দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের রহস্য ও ইতিহাস। চলুন জেনে নেই! পর্বঃ ২

 

দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণের জীবন দর্শনঃ
উত্তর-পূর্ব দিকে রয়েছে রুপোর সিংহাসনের সাড়ে ২১ ইঞ্চির কৃষ্ণ ও ১৬ ইঞ্চির রাধার মূর্তি নিয়ে গড়ে উঠেছে রাধাকান্ত মন্দির। উত্তর-পশ্চিম কোণে রয়েছে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের বাসগৃহ। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সাথে অবশ্যম্ভাবী ভাবে যাঁর নাম জড়িয়ে রয়েছে তিনি রামকৃষ্ণ পরমহংস। ১৮৫৫ সালে দাদা রামকুমারের সহকারী রূপে এখানে আসেন। পরে রামকুমারের মৃত্যুর সময় তিনি দাদার পরিবর্তে প্রতিস্থাপন হোন।

১৮৮৬ পর্যন্ত প্রায় তিন দশক শ্রীরামকৃষ্ণ এই মন্দিরে ছিলেন। খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তাঁর নাম। বহু দূর থেকে মানুষ ছুটে আসতে থাকেন মন্দিরে। মা ভবতারিণী এর মহিমা প্রচারিত হয় শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের মাধ্যমে। দক্ষিণেশ্বরে গেলে সত্যিই জগদম্বার চোখ দুটো যেন জ্বলজ্বল করছে। এত জীবন্ত লাগে মনে হয় যেন ঈশ্বর আপনার সাথেই রয়েছেন দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে।

 

মা ভবতারিণী এবং শ্রীরামকৃষ্ণঃ
এই মন্দিরে শ্রীরামকৃষ্ণের পূজা পদ্ধতি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি স্বয়ং হেঁটে চলে সাধারণ মেয়ের মত অনুভব করেছিলেন দেবীর অস্তিত্বকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কালী পুজোতে অত্যন্ত আবশ্যক বলে যে নিয়ম-কানুন মানা হয় দক্ষিণেশ্বর অনেক ক্ষেত্রেই সেটি ব্যতিক্রমী। মা ভবতারিণী এবং শ্রীরামকৃষ্ণ এই দুই নাম যেন রানী রাসমনির গঠিত দক্ষিণেশ্বরের অন্যতম ভিত্তি।

 

দক্ষিণেশ্বরে গিয়ে কিভাবে নির্বিঘ্নে পূজা দিবেন?
কলকাতা থেকে মেট্রো করে কিংবা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রেনে করে বালি তারপর সেখান থেকে দক্ষিণেশ্বর যাওয়া খুবই সহজ। এখানে পূজা দিতে গেলে কোন পান্ডা বা ব্যক্তিগতভাবে পুরোহিত নিয়ে যেতে হবে না আপনাকে। এমনকি বাড়ি থেকে মিষ্টি নিয়ে গিয়েও পূজা দিতে পারেন আপনি। গঙ্গার ধারে শান্ত পরিবেশে মন ভালো হতে বাধ্য।

শিয়ালদহ থেকে দক্ষিণেশ্বর মন্দির যেতে হলে ডানকুনি গামী ট্রেনে উঠে পড়ুন, ২০ মিনিট সময় লাগবে দক্ষিণেশ্বর স্টেশন পৌঁছাতে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির। হাওড়া থেকে ট্রেনে করে বালি নেমে সিঁড়ি বেয়ে উপরের রাস্তায় উঠে আসুন, সেখান থেকে অটোতে দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির।

এছাড়া বেলুড় থেকে গঙ্গা পার হয়েও দক্ষিণেশ্বর যাওয়া যায়। বর্তমানে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড এর উদ্বোধন করে দক্ষিণেশ্বরকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ভারতবর্ষে যে কয়’টি কালী সাধনা স্থান আছে, ‘দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির ‘তাদের মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত। ১০০ ফুটেরও বেশি উঁচু এই নবরত্ন মন্দিরের গর্ভগৃহে সহস্র পাপড়ির রৌপ্য-পদ্মের উপর শায়িত শিবের বুকে দেবী কালী দাঁড়িয়ে। একটি পাথর থেকেই তৈরি হয়েছে এই দেবীমূর্তি। তবে মন্দির উদ্বোধন নিয়ে বেশ কিছু জটিল সমস্যা দেখা দিয়েছিল। শোনা যায়, দক্ষিণেশ্বর মন্দির-উদ্বোধনের নিমন্ত্রণের চিঠি পেয়ে রামকৃষ্ণের দাদা রানির প্রতিনিধিদের বলেন, রানি কৈবর্ত জাতি। তাঁর নিমন্ত্রণ ও দান গ্রহণ করলে তাঁকে ‘একঘরে’ হতে হবে। রানির বিশ্বস্ত ও সুদক্ষ কর্মীরা তাঁকে বোঝান রানি কিন্তু কৈবর্ত নন, মাহিষ্য সম্প্রদায়ের। শেষ পর্যন্ত রামকুমার রাজি হন এবং তাঁর ভাইকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা দিবসের এক দিন আগে দক্ষিণেশ্বরে উপস্থিত হোন।

সারা দেশ থেকে ১ লক্ষেরও বেশী ব্রাহ্মণ নিমন্ত্রিত ছিল। দাদা দক্ষিণেশ্বরের প্রসাদ গ্রহণ করলেও গদাধর বাজার থেকে এক পয়সার মুড়ি-মুড়কি কিনে খেয়ে, ঝামাপুকুরে ফিরে আসেন। পরে দাদার আদেশে পঞ্চবটীতলে নিজের হাতে রান্না করে খেতেন। শ্রীরামকৃষ্ণ দুপুরে পঞ্চবটীতে রান্না করলেও রাত্রে প্রসাদী লুচি খেতেন এবং জগদম্বাকে বলতেন, “মা, আমাকে কৈবতের্র অন্ন খাওয়ালি।”
সেইসময় গরিব কাঙালরাও দক্ষিণেশ্বরে খেতে আগ্রহী ছিল না এবং খাওয়ার লোক না পাওয়ায় প্রসাদী অন্ন গরুকে খেতে দেওয়া হতো বা গঙ্গায় ফেলে দেওয়া হতো। চাকরিতে ঠাকুরের আগ্রহ কখনোই ছিল না। কিন্তু রানির জামাই মথুরবাবু একপ্রকার জোর করেই তাঁকে বিষ্ণুঘরের পূজার দায়িত্ব দিলেন এবং ভাগ্নে হৃদয়কে দুই ভাইয়ের সহযোগী সহায়তাকারী হিসেবে নিযুক্ত করলেন।

কিছুসময় পর ঠাকুরের পূজা দেখে মথুরবাবু শাশুড়ি রাসমণীকে বললেন, অদ্ভুত পূজক পাওয়া গিয়েছে, দেবী বোধহয় দ্রুত জাগ্রত হয়ে উঠবেন। কথামৃত রচয়িতা মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত তাঁর ফুটনোটে বলেছেন ১৮৫৮ সালে রানি রাসমণির বরাদ্দের তালিকা অনুযায়ী ঠাকুর ওরফে রামকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় মাইনে পাচ্ছেন মাসিক পাঁচ টাকা। পরে তা হয় সাত টাকা হয়। তাঁর ভাগ্নে ‘পরিচালক’ হৃদয় মুখার্জির বেতন সাড়ে তিন টাকা। এঁর বাড়তি দায়িত্ব ছিল ফুল তোলার। এ ছাড়া বরাদ্দ তিন জোড়া কাপড়, যার মূল্য সাড়ে চার টাকা। সেই সাথে প্রতিদিনের খাদ্য হিসেবে সিদ্ধ চাল, ডাল, তামাক, কাঠ। দক্ষিণেশ্বরের মন্দির সত্যিই অপূর্ব আকর্ষণীয় দৃশ্যমান তীর্থক্ষেত্র। তাই পূণ্য ক্ষেত্রে একবার ঘুরে আসুন।

 

আরো আপডেট পেতে

Bangla Panjika 2023 Paji 1430 Download করুন

For Bangla Calendar, Bangla Panjika, Bengali Calendar, Horoscope download Bangla Panjika 2023 Paji 1430

 

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.