জন্মাষ্টমী ২০২৩ কখন উপবাসের সময়, দিনক্ষণ ও পারনের সময়সূচী? চলুন জেনে নেই!

 

কৃষ্ণ হলেন সনাতন হিন্দুধর্মে পরম পুরুষোত্তম ভগবান। পুরাণ অনুযায়ী তিনি বিষ্ণুর অষ্টম অবতার। তাঁকে সর্বোচ্চ ভগবান (পরম সত্ত্বা) উপাধিতে ভূষিত করা হয় এবং তিনি ভগবদগীতা-এর উদ্ভাবক। ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম উৎসব পালন করা হয়। তিনি স্বয়ং ভগবান। তার আবাসস্থল হল গোলক, বৃন্দাবন, গোকুল, দ্বারকা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রণাম মন্ত্রঃ
“ওঁ নমঃ ভগবতে বাসুদেবায়”।
তিনি যদু বংশের রাজা ছিলেন। যাকে আমরা যাদব শ্রেষ্ঠ “বাসুদেব” বলে চিনে থাকি। সনাতন ধর্মাবলম্বী, বিশেষত বৈষ্ণবদের কাছে জন্মাষ্টমী গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই উৎসব নানা ভাবে উৎযাপন করা হয়, যেমন: ভগবত পুরাণ অনুযায়ী নৃত্য, নাটক যাকে বলা হয় রাসলীলা বা কৃষ্ণলীলা, মধ্যরাত্রি তে কৃষ্ণের জন্মের মুহূর্তে ধর্মীয় গীত গাওয়া, উপবাস, দহিহান্ডি প্রভৃতি। জন্মাষ্টমী বিশেষভাবে পালন করা হয় মথুরা এবং বৃন্দাবনে। এছাড়াও বাংলাদেশের ঢাকা প্রভৃতি জায়গা ও অন্য দেশে জন্মাষ্টমী পালন করা হয়।

এই বছর কবে পালিত হবে জন্মাষ্টমীঃ
প্রতি বছরের মতো এবারও শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর তারিখ নিয়ে ভক্তদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে প্রতি বছর জন্মাষ্টমীর উৎসব দুই দিন ধরে পালন করা হয়। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, প্রতি বছর ভাদ্র মাসে, শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে জন্মাষ্টমী পালন করা হয়। হিন্দি ক্যালেন্ডার অনুসারে, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি।

পুরাণ অনুসারে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রোহিণী নক্ষত্রে মধ্যরাতে ১২টায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই বিশ্বাস অনুসারে, ৬ সেপ্টেম্বরেই জন্মাষ্টমী পূজা ও উপোস পালন করা উচিত। এদিনই উত্তম সময়। শুধু তাই নয়, রোহিনী নক্ষত্রের পাশাপাশি এদিন অলৌকিকভাবে কাকতালীয় হতে চলেছে। বিরল যোগের কারণে এবারের জন্মাষ্টমী অধিক শুভ হতে চলেছে। জানা গিয়েছে, বৈষ্ণব ধর্মে যারা বিশ্বাসী, তারা ৭ সেপ্টেম্বর শ্রীকৃষ্ণের পূজা করে থাকেন।

এ বছর জন্মাষ্টমী পুজার শুভ সময়সূচীঃ

বাংলাদেশ সময় অনুসারেঃ

রাত ১১ টা ৪৬ মিনিট  থেকে  ১২ টা ২৯ মিনিটের মধ্যে শ্রী শ্রী কৃষ্ণদেবার্বিভাব মোহরাত্রি অনুষ্ঠান।

স্মার্তমতে উপবাস ৬ সেপ্টেম্বর শুরু হবে এবং ৬ সেপ্টেম্বর পুরো চলবে।

৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ৩ টা ৪৭ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড পরে ব্রতের পারণ।

আবার গোস্বামীমতে ৭ সেপ্টেম্বর শ্রী শ্রী কৃষ্ণজন্মাষ্টমীব্রতম বা উপবাস।  এবং

৮ সেপ্টেম্বর দিবা ১০ টা ৫০ মিনিটের মধ্যে গোস্বামীমতে পারণ।

jonmastomi

 

ভারতীয় সময় অনুসারেঃ

রাত ১১ টা ১৬ মিনিট  থেকে  ১১ টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে শ্রী শ্রী কৃষ্ণদেবার্বিভাব মোহরাত্রি অনুষ্ঠান।

স্মার্তমতে উপবাস ৬ সেপ্টেম্বর শুরু হবে এবং ৬ সেপ্টেম্বর পুরো চলবে।

৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ৩ টা ১৭ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড পরে ব্রতের পারণ।

আবার গোস্বামীমতে ৭ সেপ্টেম্বর শ্রী শ্রী কৃষ্ণজন্মাষ্টমীব্রতম বা উপবাস।  এবং

৮ সেপ্টেম্বর দিবা ১০ টা ২০ মিনিটের মধ্যে গোস্বামীমতে পারণ।

জন্মাষ্টমী পূজার নিয়ম-কানুনঃ
১. এ দিনে ভগবান শ্রী কৃষ্ণকে দুধ ও গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করিয়ে অভিষেক করাতে হবে। এদিন নতুন নানা রঙের পোশাক পরিধান করানো হয়ে থাকে।
২. এরপর ময়ূরের পালক, বাঁশি, মুকুট, চন্দন, তুলসী পাতা ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয়।
৩. এরপর ফুল, ফল, মাখন, দই, চিনি, মিষ্টি, শুকনো ফল ইত্যাদি নিবেদন করা হয়।
৪. বাড়িতে গোপালঠাকুরের অভিষেক করাতে চাইলে দুধ, চিনি, দই, ঘি, মধু একসঙ্গে পঞ্চামৃত তৈরী করা হয়।
৫. তারপর শ্রীকৃষ্ণের সামনে প্রদীপ ও ধূপ জ্বালানো হবে।
৬. সর্বশেষে শ্রী কৃষ্ণের শৈশব রূপের বিগ্রহকে আরাধনা করে ও নাম জপ করে সকলের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করতে হবে।

পারণ করার উপকরণ হিসেবে আপনি রাখতে পারেন একটি তুলসিপত্র, কিছু আতপ চালের দানা, সাথে পবিত্র গঙ্গাজল। তিনটি উপকরণ একত্রে গ্রহণ করার মাধ্যমে উপবাসের সমাপ্তি করতে পারেন। জেনে রাখা ভালো যে কোনো একাদশী ব্রত পালনের জন্য নিজেকে পবিত্র রাখুন, সংযম পালন করুন এবং পারনের পর তিন পদের নিরামিষ তথা সাত্ত্বিক আহার করুন। এতে ব্রত পালনে সঠিক পূর্ণ্য লাভ করবেন।

 

জন্মাষ্টমী পালনের গুরুত্বঃ
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর ব্রত পালনে গুরুত্ব অধিক মূল্যবান এতে পুণ্য জমা হয়। ব্রত পালনে সময় নিজেকে সংযমী রাখুন, পবিত্রতা ও শুচিতা রক্ষা করুন, ভগবানের মহামন্ত্র জপ করুন, আস্তে কথা বলুন এবং ব্রত পালনের সময় ভারি খাবার বিরত রাখুন। উপবাসের জন্য সাত্ত্বিক আহারের বিধান রয়েছে সেসব খাবার গ্রহণ করতে পারেন। জন্মাষ্টমী ব্রতে ছোট বড় নারী পুরুষ উভয়ে উপবাস করতে পারবে।
শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর দিন উপবাস করলে সকলের মনষ্কামনা পূর্ণ হয়। এ দিনে নিয়ম মেনে যশোদা নন্দনের পূজা করলে সুখ ও সমৃদ্ধির আশীর্বাদ পাওয়া যায়। অন্যদিকে, যে দম্পতিরা সন্তান নিতে চান বা সন্তান সুখ থেকে বঞ্চিত, তাঁরাও জন্মাষ্টমীর দিন গোপালের পূজা করে থাকেন। এছাড়া শ্রীকৃষ্ণকে মাখন, দই, দুধ, ক্ষীর, চিনি, দধি, মিষ্টি নিবেদন করে থাকেন। এই ভোগ শ্রীকৃষ্ণের খুব প্রিয় খাবার।

 

আরো আপডেট পেতে

Bangla Panjika 2023 Paji 1430 Download করুন

For Bangla Calendar, Bangla Panjika, Bengali Calendar, Horoscope download Bangla Panjika 2023 Paji 1430

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.