দীপাবলির আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা
প্রত্যেক মানুষের মনের মধ্যে থাকে নানা রকম অন্ধকার। সেই অন্ধকার সৃষ্টি হয় বিভিন্ন কারণে ।যেমন লোভ,লালসা, মোহ, মায়া, মমতা, মাৎসর্য, এবং কামের মাধ্যমে হতে পারে। তেমনি অর্থ, ধন, প্রভাব-প্রতিপত্তি খ্যাতি এই সকল কিছুর ফলে আমাদের হৃদয়ে জন্ম নেয় নেয় অহংকার যা একপ্রকার নেগেটিভ এনার্জি ।এই অহংকারের অন্ধকার আমাদের চারিত্রিক উন্নতিতে অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।আর তাই দিপাবলী উৎসবে গৃহে প্রদীপ জ্বালিয়ে বাড়ির মধ্যে অন্ধকার দূর করার পাশাপাশি মনের গভীরে সকল অন্ধকার দূর করার চেষ্টা করা হয় ।যাতে আমরা আমাদের পথে এগিয়ে যেতে পারি কোনরূপ অহংকার বা অন্য কিছু চারিত্রিক অধঃপতন ছাড়াই । এছাড়াও নিরক্ষরতা অন্ধকারকে দূর করতেও জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালাতে উৎসাহিত করা হয় দীপাবলি উৎসবের মাধ্যমে।তমশাময় নিশীতে একটা প্রদীপের আলোই যথেষ্ট হয় মনে সাহস জোগানোর জন্য।তেমনি শত শত প্রদীপের আলোয় আমরা আমাদের মনে সাহস ফিরে পাই।কাঙ্খিত লক্ষ্য ফিরে পেতে সাহায্য করে এই প্রদীপের আলো।
দীপাবলির পৌরাণিক ব্যাখ্যা
রামায়ণ অনুসারে রামচন্দ্র পিতার আদেশ রক্ষা করার জন্য চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসে গিয়েছিল সীতার সঙ্গে।সঙ্গে গিয়েছিল ভ্রাতা লক্ষণ। আর তারপর ঘটনা পরম্পরায় রাক্ষস রাজ লংকেশ রাবণ সীতাকে হরণ করে সোনার লঙ্কায় নিয়ে যায়।রাম সীতাকে ফিরে পাওয়ার জন্য রাবনের সঙ্গে লড়াই করে তাকে হত্যা করে হনুমান ,বিভীষণ,বানর রাজা সুগ্রীব এবং অন্যান্য বানর সেনার সাহায্য নিয়ে।আর তারপর তার প্রানের প্রিয়া সীতাকে ফিরে পান। শ্রীরামচন্দ্রের চৌদ্দ বছরের দীর্ঘ বিরহে অযোধ্যাবাসী যখন কাতর হয়েছিলেন, তখন তিনি বনবাসলীলা শেষ করে ভক্ত হনুমানের মাধ্যমে ভ্রাতা ভরতের কাছে অযোধ্যা নগরীতে ফিরে আসার বার্তা প্রেরণ করেন। অশুভ পরাশক্তিকে নাশ করার পর দামোদর মাসে (কার্তিক মাস) কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে তিনি অযোধ্যা নগরীতে তার প্রাণপ্রিয় ভক্তদের মাঝে ফিরে আসবেন। তাই অযোধ্যাবাসী তাদের প্রাণপ্রিয় শ্রীরামচন্দ্রকে স্বাগত জানানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন।
কারণ তিনি প্রবেশ করে ধন্য করবেন এই নগরী। শ্রীরামচন্দ্রের আগমন বার্তা পেয়ে রাজা ভরত সমগ্র নগরে উৎসবের ঘোষণা দিলে সমগ্র নগরী আলোর উৎসবের সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে। সব অমঙ্গল, অকল্যাণ দূর হবে এই শুভ কামনায় পথে পথে, বাড়িতে বাড়িতে, গাছে গাছে সর্বত্রই মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখেন অযোধ্যাবাসী। শ্রীরামচন্দ্র অমাবস্যার অন্ধকারে প্রত্যাবর্তন করবেন, তাই সমগ্র অযোধ্যা নগরী আলোর প্রদীপ দিয়ে সাজানো হল যেন তাদের প্রাণপ্রিয় শ্রীরামচন্দ্র অমাবস্যার অন্ধকার দূর করে মঙ্গলময় আলোকে নগরীতে প্রবেশ করেন। লোকশিক্ষা দেয়ার জন্য অশুভ শক্তির প্রতীক, মহাপরাক্রমশালী অসুর রাবণকে বিনাশ করে এই পুণ্যলগ্নে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র তার প্রিয় ভক্তদের মাঝে ফিরে এসেছিলেন। আর আজ আমরা যেদিন দীপাবলি উৎসব পালন করছি ত্রেতা যুগে সেই দিনে পুনরায় অযোধ্যায় ফিরে আসেন । এই বিশেষ দিনে এছাড়াও তারা সেই নানা শব্দবাজি বা ফটকা ফোটান এবং রং মশাল জ্বালান।আর তাই এই শুভ দিনকে প্রত্যেক বছর মহা ধুমধামের সঙ্গে পালন করা হতে থাকে।যা পরবর্তীতে সারা ভারত জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
সোর্সঃ সংগৃহিত