পৃথিবীর কোন বিখ্যাত মন্দিরে সযত্নে কৃষ্ণের হৃদয় সচল অবস্থায় প্রতিষ্ঠিত রয়েছে? চলুন জেনে নেই!

শ্রীকৃষ্ণকে সনাতনধর্মে পরম পুরুষোত্তম ভগবান বলে আমরা জেনে থাকি। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের জন্য এই পৃথিবীতে ভগবান “শ্রীকৃষ্ণের” আগমনের মূল কারন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ১০৮ টি নাম রয়েছে। তার মধ্যে কানাই নামটি খুবই পরিচিত। এই নামেই তার পালক পিতা মাতা তাকে ডেকে থাকেন। তার পালক মাতার নাম যশোদা ও পিতার নাম নন্দলাল। জন্মধাত্রী মা দেবকী ও জন্মদাতা পিতা বসুদেব।
পুরাণমতে, তিনি বিষ্ণুর অষ্টম অবতার। কংস বধের জন্য বিশেষ করে পরম অবতার “শ্রীকৃষ্ণের” জন্ম হয়েছিল। তাঁকে সর্বোচ্চ ভগবান (পরম সত্ত্বা) উপাধিতে ভূষিত করা হয় এবং তিনি ভগবদগীতা এর উদ্ভাবক। ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম উৎসব পালন করা হয়। তিনি স্বয়ং ভগবান। তার আবাসস্থল হল গোলক, বৃন্দাবন, গোকুল, দ্বারকা।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রণাম মন্ত্রঃ
“ওঁ নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় নমঃ”।
তিনি যদু বংশের রাজা ছিলেন। যাকে আমরা যাদব শ্রেষ্ঠ “বাসুদেব” বলে চিনে থাকি।

রহস্যেভরা পুরীর জগন্নাথের মন্দির হলো দেশের অন্যতম তথা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অতি পুরাতন পবিত্র হিন্দু মন্দির। পুরাণমতে, এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে জগন্নাথদেবের আসল বিগ্রহ।
জনশ্রুতি আছে, জন্মাষ্টমীতে সেখানে অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটে। কিছুদিন আগে উদযাপিত হয়েছিল হিন্দুদের অন্যতম জনপ্রিয় উত্‍সব জন্মাষ্টমী। তবে অনেকে জানেন না, শ্রীকৃষ্ণ এখনও আমাদের মধ্যে বেঁচে রয়েছেন। শুনতে অবাক লাগলেও, শ্রীকৃষ্ণের হৃদপিন্ড এখনও সচল রয়েছে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে পরম যত্নে। কোথায় রাখা রয়েছে, তা জানলে আশ্চর্য হবেন। কারণ, এই মন্দিরের আর কোথাও নয়, রয়েছে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের গর্ভগৃহে। শ্রীকৃষ্ণের হৃদপিন্ড এই মন্দিরের এমন গোপন স্থানে রাখা রয়েছে, যা এখনও পর্যন্ত জনসাধারণের দৃষ্টিগোচরে আনা হয়নি।
রহস্যেভরা পুরীর জগন্নাথের মন্দির হলো দেশের সেরা বিশ্বের বিশেষ পবিত্র হিন্দুদের মন্দির। পৌরাণিক ইতিহাস অনুসারে, এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথদেব আসলে শ্রীকৃষ্ণেরই একটি রূপ। জগন্নাথদেবের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করার সময় শ্রীকৃষ্ণের এই হৃদপিণ্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সাধারণত নিমকাঠ দিয়ে নির্মাণ করা হয় জগন্নাথদেবের বিগ্রহ যা প্রতি ১২ বছর অন্তর অন্তর ২০১৫ সালে শেষ বার নবকলেবর নির্মাণ করা হয়েছিল। সেই সময় সুরক্ষিত ব্রহ্ম পদার্থ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

এই ব্রহ্ম পদার্থ আসলে কি?
শাস্ত্রমতে, মহাভারতের যুদ্ধের প্রায় ৩৬ বছর পর শ্রীকৃষ্ণের মনুষ্য ধারণকৃত রূপের মৃত্যু হয়েছিল। মহাভারতের সাথে শ্রীকৃষ্ণের চরিত্র বিশেষ জরুরী ভূমিকা ছিল। মহাকাব্যের প্রধান ব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবদের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ফলাফলের ভবিষ্যত সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন। তবুও কেন তিনি কৌরবদের রক্ষা করলেন না, সেই নিয়ে গান্ধারী ভীষণ রেগে ছিলেন। জিজ্ঞেস করলে কোনরকম সঠিক উত্তর দেননি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। সন্তান হারানো গান্ধারী শ্রীকৃষ্ণকে ক্ষুব্ধ হয়ে অভিশাপ দিয়েছিলেন, যে ভাবে ভাই-ভাই লড়াই করে কুরুবংশ নিশেষ হয়েছে, সেইভাবে নিজেদের মধ্যে লড়াই করে যদু বংশও বিনাশ হয়ে যাবে। গান্ধারীর অভিশাপ পরিপক্কতা পায় ৩৫ বছর পরে। তবে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল শ্রীকৃষ্ণের পুত্র সাম্বের মাধ্যমে। একবার সপ্ত ঋষি এসেছিলেন কৃষ্ণ ও বলরামের সাথে দেখা করতে। সেই সময় সাম্ব সপ্ত ঋষির সাথে মজার ছলে গর্ভবতী সেজে বিরক্ত করে তোলেন। তাঁর পেটে রাখা ছিল একটি লোহার পেরেক। সপ্তঋষি গর্ভবতীর অবস্থা দেখে অলৌকিক দৈব শক্তি প্রয়োগ করে জানতে চান মহিলার গর্ভে সন্তান সুস্থ আছে কিনা। সাম্বের এমন কাজে ভীষণ রেগে যান ঋষিরা। অভিশাপ দেন, ওই লোহার ধাতুই হবে যাদব বংশের বিনাশের মূল কারণ। সপ্তঋষির অভিশাপের কথা শুনে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করে কৃষ্ণ ও বলরাম। অভিশাপ কাটাতে সপ্তঋষি পরামর্শ দেন, ওই লোহার ধাতু গুঁড়ো করে নদীর জলে বিসর্জন দিতে। কিন্তু বিসর্জন দেওয়ার সময় একটি বড় লোহার অংশ দুর্ভাগ্যবশত থেকে যায়। সেই অংশটি ভক্ষণ করে একটি মৎস। নদীর জলে মৎস শিকার করতে গিয়ে ওই মৎস জালে ধরা পড়ে এক জেলের। তিনি সেই লোহার খণ্ড ঘসে শিকারের জন্য একটি তীর তৈরি করেন।

যাদব বংশ বিনাশ হয়ে যাওয়ার শোকে একটি গাছের তলায় বিশ্রাম করতে যান শ্রীকৃষ্ণ। ঠিক সেই সময় ওই জেলে কৃষ্ণের রক্তবর্ণ পা কে হরিণ মনে করে বিষাক্ত তীর নিক্ষেপ করেন। সেই তীরের মুখে লাগানো বিষের জ্বালায় মৃত্যু হয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের। ঘটনার ঘটার পরেও কৃষ্ণের দেহে প্রাণ ছিল। কিন্তু আদেশমতে, কৃষ্ণের দেহ দান করেন পাণ্ডবরা। আগুনে পুড়ে শরীর ভষ্ম হলেও হৃত্‍পিণ্ড জ্বলন্ত অবস্থায় জ্বলতে থাকে। সচল ছিল তখনও। সেইসময় আকাশ থেকে বার্তা আসে, এই হৃদপিন্ড হল ব্রহ্ম হৃদপিন্ড। আগুন দেহ পুড়লেও এই হৃদপিন্ড কখনও পুড়ে ভস্ম হবে না। গঙ্গা ভাসিয়ে দেওয়া হলে দ্বারকা জলের নীচে চলে গেলো ওই হৃদপিন্ড একটি নরম লোহার টুকরায় পরিণত হয়। একবার সমুদ্রে স্নান করার সময় রাজা ইন্দ্রদ্যুমের হাতে এসে যায় সেই লোহার টুকরোটি। স্বপ্নাদেশে শ্রীকৃষ্ণ আদেশ দেন, মন্দিরে কাঠের দেব-দেবীর বিগ্রহ তৈরি করে ওই নরম লোহার অংশটিকে ব্রহ্ম পদার্থ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। সেই থেকে পুরীর মন্দিরে জগন্নাথদেবের বিগ্রহের গর্ভগৃহে শ্রীকৃষ্ণের হৃদয় বা হৃদপিণ্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়।

ব্রহ্ম পদার্থই হলো শ্রীকৃষ্ণের আসল হৃদয়ঃ
এই ব্রহ্ম পদার্থ এখনও পর্যন্ত কেউ দর্শন করেনি, কেউ সরাসরি ছুঁয়েও দেখেনি। নবকলেবরে ব্রহ্ম পদার্থ প্রতিষ্ঠা করেন বিশেষ পুরোহিতরা। এই ব্রহ্ম পদার্থ প্রতিষ্ঠা করার সময় মন্দির চত্বরের সব বৈদ্যুতিক সংযোগ বেশ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয়। পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেই এই বিশেষ জিনিসটি বিগ্রহের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে এই ব্রহ্ম পদার্থ প্রতিস্থাপন করার সময় মন্দিরের ব্রাহ্মণরা চোখে কাপড় বেঁধে, হাতে গ্লাভস পরে থাকেন। বেশ কয়েকজন এই পদার্থ দুর্ভাগ্যবশত দেখেছেন, তাঁরা কেউই আর বাঁচতে পারেননি। ভুলেও যদি এই ব্রহ্ম পদার্থের উপর দৃষ্টি পড়ে, তাহলে তাঁর মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। শোনা যায়, যাঁরা ব্রহ্ম পদার্থ প্রতিস্থাপন করেছেন, তাঁরা জানিয়েছেন, সেই বস্তুর মধ্যে প্রাণ রয়েছে, আর সেই বস্তুটি একটি নরম নমনীয় বস্তু।

 

আরো আপডেট পেতে

Bangla Panjika 2023 Paji 1430 Download করুন

For Bangla Calendar, Bangla Panjika, Bengali Calendar, Horoscope download Bangla Panjika 2023 Paji 1430

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.