আপনি জানেন কি কেন রথের দড়িতে টান পড়ার আগে গজপতি রাজা সোনার ঝাড়ু দিয়ে ঝাঁট দেন? জনপ্রিয় রীতির মাহাত্ম্য জানুন!
হিন্দুদের পঞ্জিকা অনুসারে, প্রতি বছর, আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয় তৃতীয়া তিথিতে জগন্নাথের রথযাত্রা মহোউত্সব পালিত হয়। এ বছরের জুন মাসের ২০ তারিখ পালিত হবে জগন্নাথদেবের বিখ্যাত রথযাত্রা উত্সব।
সাধারণত রথযাত্রা হিন্দুদের একটি বড় ধর্মীয় মহোৎসব। এই দিনে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ধনী, গরিব, মধ্যবিত্ত, শিশু থেকে কিশোর, যুবক থেকে যুবতী, বৃদ্ধ থেকে বৃদ্ধা সকলে একসাথে মিলিত হয়ে অতি আনন্দের সাথে, প্রভু জগন্নাথ, প্রভু বলরাম, মাতা সুভদ্রা রানীর রথ টানতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। রথ চলাকালীন রথের থেকে সকল কৃষ্ণ ভক্তদের প্রসাদ বিতরণ করা হয়। যেহেতু বর্ষাকাল এই দিনে খুব বৃষ্টি হয়।
এদিনে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মাসির বাড়ির দিকে রওনা হোন প্রভু জগন্নাথদেব। সাথে থাকেন তাঁর দুই ভাই-বোন। বলরাম ও সুভদ্রা। এদিন পুরীর মন্দিরের এই জনপ্রিয় ও বিখ্যাত উত্সবকে ঘিরে প্রচুর মানুষের ভিড় হয়।
শুধু রাস্তাঘাটে নয়, পুরীর মন্দির ও গুন্ডিচা মন্দিরেও ভক্তরা আগমন করেন। লোকমতে, রথযাত্রায় সবকিছুই শুভ। একবার ভগবানের দর্শন পেলে মনে কোনও পাপ থাকে না। জন্ম-জন্মান্তরের পাপ ধুয়ে মুছে যায়। রথের দড়িতে টান দিতে পারলে পুরো জীবন সার্থক হয়। পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায় খুব সহজেই।
গ্রেগরিয়ান পত্রিকা অনুসারে, এ বছর ২০ জুন বিখ্যাত রথযাত্রা মহোউত্সব পালিত হবে। শেষ হবে আষাঢ় মাসের একাদশীতে। এই উত্সবকে ঘিরে যেমন উদ্দীপনা বা উত্তেজনা রয়েছে, ঠিক তেমনি এই মহোউত্সবের প্রস্তুুতি শুরু হয়ে যায় কয়েক মাস আগে থেকেই।
স্কন্দপুরাণে জগন্নাথের রথযাত্রা উল্লেখ রয়েছে। পুরুষোত্তম ক্ষেত্র মাহাত্ম্যে মহর্ষি জৈমিনি রথের আকার, সাজসজ্জা, পরিমাপ প্রভৃতি নিয়ে চর্চা রয়েছে। এখানে পুরুষোত্তম ক্ষেত্র মানে শ্রীক্ষেত্রের কথাই বলা হয়েছে। আর শ্রীক্ষেত্র বলতে পুরীকেই বোঝানো হয়ে থাকে।
পুরীর মন্দিরের নিয়ম-কানুন অনুযায়ী, প্রতিবছর রথযাত্রার উদ্বোধন করেন পুরীর রাজা। জনশ্রুতি অনুসারে, ভগবান জগন্নাথদেবকে তাঁর বোন সুভদ্রা একবার বলেছিলেন, তিনি গোটা শহর ঘুরে দেখতে চান। সেইসময় ভগবান জগন্নাথ ও বলরাম দুই ভাই তাদের বোনের ইচ্ছে পূরণ করতে চেয়েছিলেন।
তাই খুব সুন্দর করে আয়োজন করে শহর সফরে বেরিয়ে পড়েন তিন ভাইবোন। এই প্রথা আজও নিরবচ্ছিন্ন। সকল ভক্তরা মিলে তিন ভাইবোনের জন্য একটি বিশাল রথযাত্রার আয়োজন করে। রাস্তায় যাতে কোনও রকম সমস্যা না হয়, তার জন্য রথে করে ভ্রমণে বের হন তাঁরা।
রীতি অনুসারে, রথযাত্রার শুরু হওয়ার আগে সোনার ঝাড়ু দিয়ে ভালোভাবে রাস্তা পরিষ্কার করা হয়। তারপর এদিনে অসংখ্য আচার, রীতি-নীতি পালন করা হয়। বিশাল আকারের রথ তৈরি করার পর পুরীর গজপতি রাজা পালকি করে পুজো ও রথ উদ্বোধন করতে আসেন।
এই পুজোর প্রথাকে ছা়ড়ে পেহনরা বলা হয়। রাজার আমল অনেক আগেই চলে গিয়েছে। কিন্তু রাজার বংশধররা এখনও রাজ্যে বিদ্যমান রয়েছেন। রাজত্ব না থাকলেও পুরীর রাজপরিবার আজও রথযাত্রার সাথে যুক্ত।
রাজপরিবারের রীতি অনুসারে, যিনি রাজার উপাধি পান তিনিই একমাত্র রথের আচার, রীতি-নীতি পালন করতে পারেন। তিনিই জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা, এই তিন রথের সামনে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে, সোনার ঝাড়ু ও সুগন্ধী-চন্দনের জল ছিটিয়ে দিয়ে রথের সামনে ঝাঁট দিয়ে থাকেন।
তারপরেই রথের দড়িতে টান পড়ে। শুরু হয় অতি প্রতীক্ষিত জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। মাসির বাড়ির দিকে রওনা দেয় পর পর তিন তিনটি রথ। এই ঐতিহ্য খুবই জনপ্রিয়। কারণ, ভগবান জগন্নাথদেবের সামনে সবাই সমান। সবাই বলুন জয় জগন্নাথ।