল তথা আর্য সভ্যতা থেকে ব্যবহার করা হয়ে আসছে।যেমন দুর্গাপূজায় ব্যবহৃত “কলা বৌ” এর শাস্ত্রীয় নাম হচ্ছে “নবপত্রিকা”। নবপত্রিকা বলতে নয়টি গাছের চারা বুঝায়। সেগুলো হচ্ছেঃ
১) কদলী।
২) কালো কচু।
৩) হরিদ্রা বা হলুদ।
৪) জয়ন্তী।
৫) বেল বা বিল্ব।
৬) দাড়িম্ব।
৭) অশোক।
৮) মানকচু।
৯) ধান্য।
এই নয়টি গাছের চারাকে শ্বেত অপারাজিতা লতা দিয়ে চারিদিকে পেঁচিয়ে কলা বৌ সাজানো হয়। সমষ্টিগতভাবে মা দূর্গার প্রতিনিধিরূপে এদের পূজা করা হয় । এজন্য এ বৃক্ষগুলোকে নিয়ে চন্ডিতে একটি শ্লোক আছে আছে।
”রম্ভা কচ্ছী হরিদ্রাচ জয়ন্তী বিল্ব দাড়িমৌ
অশোক মানকশ্চৈব ধান্যঞ্চ নব পত্রিকা”
শুধু তাই নয় এই নয়টি গাছের প্রত্যকটির আবার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা আছেন ।
১) কদলী (কলা) এর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হলেন ব্রাক্ষ্মণী
২) কচ্চি (কালো কচু) এর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হল কালিকা
৩) হরিদ্রা বা হলুদ এর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হল দুর্গা
৪) জয়ন্তী এর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হল কার্তিকা
৫) বেল বা বিল্ব এর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হল শিবা
৬) দাড়িম্ব এর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হল রক্তদন্তিকা
৭) অশোক এর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হল শোকরহিতা
৮) মানকচু এর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হল চামুন্ডা
৯) ধান্য এর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হল লক্ষ্মী
হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, শিকড় থেকে শুরু করে পাতা, ফল ও বীজ সব ধরনের বৃক্ষের সাথে যুক্ত, মানুষের কষ্ট দূর করার এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও সৌভাগ্য বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে।
হিন্দুশাস্ত্রে, সব ধরনের বৃক্ষের পূজা করার বিধান রয়েছে। বেশ কিছু গাছের সাথে যুক্ত রয়েছে হিন্দু দেবদেবী। শুধু আশীর্বাদই নয়, ভক্তের সকল মনস্কামনা পূরণও করেন।
হিন্দুধর্মালম্বীরা, বিভিন্ন বৃক্ষকে ঈশ্বরের মতো পবিত্র ও পূজার যোগ্য বলে বিশ্বাস করেন। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, এই বৃক্ষগুলিতে সকল দেব-দেবী বসবাস করেন, যা পূজা করলে ব্যক্তির জীবনের সকল ধরণের দুঃখ-কষ্ট দূর হয় এবং সকলের মনস্কামনা পূরণ হয়।
হিন্দু জনমত অনুসারে, শিকড় থেকে শুরু করে পাতা, ফল ও বীজ সব ধরনের বৃক্ষের সাথে যুক্ত, মানুষের কষ্ট দূর করার এবং সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে। হিন্দু লোকমত অনুসারে, কোন কোন বৃক্ষ পূজা করলে কী ফল পাওয়া যায়, চলুন জেনে নেই এখানেঃ
আমলা বৃক্ষঃ
এই বৃক্ষকে হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। কারণ এর জন্ম দেবী লক্ষ্মীর অশ্রু জল থেকে বলে মনে করা হয়। এতে ভগবান ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহাদেব বসবাস করেন বলে বিশ্বাস করা হয়। এই বৃক্ষের পূজা করলে শ্রী বিষ্ণুর বিশেষ আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
লোকমত অনুসারে যে যে ব্যক্তি আমলকি বৃক্ষের পূজা করেন তার উপর ভগবান শ্রী বিষ্ণু ও দেবী লক্ষ্মীর কৃপা বর্ষণ হয়, যার ফলে তিনি সকল সুখ অনুভব করেন এবং অবশেষে মোক্ষ লাভ করেন।
আম বৃক্ষঃ
হিন্দু ধর্মে আম বৃক্ষকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। এই গাছের পাতা, কাঠ, ফল সবই পূজার কাজে লাগে, তাই এর ধর্মীয় প্রয়োজনীয়তা রয়েছে যা অপরিসীম। বাড়ির সদর দরজায় যদি আমের পাতা ও কদম ফুল দিয়ে তৈরি বনমালা লাগানো হয়, তাহলে সেই ঘরে কখনও দুঃখ-দুর্দশা প্রবেশ করতে পারে না। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, ভগবান হনুমান আম ফল খুব পছন্দ করেন।
কলা বৃক্ষঃ
হিন্দুধর্ম অনুসারে, একটি কলা বৃক্ষের পূজা করলে ভক্তরা ভগবান শ্রী বিষ্ণু, ভগবান সত্য নারায়ণ ও দেবগুরু বৃহস্পতির আশীর্বাদ লাভ করেন। যদি কারোর জীবনে সুখের শূন্যতা দেখা যায় বা বিয়ে দেরিতে হয়, তাহলে প্রতিদিন একটি কলা বৃক্ষের পূজা করলে শুভ ফল পাওয়া যায়।
লজ্জাবতী গাছঃ
সনাতন ঐতিহ্যে শর্মীতা বা লজ্জাবতী বৃক্ষের অনেক ধর্মীয় ও জ্যোতিষশাস্ত্রীয় প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। হিন্দুশাস্ত্র মতে, যে বাড়িতে লজ্জাবতী বৃক্ষ থাকে, সেখানে কখনও শনির প্রভাব পড়ে না।
শিবলিঙ্গে লজ্জাবতীর পাতা নিবেদন করলে বেলপত্রের চেয়েও বহুগুণ বেশি শুভ ফল পাওয়া যায়। লজ্জাবতীর শিকড় পরিধান করলে ব্যক্তি শনি সংক্রান্ত দোষ থেকে পরিত্রান পায়।
তুলসী বৃক্ষঃ
সাধারণত হিন্দুদের গৃহে তুলসী বৃক্ষ দেখা যায়। কারণ হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, রোজ তুলসী বৃক্ষের পূজা করলে ঘর ও জীবনের সাথে যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট নিঃশেষ হয়ে যায়। সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য বিরাজমান থাকে।
হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, তুলসীকে বিষ্ণুপ্রিয়া রূপে দেখা হয়। প্রতিদিন ধূপ ও জল অর্পণ করে পূজা করলে ভক্তরা শ্রী বিষ্ণুর সম্পূর্ণ আশীর্বাদ পেয়ে থাকেন।
আরো আপডেট পেতে
Bangla Panjika 2023 Paji 1430 Download করুন
For Bangla Calendar, Bangla Panjika, Bengali Calendar, Horoscope download Bangla Panjika 2023 Paji 1430