“মা সন্তোষীর” পাঁচালী।

 

“মা সন্তোষী” পার্বতীপুত্র গণেশের কন্যা। সর্বসিদ্ধিদাতা গনেশ তনয়া শ্রী “শ্রী সন্তোষী” মাতা পরম দয়াময়ী ও কল্যানময়ী। শ্রী শ্রী সন্তোষী মাতা দেবী দুর্গার অন্য আরেকটি রুপ। “মা সন্তোষী” মায়ের পূজা করলে সুখ-শান্তি, ধন, যশ, খ্যাতি, অর্থ-বিত্ত ঐশ্বর্যশালী হওয়া যায়। সন্তোষী মা হিন্দুধর্মের একজন অশাস্ত্রীয়লৌকিক নবীন দেবী। সন্তোষী মাকে সন্তোষের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বলে অভিহিত করা হয়। বিশেষত উত্তর ভারত ও নেপাল-এর মহিলারা সন্তোষী মায়ের পূজা করে। বছরে ১৬টা শুক্রবার সন্তোষী মায়ের ব্রত নামক এক ব্রত পালন করলে দেবী অত্যন্ত প্রসন্ন হোন বলে বিশ্বাস করা হয়।

 

সন্তোষী মায়ের পূজা পদ্ধতিঃ
ভোরে স্নানের পর পবিত্র ও শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে পূর্ব বা উত্তর মুখে শুদ্ধাআসন গ্রহণ করে মুখে তিনবার জলের ছিটা দেবেন।
“নমঃ অপবিত্রঃ পবিত্রোবা সর্ব্বাবস্থ্যাং গতোহপিবা। যঃ স্মরেৎ
পুন্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ”বলে মস্তকে জলের ছিটা দিবেন।।

 

সন্তোষী মায়ের পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রঃ
নমঃ পুষ্পে পুষ্পে মহাপুস্পে সুপুষ্পে পুষ্পসম্ভবে। পুষ্প চয়াবকীর্নে চ হৃং ফট স্বাহা ।।

সন্তোষী মায়ের পাঁচালী কথাঃ
এক যে বণিক ছিল ভদ্রেশ্বর গ্রামে।
সপ্তপুত্র-পত্নী রাখি যায় স্বর্গধামে।।
বৃদ্ধের সঞ্চিত ধন যাহা ছিল ঘরে।
সেই ধন ল’য়ে মাতা পালিত সবারে।।
যাহা ছিল ধন অর্থ শেষ হৈলে পরে।
বয়ঃপ্রাপ্ত সাত ভাই কর্ম্ম-চেষ্টা করে ।।
ছয় ভাই কর্ম্ম করে হরষিত মন।
জ্যেষ্ঠ-আদি ষষ্ঠ ভ্রাতা করে উপার্জন ।।
যাহা অর্থ পায় স্বে মায়ে দেয় আনি।
আশীর্ব্বাদ করে মাতা শিরে দিয়ে পাণি।
ছোট পুত্র রাম তার বেকার জীবন।
না পারে করিতে কিছু অর্থ উপার্জন ।।
বেকার জীবনে কেহ না পায় আদর।
তাই অতি দুঃখে রয় তাহার অন্তর ।।
কিছুদিন হৈলে গত মাতা স্থির করে।
সকলের বিয়ে দিয়ে বধূ আনি ঘরে ।।
জ্যেষ্ঠ-আদি সকলের বিবাহ যে দিল।
সাবিত্রী নামেতে ছোট বধূরে আনিল।।
বিবিধ সুখাদ্য মাতা করিয়া রন্ধন।
ছয় পুত্রে আগে দেন করিতে ভোজন ।।
তাদের উচ্ছিস্ট যাহা থাকে পাত্রে পড়ে।
রামুকে খাওয়ান তাহা ডেকে রানী পরে।।
তার পরে ছয় বধূ করিলে ভোজন।
তাদের উচ্ছিস্ট খেতে সাবিত্রীকে ক’ন।।
একদা সাবিত্রী তার স্বামীর গোচরে।
এই কথা জানাইল ব্যথিত অন্তরে ।।
শুনিয়া সকল কথা রামু করে ঠিক।
সত্য মিথ্যা পরীক্ষা করিব দিক ।।
একদিন পরীক্ষাতে জানিতে পারিল।
সব কথা সত্য যাহা সাবিত্রী বলিল ।।
ভুহীতে পারিল রামু অর্থ নাই যার।
এ সংসারে জনম বিফল হয় তার ।।
একথা ভাবিয়া তবে পত্নী-কাছে এসে।
বলিল অর্থের লাগি যাইব বিদেশে ।।
সাবিত্রীর চোখে জল শুনিয়া এ একথা।
বিদায় লইল রামু প্রণমিয়া মাতা ।।
নানা দেশ ঘুরে শেষে এক দেশে এল।
ধনী সদাগর সাথে দেখা যে হইল ।।
বিনয়ী ও বুদ্ধিমান দেখিয়া রামুকে।
ব্যবসাদি সদাগর শিখাইল তাকে ।।
প্ৰথমতে কর্ম্মচারী হইয়া থাকিল।
রামুর বুদ্ধিতে ব্যবসা চতুর্গুণ হৈল।।
সাধু টরে ব্যবসার অর্দ্ধভাগ দিল।
ক্রমশ উন্নতি তার হইতে লাগিল ।।
প্রতি মাসে শত টাকা সাবিত্রী নামেতে।
পাঠাতে লাগিল রামু নিজের দেশেতে।

২.
সন্তোষী মায়ের কৃপা যার প্রতি হয়।
অশান্তি অশুভ কভু তার নাহি রয়।।
পতি কামনায় সতী ব্রত কর থাকে।
স্বপ্নেতে সন্তোষী মাতা বলিল রামুকে।।
সতী সাধ্বী পত্নী তব করে মোর ব্রত।
তোমার পাবার তরে কাঁদিছে সতত।।
যাহ বাছা শীঘ্রগতি তাহার সদন।
দুঃখ তার দূর কর দিয়া দর্শন।।
আমি যে সন্তোষী মাতা দুঃখ করি দূর।
আমারে যে ভিজে সুখ পায় সে প্রচুর ।।
কল্য প্রাতে শয্যা ত্যাগ করিবে যখন।
ভক্তিচিত্তে মোরে তুমি করিবে স্মরণ ।।
মাসেকের লাভ যাহা চতুর্গুণ তার।
মোর বরে একদিনে হইবে তোমার।।
সেই অর্থ লয়ে তুমি দেশে চলে যাবে।
ধনে-পুত্রে লক্ষীলাভ তথায় হইবে ।।
এত বলি স্বপ্নে দেবী হন অন্তর্দ্ধান।
নিদ্রাভঙ্গে রামু মায়ে করিল প্রণাম ।।
সেইদিন লাভ তার চতুর্গুণ হৈল।
মা সন্তোষীর আদেশেতে গৃহেতে আসিল।
গৃহেতে আসিয়া দেখে পত্নীরে তাহার।
মায়ে জায়ে মিলে তারে করে অত্যাচার ।।
অর্দ্ধাহারে থাকি সেই কাষ্ঠ আনে বনে।
এ কথা জানিয়ে রামু দুঃখ পেল মনে ।।
ক্ষুদ্র এক গৃহ লয়ে ব্যবসা করিয়া।
সুখেতে রহিল রামু পত্নীর লইয়া ।।
রামু ও সাবিত্রী ভজে সন্তোষী মাতারে।
মায়ের কৃপায় ধন দিনে দিনে বাড়ে ।।
ব্যবসা করি তার উন্নতি হইল।
বর্ষশেষে তার এক সুপুত্র জন্মিল ।।
ধনে-পুত্রে লক্ষীলাভ দেখিয়া উন্নতি।
ছয় জায়ে হিংসা কে তাহাদের প্রতি ।।
রামুর করিতে ক্ষতি নিজে সব ঠকে।
একে একে হিংসুকেরা পড়িল বিপাকে ।।
মা সন্তোষী রাখে যারে ক্ষতি কেবা করে।
আপন দুঃখেতে তারা জ্বলে পুড়ে মরে ।।
তাই বলি ভক্ত সবে স্থির করি চিত্ত।
প্রতি শুক্রবার কর মা সন্তোষীর ব্রত ।।
সন্তোষী মায়ের ব্রত যেইজন করে।
ধন পুত্র যশ তার দিনে দিনে বাড়ে।।
টক দ্রব্য শুক্রবারে অবশ্য না খাবে।
সন্তোষী মাতার কৃপা নিশ্চয় পাইবে ।।
সিদ্ধিদাতা গনেশের করিয়া স্মরণ।
সন্তোষী মায়ের কথা হৈল সমাপন ।।
উলুধ্বনি কর স্বে যত নারীগণ।
পূজাশেষে ছোলা গুড় কর বিতরণ ।।
গোলকপতি আচার্য্য করিছে প্রার্থনা।
যেন মা সন্তোষী নাম ভজে এ রসনা ।।
দুঃখ বিনাশিনী দুঃখ দূর কর মাতা।
তোমার চরণে আমি নত কটি মাথা ।।

 

আরো আপডেট পেতে

Bangla Panjika 2023 Paji 1430 Download করুন

For Bangla Calendar, Bangla Panjika, Bengali Calendar, Horoscope download Bangla Panjika 2023 Paji 1430

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.