পুরাণের মান্যতা অনুসারে ধনতেরাস উৎসবটি বহু প্রাচীন একটি উৎসব । বিভিন্ন পুরাণ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা যা জানতে পারি তা হল , ধনতেরাসের দিন ভগবান ধন্বন্তরী আবির্ভূত হন ধরাধামে।
ধন্বন্তরী হলেন আয়ুর্বেদ চিকিৎসার দেবতা । এছাড়াও অনেকেই এই দিনে ধনের দেবতা কুবেরের ধরাধামে আবির্ভূত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে থাকে । ধন্বন্তরী দেবতা হাতে কলস নিয়ে আবির্ভূত হন ।
আর সেই কলসে থাকে ধন, সম্পদ অর্থ ও বিভিন্ন মূল্যবান রত্ন। এছাড়া অনেকের মতে এই কলসে থাকে অমৃত আর তা বিভিন্ন মূল্যবান ধন সম্পদের বিনিময়ে সংগ্রহ করতে হয় ভগবান কুবের এর কাছ থেকে। সেই জন্য এই দিন সোনারূপো বা অন্যান্য অলংকার এবং বাসনাদি কেনার কথা প্রচলিত আছে।
এছাড়াও আর একটি গল্প প্রচলিত আছে হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী একবার ঋষি দুর্বাসার অভিশাপে দেবরাজ ইন্দ্র লক্ষ্মীহীন হয়ে পড়েন। সেই সময় প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে দেবতারা ছুটে যান, তখন প্রজাপতি ব্রহ্মা তাদের মৈনাক পর্বত নিয়ে সমুদ্র মন্থন করতে উপদেশ দেন এবং এই কাজে অসুরদের সহায়তাও নিতে উপদেশ দান করেন।
সেই মতো সমুদ্র মন্থন করে দেবতারা এবং অসুররা সম্মিলিতভাবে ।আর এই সমুদ্র মন্থন করার সময় সমুদ্রগর্ভ থেকে মা লক্ষী ধন সম্পদ সহ আবির্ভূত হন। আর এইভাবেই দেবলোক পুনরায় মা লক্ষ্মীকে লাভ করেন। দেবতাদের মা লক্ষ্মী লাভের এই ঘটনাটি ঘটেছিল কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে ।
আর এই দিনটিকে উদযাপন করার জন্য ধরাধামে মা লক্ষীর পূজা অর্চনা করা হয়ে থাকে।আর মায়ের আশীর্বাদ যেন সবার বাড়িতে বর্ষিত হয় তাই বিভিন্ন মূল্যবান অলংকার ধাতু যেমন কেনা হয় তেমনি কেনা হয়ে থাকে বাসনাদি।
এছাড়াও আর একটি গল্প প্রচলিত আছে ধনতেরাস উপলক্ষে উপলক্ষে গল্প প্রচলিত আছে ধনতেরাস উপলক্ষে উপলক্ষে গল্পটি হলো এইরূপ, পুরাকালে এই দেশে হিমা বলে এক রাজা বসবাস করত ।
সেই রাজার ছিল এক সুন্দর রাজপুত্র। কিন্তু রাজপুত্রের উপর ছিল এক অভিশাপ। সেই অভিশাপে রাজপুত্রের বিয়ের চতুর্থ দিনেই রাজপুত্র মারা যাবেন বলে উল্লেখ করা হয়। আর এই কথা ভেবে রাজা রাজপুত্রের বিবাহ করাতে ইচ্ছুক ছিলেন না।
কিন্তু একবার রাজপুত্রের সাথে এক রাজকন্যার সাক্ষাৎ হয়, এবং দুইজনের মধ্যে প্রেম হয়। পরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু বিবাহের পর নববধূ তার শ্বশুর মশাইয়ের কাছে থেকে জানতে পারে তার স্বামীর উপর যে অভিশাপ আছে তার কথা।
তখন অত্যন্ত বুদ্ধিমানী রাজবধূ বিবাহের চতুর্থ দিনে প্রথমেই গণেশের পূজা অর্চনা শুরু করেন এবং পরবর্তী সময়ে মা লক্ষীর পূজা করেন। তখন এই দুই দেবতা এবং দেবী তার পুজায় খুশি হয়ে তার কাছে আবির্ভুত হন। তখন রাজবধূ তাদের কাছে তার ধন অর্থাৎ স্বামীর মঙ্গল কামনা করেন এবং তার স্বামীর অকাল মৃত্যু রোধ করতে অনুরোধ করেন।
তখন তারা বলেন তুমি যদি তোমার বুদ্ধির সাহায্যে ভগবান যমকে তোমার গৃহে প্রবেশ করতে না দাও তাহলেই রাজপুত্রের প্রাণ রক্ষা পাবে এবং তার দীর্ঘায়ু হবে। এছাড়াও মা লক্ষী তাকে জানিয়ে দেন ভগবান যম তার রাজপ্রাসাদ সর্পবেশে আসবেন।
এই বলে দেবী লক্ষী অদৃশ্য হয়ে যান। তখন বুদ্ধিমানী রাজবধূ রাজকোষ থেকে সকল মূল্যবান অলঙ্কার ধাতু যেমন সোনা, রুপা, হীরা সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন এবং তা রাজ প্রাসাদের যে কক্ষে রাজকুমার আছে তার চারপাশে ছড়িয়ে দেন তারপর চারপাশে প্রদীপ জ্বালিয়ে দেন।
যখন সর্পবেশী যমরাজ রাজকুমারের খোঁজে রাজপ্রাসাদে আসেন তখন তিনি প্রদীপের আলোয় এবং অলঙ্কারের চমকে এবং উজ্জ্বলতায় তার চোখ ধাঁধিয়ে যায়। ফলে দিকভ্রষ্ট হয়ে সর্পবেশী যমরাজ রাজপ্রাসাদের পথ হারিয়ে ফেলেন এবং সেইভাবে রাতভর রাজপ্রাসাদ খুঁজে পান না,ফলে একপ্রকার ব্যর্থ হয়ে যমলোকে ফিরে যান।
আর এই দিনটি ছিল কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশীর দিন।তাই এই দিনটিকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে হিন্দুদের মধ্যে উৎসব আকারে পালন করা হয়। যা বর্তমানে ধনতেরাস নামে পরিচিত। এই দিনটিতে প্রত্যেক ধর্মপ্রান হিন্দু পরিবার লক্ষী এবং গণেশ পূজার মাধ্যমে বাড়ির বাইরে প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং মূল্যবান অলঙ্কার ধাতু ক্রয়ের মাধ্যমে উদযাপন করে।
সোর্সঃ ইন্টারনেট হতে সংগৃহিত