বিশ্বকর্মা পূজা ২০২৩ সময় ও নির্ঘন্টঃ
বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে,
বাংলাদেশ সময়ঃ
(৩১ ভাদ্র, বাংলাদেশ ৩ আশ্বিন, ইং ১৮ সেপ্টেম্বর, হিঃ ২ রবিঃ আউঃ।
ষড়শীতি সংক্রান্তিঃ- দিবা ঘ ১২ টা ১ মিনিট ৬ সেকেন্ড মধ্যে সংক্রান্তিকৃত্যং স্নানদানাদি ও অনধ্যায়ঃ। সায়ং সন্ধ্যা কার্য্যা প্রদোষে (সন্ধ্যা ঘ ৬ টা ৫ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড গতে রাত্রি ঘ ৭ টা ৪১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড মধ্যে) শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণব্রতম্। শ্রীশ্রী বিশ্বকর্মা পূজা ও অরন্ধন। পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত শ্রীশ্রী মনসাদেবী পূজা সমাপন ও মনসাদেবীর ভাসান।)
ভারত সময়ঃ
(পশ্চিমবঙ্গ) ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ (বং- ৩১ ভাদ্র ১৪৩০) সোমবার।
(অমৃত যোগঃ সূর্যোদয় থেকে সকাল ৭ টা ৩ মিনিটের মধ্যে, সকাল ১০ টা ১৯ মিনিট থেকে ১১ঃ৪৭ মিনিটের মধ্যে, সন্ধ্যা ৬ টা ২৯ মিনিট থেকে রাত ৮ টা ৫০ মিনিটের মধ্যে, রাত ১১ টা ১০ মিনিট থেকে ২ টো ১৭ মিনিটের মধ্যে অমৃত যোগ রয়েছে।
মাহেন্দ্রযোগঃ দুপুর ৩:১৪ মিনিট থেকে বিকেল ৪ টে ৫৩ মিনিটের মধ্যে মাহেন্দ্রযোগ আছে।)
শ্রীশ্রী বিশ্বকর্মার পরিচিতিঃ
আক্ষরিক অর্থেঃ “সর্বস্রষ্টা” বিশ্বকর্মা হলেন একজন হিন্দু দেবতা। ঋগ্বেদ অনুযায়ী, তিনি পরম সত্যের প্রতিরূপ এবং সৃষ্টিশক্তির দেবতা। উক্ত গ্রন্থে তাকে সময়ের সূত্রপাতের প্রাক্-অবস্থা থেকে অস্তিত্বমান স্থপতি তথা ব্রহ্মাণ্ডের দিব্য স্রষ্টা বলে উল্লেখিত রয়েছে।
হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, বলা যেতে পারে যে, বিশ্বকর্মা হলেন দেবতাদের প্রধান শিল্পী। তিনি দেব শিল্পী নামেও পরিচিত। বৃহস্পতির ভগিনী যোগ সিদ্ধা তার মাতা এবং অষ্টম বসু প্রভাস হলেন তার পিতা। বিশ্বকর্মার বাহন হল কালো হাতি। বিশ্বকর্মা হলেন শিল্পকলার দেবতা। সকল দেবতার প্রাসাদ বা অট্টালিকা নির্মাণ করা থেকে শুরু করে সকল প্রকার অলংকারের ও নির্মাতা ছিলেন তিনিই। ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী জানা যায় যে, তার চারটি বাহু অর্থাৎ চারটি হাত রয়েছে, মাথায় রাজার মুকুট, হাতে জলের কলসি, বই, দড়ির ফাঁস ও অপর হাতে একটি যন্ত্র।
রামায়ণের কাহিনী অনুসারে
রামায়ণে একাধিক কর্মে বিশ্বকর্মার উল্লেখ পাওয়া যায়। আদিকাণ্ডে উল্লিখিত রয়েছে, বিশ্বকর্মা দুটি ধনুক নির্মাণ করেছিলেন। তিনি তার মধ্যে একটি ত্রিপুরাসুর বধের জন্য শিবকে এবং অপরটি বিষ্ণুকে প্রদান করেন। বিষ্ণু তার ধনুকটি প্রদান করেন পরশুরামকে। রাম শিবের ধনুকটি ভঙ্গ করে সীতাকে বিবাহ করেন এবং অপর ধনুটিতে জ্যা আরোপ করে পরশুরামের দর্প চূর্ণ করেন। বিশ্বকর্মার পুত্র বিশ্বরূপকে ইন্দ্র বধ করেছিলেন।রামায়ণ, কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড।
রামায়ণে উল্লিখিত বিশ্বকর্মার স্থাপত্যকীর্তিগুলি হলোঃ
কুঞ্জর পর্বতের ঋষি অগস্ত্যের ভবন,রামায়ণ, কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড। কৈলাস পর্বতে অবস্থিত কুবেরের অলকাপুরী, রামায়ণ কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড। রাবণের লঙ্কা নগরী রামায়ণ, কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড। এছাড়া বিশ্বকর্মা ব্রহ্মার জন্য নানা অলংকারে সজ্জিত পুষ্পক বিমান/রথ নির্মাণ করেছিলেন। এই বিমান/রথ ব্রহ্মা কুবেরকে দান করেন এবং লঙ্কেশ্বর দশানন রাবণ কুবেরের থেকে সেটি দখল করেন।
বিশ্বকর্মা মাহাত্ম্যঃ বিশ্বকর্মা বৈদিক দেবতা, ঋগবেদের ১০ম মণ্ডলে ৮১ এবং ৮২ সূক্তদ্বয়ে বিশ্বকর্মার উল্লেখ আছে। (৬) ঋগবেদ অনুসারে তিনি সর্বদর্শী এবং সর্বজ্ঞ। তার চক্ষু, মুখমণ্ডল, বাহু ও পদ সবদিকে পরিব্যাপ্ত। তিনি বাচস্পতি, মনোজব, বদান্য, কল্যাণকর্মা ও বিধাতা অভিধায় ভূষিত। তিনি ধাতা, বিশ্বদ্রষ্টা ও প্রজাপতি।
বিশ্বকর্মার কীর্তি ও স্থাপত্যঃ
বিশ্বকর্মা লঙ্কা নগরীর নির্মাতা। তিনি বিশ্বভুবন নির্মাণ করেন। বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিব এর ত্রিশূল, কুবের এর অস্ত্র, ইন্দ্রের বজ্র, কার্তিকেয়র শক্তি প্রভৃতি তিনি তৈরি করেছেন। শ্রীক্ষেত্রর প্রসিদ্ধ জগন্নাথ মূর্তিও তিনি নির্মাণ করেছেন।
বিশ্বকর্মা পূজা ২০২৩
ভাদ্রমাসের সংক্রান্তির দিন বিশ্বকর্মার পূজা করা হয়। সূতার-মিস্ত্রিদের মধ্যে এঁর পূজার প্রচলন সবচেয়ে বেশি। তবে বাংলাদেশে স্বর্ণকার,কর্মকার এবং দারুশিল্প, স্থাপত্যশিল্প, মৃৎশিল্প প্রভৃতি শিল্পকর্মে নিযুক্ত ব্যক্তিগণও নিজ নিজ কাজে দক্ষতা অর্জনের জন্য বিশ্বকর্মার পূজা করে থাকেন।
বিশ্বকর্মা পূজা হয় ভাদ্র সংক্রান্তিতে অর্থাৎ ভাদ্র মাসের শেষ দিনে। আর এই দিনেই হয় রান্নাপূজা বা অরন্ধন যা কিনা মনসাপূজার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পর্কিত। ভাদ্রের আগে বাংলায় শ্রাবণ মাস চলে এই মাস শিবের মাস, এই মাস মনসার মাস। পুরো শ্রাবণ মাস জুড়ে বর্ষা-প্লাবিত বাংলায় প্রাচীন কাল থেকেই সাপের প্রকোপ দেখা দেয় আর সেই সাপের দংশন থেকে রক্ষা পেতে সহায় হন দেবী মনসা। তাই বর্ষার শেষে ভাদ্র সংক্রান্তিতে তাঁরই উদ্দেশে করা হয় মনসা পূজা। তাহলে দেখা গেল, ভাদ্র সংক্রান্তির এই একটি মাত্র দিনেই একইসাথে অরন্ধন, মনসাপূজা এবং বিশ্বকর্মা পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
বিশ্বকর্মার হাতে দাঁড়িপাল্লা থাকে। দাঁড়িপাল্লার দুটি পাল্লা জ্ঞান ও কাজের প্রতীক হিসাবে ধরা হয়। উভয়ের সমতা বজায় রেখেছেন তিনি। এছাড়া তিনি হাতুরী ধারণ করেন, যা শিল্পের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি যে শিল্পের দেবতা এই হাতুরী প্রমাণ স্বরূপ তারই প্রতীক।
বিশ্বকর্মা পূজার তাৎপর্যঃ
বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, আসাম, কর্ণাটক, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং ত্রিপুরা প্রভৃতি রাজ্যে প্রতি বছর গ্রেগরিয়ান তারিখে অর্থাৎ *১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পূজা বা জয়ন্তী উদযাপিত হয়। এই পূজা প্রায়ই শিল্প কারখানায় একটি বড় উৎসব হিসেবে উৎযাপিত হয়। ভগবান বিশ্বকর্মাকে বিশ্বের স্রষ্টা এবং দেবতাদের স্থপতি হিসাবে পরিচিতি রয়েছে এবং তাঁর জন্মদিনে পূজার আয়োজন ও করা হয়। এই দিনটি বাংলা পঞ্জিকায় ‘কন্যা সংক্রান্তি’-তে পড়ে।
বিশ্বকর্মাকে পূজা করা হয় কারণ প্রাচীন পুস্তক অনুসারে, তাঁকে প্রথম স্থপতি হিসাবে আমরা জেনে থাকি। এমনটা মনে করা হয় যে, প্রতি বছর ঘরে রাখা লোহা ও মেশিনের পূজা করলে দ্রুত নষ্ট হয় না, সেই সাথে ব্যবসার সমৃদ্ধি ঘটে। মেশিনগুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলে কারণ ভগবান মেশিনগুলোর প্রতি তার আশীর্বাদ দান করেন। এই পূজা করলে ব্যবসায় অগ্রগতি হয়। এটি ভারতের বিভিন্ন স্থানে খুব বড় আয়োজনের সাথে উদযাপিত হয়।
বিশ্বকর্মা পূজা কারখানায় করার কারনসমূহঃ
বিশ্বকর্মা পূজা সাধারণত শিল্প কারখানায় উদযাপিত হয়, বিশ্বকর্মা পূজা মন্দিরে হয় না, শিল্প কারখানার মেঝে পূজার করার জন্য উত্তম। উৎসবটি কেবল প্রকৌশলী এবং স্থাপত্য সম্প্রদায়ের দ্বারাই নয়, কারিগর, যান্ত্রিক, স্মিথ, ওয়েল্ডারদের দ্বারাও পূজার দিন হিসেবে উদযাপিত হয়। এই দিনে সবাই তাদের উজ্জ্বল ও সুন্দর ভবিষ্যৎ, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং সবার উপরে নিজ নিজ কর্মস্থলে অসীম সফলতার জন্য প্রার্থনা করে। শ্রমিকরা বিভিন্ন মেশিন এবং শিল্প সরঞ্জামের মসৃণ পরিচালনার জন্য প্রার্থনা করেন, ভগবান বিশ্বকর্মার সাথে, মেশিনগুলিও এই দিনে পূজা করা হয়। বিশ্বকর্মা হলো একজন হিন্দু দেবতা, যিনি একজন ঐশ্বরিক স্থপতি, যিনি স্বয়ম্ভু এবং পুরো বিশ্বের স্রষ্টা হিসেবে পরিচিত। বেদ বর্ণনা করে, যে তিনি দ্বারকা পবিত্র নগরী তৈরি করেছিলেন যেখানে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের নির্দেশ পাণ্ডবদের মায়া সমাবেশ থেকে দেবতাদের জন্য অনেক সেরা অস্ত্র তৈরি করেছিলেন বিশ্বকর্মা। দেবতাদের দ্বারা তাকে ঐশ্বরিক ছুতারও বলা হয়।
বিশ্বকর্মার বিশেষ মূর্তি এবং ছবি সাধারণত প্রতিটি কর্মস্থলে এবং শিল্প কারখানায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। সকল শ্রমিকরা একটি বিশেষ স্থানে একত্র হয়ে এবং বিশ্বকর্মার পূজা করেন। বিশ্বকর্মা পূজার তৃতীয় দিনে, আনন্দের সাথে ভগবান বিশ্বকর্মার বিগ্রহ বিসর্জন দেওয়া হয়।
বিশ্বকর্মা পূজায় কী কী করার বিধি ও নিষেধ রয়েছেঃ
১. পূজায় হাতিয়ারের ব্যবহারঃ বিশ্বকর্মাকে বিগ্রহ বা ছবি রেখে পূজা করলে, পূজার সময় আপনার হাতিয়ার রাখতে ভুলবেন না, মনে রাখবেন শুধু হাতিয়ারের পূজা করলেই বিশ্বকর্মা খুশি হোন। বিশ্বকর্মা পূজার দিনে আপনার গৃহ, কারখানা বা দোকান থেকে কোনও পুরোনো হাতিয়ার ফেলে দেবেন না, এতে বিশ্বকর্মার ক্রুদ্ধ ও অপমানিত হোন।
২. শিল্প কারখানায় পূজার আয়োজনঃ শুধুমাত্র কারখানা, কারখানার মতো শিল্প এলাকায় পূজার আয়োজন করতে হবে।
৩. মেশিন সংযুক্ত কোনো কাজ করবেন নাঃ যাদের শিল্প কারখানা বা মেশিন সংক্রান্ত কোনো কাজ আছে, তারা বিশ্বকর্মা পূজার দিন তাদের মেশিন ব্যবহার করবেন না।
৪. যানবাহন পরিষ্কার করাঃ আপনার যদি কোনও গাড়ি থাকে তবে বিশ্বকর্মা পূজার দিন এটি পরিষ্কার করতে এবং পূজা করতে ভুলবেন না।
৫.মাংস ও মদ খাওয়া নিষিদ্ধঃ বিশ্বকর্মা পূজার দিন ভুলেও মাংস ও মদ খাওয়া যাবে না।
৬. দানঃ আপনার ব্যবসার সমৃদ্ধির জন্য, আপনাকে বিশ্বকর্মা পূজার দিনে গরিব মানুষ এবং ব্রাহ্মণদের দান করলে শুভ ফল লাভ হবে।
আরো আপডেট পেতে
Bangla Panjika 2023 Paji 1430 Download করুন
For Bangla Calendar, Bangla Panjika, Bengali Calendar, Horoscope download Bangla Panjika 2023 Paji 1430